কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে জোট বেঁধেছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। জোট বাঁধার মূল লক্ষ্য তৃণমূল ও বিজেপিকে নির্বাচনে পরাজিত করা।
এ ত্রিফলা জোট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই বিশাল জনসমাবেশ করেছে কলকাতার বিগ্রেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) গোটা পশ্চিমবাংলা মিশেছে কলকাতার প্রাণকেন্দ্র গড়ের মাঠে। সমাবেশে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় হাজির থাকতে পারেননি সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে তার লিখিত বার্তা সমাবেশ থেকে পড়ে শোনানো হয়।
বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এ প্রথম যৌথ ব্রিগেডে করেছে বাম-কংগ্রেস। যৌথ ব্রিগেডে প্রথমবারের মতো বক্তব্য রাখলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ছিলেন ছত্তিশগড়ের কংগ্রেসশাসিত মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলকে। চোখ ছিল পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির দিকেও।
এদিন ব্রিগেড প্যারেড ময়দান ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। মঞ্চে মূল বক্তব্যে উঠে আসে ‘সবার জন্য কাজ এবং শিক্ষা। ’ এবারে নির্বাচন হবে একদিকে বিজেপি-তৃণমূল, অন্যদিকে বামশক্তি সহযোগীরা।
সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘তৃণমূল-বিজেপি তরজা গান করছে। ব্রিগেডের প্রচার নষ্ট করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু এ সমাবেশ ঐতিহাসিক। ওরা মানুষকে শোষণ করছে। কোনো উস্কানিতে কান দিয়ে লাভ নেই। আমরা কাজ চাই। সরকারি, আধা সরকারি জায়গায় সব পদ পূরণের দাবি করছি আমরা। বিকল্প নিয়ে যেতে হবে মানুষের কাছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা হচ্ছে। আমাদের লড়াই খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থে। ’
রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ব্রিগেডে আমার এ প্রথম বক্তব্য রাখা। ওরা চাইছে বাংলায় তৃণমূল-বিজেপি ছাড়া আর কিছু থাকবে না। আমরা বলছি, আগামীতে তৃণমূল-বিজেপি নয়, থাকবে শুধু সংযুক্ত মোর্চা। ’
তবে বামদের ব্রিগেডে এবার তরুণদের সমাবেশ লক্ষণীয় ছিল। সমাবেশের আগেই ‘টুম্পা সোনা’ গানের প্যারোডি ভাইরাল হয়েছে। ছিল এমনকি ‘ফ্ল্যাশ মব’ এর আয়োজনও। ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে বামদের ভোট প্রচারের সবচেয়ে বড় সুযোগ ব্রিগেডের সভা, যা সার্থক হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। শক্তি দেখাতে কংগ্রেসও সব জেলা থেকে কর্মীদের হাজির করেছিল। ভিড় জমিয়েছিল ভাইজানের দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট।
তবে নির্বাচনের জন্য জোট হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নজর ছিল বামরা কতটা পুরোনো জমি ফিরে পাচ্ছে। কারণ কাগজে কলমে জোট বললেও, আদতে সিপিএম দেখে নিতে চাইছিল ভোটের কতটা ভিত শক্ত আছে তাদের। আর তা নিরাশ করেনি বামদের।
একদিকে, বামদের অভিনব প্রচার আর অন্যদিকে, শিক্ষা-কর্মসংস্থানের দাবিতে শহরের রাজপথজুড়ে মিছিল এসে মিলিত হয় বিগ্রেডের ময়দানে, যা দেখে কিছুটা হলেও স্বস্তি পান বাম নেতৃত্বরা।
রোববারের সমাবেশে বক্তার সংখ্যা ছিল ১০।
বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন দেবব্রত বিশ্বাস, নরেন চট্টোপাধ্যায়। তারুণ্যের ওপর ভরসা রাখলেও কোনো ছাত্র-যুব নেতার নাম অবশ্য বক্তার তালিকায় ছিল না এদিন। ছিলেন শ্রীলেখা, সব্যসাচী, বাদশার মতো টলি তারাকারা।
রোববারে এ জনসমাবশের গোটা আয়োজন করেছিল বামফ্রন্ট। ছিল ৬২০টি মাইক। শুধু গড়ের মঠ নয়, মাইক ছিল রেড রোড, ডাফরিন রোড, মেয়ো রোড পর্যন্ত। মঞ্চের আয়তনও ছিল অন্যবারের চেয়ে বড়। সেই সঙ্গে মঞ্চে চিরাচরিত লাল ব্যাক-ড্রপের জায়গায় সাদা রঙের ওপর মাঝখানের একাংশে লাল রঙ এবং একপাশে ত্রিবর্ণ রঙ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
ভিএস/এফএম