ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

প্রাণ ফিরছে কলকাতার স্ট্রিট ফুডে

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২০
প্রাণ ফিরছে কলকাতার স্ট্রিট ফুডে

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে অনেক আগেই লকডাউন উঠে গেলেও কলকাতাকেন্দ্রিক লোকাল ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে সপ্তাহ তিনেক হলো। আর তাতেই সচল হয়ে উঠছে শহর কলকতা।

সেই সঙ্গে সচল হতে শুরু করেছে শহরের অফিসপাড়াও। ছন্দে ফিরছে কলকাতার স্ট্রিটফুড কর্নার বা ব্যস্ততম ফুডকোর্টগুলো।

নানা ধরনের স্ট্রিটফুড বা রাস্তার খাবারের বৈচিত্র্য দেখতে হলে কলকাতায় আসতেই হবে। কলকাতার মতো স্ট্রিটফুডের সম্ভার ভারতের কোনো শহরে নেই। কলকাতাবাসীর এই দাবিকেই পাকা করেছে ‘টেস্ট অ্যান্ড ট্রাভেল’ নামে এক গ্লোবাল রিসার্চের সমীক্ষা।

তারা জানিয়েছে, ভারতের সেরা স্ট্রিটফুড হাব কলকাতাই। খাবারের বৈচিত্র্যর পাশাপাশি সস্তা ও স্বাস্থ্যকর। অর্থাৎ, খাবারে ভেজাল এ শহরে নেই বললেই চলে। বিশেষে করে অফিস পড়া, শপিং অঞ্চল এবং আড্ডার স্থানগুলোয় খাবারে স্বাদ, বৈচিত্র্য স্বাস্থ্যকর বলেই সম্মতি দিয়েছেন তারা।

স্ট্রিটফুড বিক্রেতা বা মালিকদের মতে, খাবারে ভেজাল মেশানোর কোনো প্রশ্ন বা সুযোগ নেই এই শহরে। এর কারণ যারা প্রতিদিনের নাস্তা থেকে দুপুরের খাবারে আমাদের ভরসা রাখেন তারা সবাই অফিসযাত্রী। ফলে বাঁধাধরা ৮০ শতাংশ খদ্দেরই ব্যবসার লক্ষ্মীলাভে সাহায্য করে এসব অঞ্চলে।

পাশাপাশি খাবার ভেজাল বা অপুষ্টিকর কিনা তার জন্য সারাপ্রাইজ ভিজিট থাকে রাজ্য সরকার এবং কলকাতা করপোরেশনে খাদ্যদপ্তর থেকে। ধরা পড়লে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। পাশাপাশি এখানের খাবার সেভাবেই বানানো হয় যাতে বাড়তি না হয়। ফলে বাসি খাবারের কোনো উপায় থাকে না।

শহরে যাদের স্ট্রিটফুডের ব্যবসা তাদের বেশিরভাগের বাড়ি শহরে নয়। খাবার বেঁচে গেলে সেগুলো বয়ে নিয়ে যাওয়া একটা হ্যাঁপার ব্যাপার। এছাড়া এখানে একটা কম্পিটিশন থাকে। কে কত তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করতে পারে। তাই কলকাতার স্ট্রিট ফুডের খাবারের দাম থাকে নাগলের মধ্যে। সে কারণেই স্ট্রিট ফুডের খাবার রেস্তোরাঁর চেয়েও স্বাস্থ্যকর।  

কলকাতায় সস্তায় যেসব অঞ্চলগুলোয় স্ট্রিডফুডের হাব বলে পরিচিত তা হলো লালাবাজার থানার পিছন দিক, আদালত চত্বর, এসপ্ল্যানেড অঞ্চলের ডেকার্স লেন, আর কিছুটা কলকাতা করপোরেশন লাগোয়া নিউমার্কেট এলাকা। অফিসপাড়ার সবচেয়ে পরিচিতি খাবারে স্থান এসব অঞ্চলেই।  

এসব অঞ্চলে বিরিয়ানি, চাইনিজ, স্যুপ, স্যান্ডউইচ, ভাত-রুটিসহ ব্রিটিশ, ফ্রেঞ্চ, কন্টিনেন্টাল, শরবত, নানাপ্রকার মিষ্টান্ন মিলিয়ে খাদ্যের সমাহার। আবার এমন কিছু সংস্থা আছে যারা বিনামূল্যে খাবার বিলি করে। ফলে দুপুরের সময়টা স্ট্রিটফুডের অঞ্চলগুলোয় যেন সাম্যবাদের হাট বসে।

দুপুরে ধনী-গরিব, মধ্যবিত্ত-দরিদ্র মিলেমিশে একাকার হয়ে স্ট্রিটফুড এলাকাগুলো। মানুষ মাত্রই যে খিদে আছে সেই সাম্যবাদের সুর এখানে এলেই শোনা যায়। তাই কলকাতাবাসীর একটা তত্ত্ববাণী এখানে এলেই শোনা যাবে। ‘খাওয়ার নেই কোনো জাত, নেই কোনো পাত। তাই লাগাও হাত। ’ নানা স্বাদের ও বৈচিত্র্যের খাদ্যের বন্দোবস্ত সবার জন্য।

ন্যূনতম দামে খাবার পাওয়ার অন্যতম কারণ চাহিদা ও সেল সমান সমান। বিক্রেতাদের সেলের পরিমাণ এতটাই যে প্লেটপ্রতি খাবারের ন্যূনতম লাভ রাখলেও দিনের শেষে লাভের মুখ দেখেন অনেকটা। অফিসপাড়ায় এসব অঞ্চল জমে ওঠে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা। এরপরে থাকে বাসন ধুয়ে বাড়ি ফেরার তাড়া।

কর্মব্যস্ত এসব অঞ্চলে পাতপেড়ে খাবারে বন্দোবস্ত থাকে না। খেতে হবে দাঁড়িয়ে। ভাগ্যসুপ্রসন্ন থাকলে মিলতে পারে বসার জয়গা। তবে প্লেট থাকবে হাতে। ফলে শহরে বুফের চল হওয়ার অনেক আগেই হাতে প্লেট নিয়ে বা দাঁড়িয়ে চায়ে চুমুকে অভ্যস্ত হয়ে গেছে শহরবাসী।    

তবে চলমান করোনা সমস্যায় অনেক দোকান এখনও খোলেনি। বিক্রেতাদের মতে, খুব কম মানুষ বাইরের খাবার খাচ্ছেন। আবার বেঁচে গেলে বাড়ি অব্দি টেনে নিয়ে যাওয়া সমস্যা। আবার বেশি পরিমাণে খাবার না বানালে কমদামে বেচা অসম্ভব। তার চেয়ে দোকান না খোলার উপায় বেঁচে নিয়েছেন অনেকে।

ব্যবসায়ীদের মতে, বেশিরভাগ অফিসযাত্রী এখনও ‘হোম অ্যাট ওয়ার্ক’ এ আছেন। তবে ট্রেন চলাচল শুরু হতেই স্বাভাবিক হচ্ছে অফিসপাড়া। আর তাতেই খদ্দেরের সংখ্যা বাড়া অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন বিক্রেতারা।

যেখানে ২৫ শতাংশ মানুষ আসা-যাওয়া ছিল সেখানে ইতোমধ্যেই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০-৬০ শতাংশ। করোনা ভ্যাকসিন চালু হলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলেই আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বিশ্বস্বীকৃত কলকাতার স্ট্রিটফুড হাব আবার আগের স্থান ফিরে পাবে মনে করছেন তারা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২০
ভিএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।