বিজেপির নেতৃত্বরা ধরেই নিয়েছিল, মোদী-শাহর ওপর ভর করেই অাগামী রাজ্যর বিধানসভার ভোটগুলোয় একইভাবে ক্ষমতা ধরে রাখবে। কিন্তু তা আর হচ্ছে কই! তবে তা বারবার জানান দিচ্ছিল ভোটের অাগে বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলোয়।
২০১৮ সালে হয়ে যাওয়া মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়কে কার্যত পাত্তাই দেয়নি বিজেপির নেতৃত্ব। তবে তা ছিল লোকসভা নির্বাচনের অাগে। তাই দলটির নেতারা বিধান সভার ভোটের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন কম।
কিন্তু ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে সাধারণের চিন্তার বাইরে বিপুল জয়ের পর মাত্র পাঁচমাসের ব্যবধানেই হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডে হেরেছে বিজেপি।
বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলো আগেই জানিয়েছিল, বিজেপি বিরোধীরা এক হলেই মুখ থুবড়ে পড়বে কেন্দ্রশাসিত দলটির। অার হচ্ছেও যেন তাই-ই!
ঝাড়খণ্ডে বিজেপি যে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে, তাতে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের কাছে সব থেকে বড় উদ্বেগ হল, আসন্ন দিল্লি এবং বিহারের বিধানসভা নির্বাচন।
প্রসঙ্গত, দিল্লিতে ২০১৫ সালে মোদী জনপ্রিয়তা শীর্ষে থাকা অবস্থাতেই বিজেপিকে চরমভাবে হারতে হয়েছিল কেজরিওয়ালের কাছে। তাই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এবারও কি দিল্লি হবে?
নাকি ঝাড়খণ্ডের মতো দিল্লিতেও হারতে হবে বিজেপিকে? এই চিন্তাই কপালে ভাঁজ ফেলতে শুরু করেছে বিজেপির উঁচুস্তরের নেতৃত্বের মাঝে। পাশাপাশি বিহার নিয়েও একই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
কারণ, সাম্প্রতিক উপ-নির্বাচনে আরজেডি ও কংগ্রেসের জোট, বিজেপিকে হারিয়ে একাধিক আসনে জয়ী হয়েছে। তবে তার আগেই ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে বড় পতন। হয়তো সাধারণ ভারতবাসী এটাই বোঝাচ্ছে, মানুষ কেন্দ্রে মোদীকে সমর্থন করলেও বিস্ময়করভাবে রাজ্যের ভোটে সেই মোদীর দলকেই প্রত্যাখ্যান করছে।
আর এই প্রবণতা চলতে থাকলে ২০২০ সালে দিল্লি ও বিহারেও বিজেপিকে বড় ধাক্কা খেতে হবে। পাশাপাশি, ২০২১ সালে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরেলায় বিধানসভা নির্বাচন। তবে এই চার রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকেই পাখির চোখ করেছেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ।
কিন্তু দেশজুড়ে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছে। সঙ্গে গোটা ভারতে আর্থিক মন্দা, কৃষি সমস্যা, কর্মহীনতা নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছে।
এর জেরে ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ দখল কী আদৌ সম্ভব বিজেপির পক্ষে? আসাম নিয়েও চিন্তা বেড়েছে। এছাড়া তামিলনাড়ু ও কেরলে জয়ের কোনো সম্ভাবনাই নেই বিজেপির।
অপরদিকে, পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জেলায় সম্প্রতি হয়ে যাওয়া উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস আবারো প্রমাণ করেছে এখনও তাদের ভোটব্যাংকে চির ধরাতে পারেনি কেউ। সুতরাং ২০২০ সালের দিল্লি ও বিহার এবং ২০২১ সালে চাররাজ্যে বিজেপি অপ্রত্যাশিত ভালো ফল করতে না পারলে দলের শক্তিক্ষয় চলতেই থাকবে।
আর তা হলে, ২০২৪ সালের ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতাচ্যুত হবে- এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা। আর সেটা বুঝতে পেরেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ফের একজোট হয়ে লড়াই করার জন্য সমস্ত বিরোধী দলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজৈনৈতিক দল উঁচুস্তরের নেতা এবং যেখানে বিজেপি ক্ষমতায় নেই সেসব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে চিঠি লিখে জোটবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুধু জোটবদ্ধ হওয়াই নয়, দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে রক্ষা করার এবং দানবীয় সিএএ, এনঅারসির-এর মতো আইনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিজেপিবিরোধী দলগুলোর সবাই মিলে ভবিষ্যৎ রণকৌশল ঠিক করার আহ্বানও তিনি চিঠিতে জানিয়েছেন।
ইতোমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের লেটারহেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি পাঠিয়েছেন- কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, এনসিপি’র শারদ পাওয়ার, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, আম-আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল, জেএমএম’র শিবু সোরেন, আরজেডি’র তেজস্বী যাদবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে।
তৃণমূল সূত্র জানায়, মমতার চিঠি পৌঁছেছে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং, উড়িশ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার, এমনকি সিপিএম শাসিত কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের কাছেও।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে বিজেপি শিবির পরাস্ত হওয়ার পর, সিএএ-এনআরসি ইস্যুতে ফের বিরোধী দলগুলোকে একজোট করার যে উদ্যোগ মমতা নিয়েছেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
ঝাড়খণ্ডের ফল ঘোষণার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ঝাড়খণ্ডবাসীদের। মমতা টুইটে লিখেছেন, সিএএ ও এনআরসিবিরোধী আন্দোলন পর্বে হয়েছে এই ভোট। সিএএ এবং এনআরসি’র বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন মানুষ।
‘ওরা-আমরা বিভাজন করে কেন্দ্রীয় সরকার শাসন করেছে। কিন্তু সংবিধান সবাইকে সমানভাবে দেখার কথা বলেছে। সেটা ভাঙার চেষ্টা চলছে। এই দেশটা আমাদের সবার ঘর। দেশকে ধ্বংস করতে চাইছে, এমন কোনো অশুভ শক্তির কাছে মাথা নত করা যাবে না,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
ভিএস/এমএ