কলকাতা: ঠিক তৃণমূল কংগ্রেসের আদলে এবার বিজেপিতেও ক্ষোভ শুরু হয়েছে। নব্য দলে যোগ দেওয়া তারাকা প্রার্থীরাও টিকিট পেয়েছেন।
এমনকি সদ্য তৃণমূল ত্যাগ করা নেতারা বিজেপিতে যোগ দিয়েই দলের হয়ে নির্বাচনের টিকিট পেয়েছেন। পুরনো নেতা-কর্মীদের কথাই ভাবলো না দল! এমনভাবে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন বিজেপির নেতাকর্মীরা।
দলের মধ্যে নব্য ও পুরাতন বিজেপি কলহ লেগেছে। আর তা স্ফুলিঙ্গের মতো কাজ করলো রোববার (১৪ মার্চ)। দিল্লির সদর দপ্তর থেকে এদিন বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় ও চতুর্থ দফার প্রার্থী ঘোষণা হতেই দিকে দিকে বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা।
বেহালা-পূর্বের বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। এক সময়ে তৃণমূলের হয়ে কলকাতা পুরসভার মেয়রের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও প্রেমিকা বৈশাখীকে নিয়ে ২০১৮ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। সেদিন থেকেই দলকে সুপ্ত বাসনা জানিয়ে রেখেছিল শোভন-বৈশাখী।
কিন্তু এবারের নির্বাচনে তাদের কথা কর্ণপাতই করলো না দল। দলের তরফে প্রার্থী করা হয়েছেন অভিনেত্রী পায়েল সরকারকে। তাতেই মনোক্ষুণ্ণ হন শোভন-বৈশাখী। আর সেই প্রেক্ষিতেই এবার বিজেপি ছাড়তে চলেছেন তারা, যা ভোটের মুখে বিজেপির কাছে এক বড় ধাক্কা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অপরদিকে, এই কেন্দ্র থেকেই তৃণমূলের তুরুপের তাস শোভনের পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়।
সেই প্রেক্ষিতেই রোববার সন্ধ্যা বেলায় সামাজিক মাধ্যমে একপ্রকার বিস্ফোরক পোস্ট করে বিজেপির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার হুঁশিয়ারি দিয়ে বসলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গবাসী সবাই জানে প্রেমিকার হুঁশিয়ারি মানে আদতে শোভনেরও হুঁশিয়ারি। গত লোকসভা ভোটের মুখে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরই কলকাতা জোনের আহ্বায়ক পদে বসানো হয়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু বান্ধবীকে কোনো পদ না দেওয়াই তখনই দল ছাড়বে বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন শোভন। পরে সহ-আহ্বায়ক হয়েছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন দেখার দল কী করে।
অপরদিকে, প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সিঙ্গুরের বিজেপি কর্মীরা। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তারা। কয়েকদিন আগেই চারবারের বিধায়ক হওয়া সত্ত্বেও কেন তৃণমূল তাকে টিকিট দিল না, সেই ক্ষোভে বিজেপিতে যোগ দেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। কর্মীদের ক্ষোভের কারণ দল বদলেই টিকট পেলেন রবীন্দ্রনাথ। কর্মীদের কথা একবারও ভাবলো না বিজেপি। এই ক্ষোভে দফায় দফায় আন্দোলন করেন তারা।
তেমনই উত্তরপাড়ায় প্রবীর ঘোষালকে প্রার্থী করায় দলীয় সিদ্ধান্তকে ভুল বলেও দাবি করলেন ক্ষুব্ধ বিজেপি নেত্রী কৃষ্ণা ভট্টাচার্য। গতবার উত্তরপাড়া বিধানসভা থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কৃষ্ণা ভট্টাচার্য। এদিন তিনি বলেন, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, নানা বদনাম রয়েছে, তাকে কী করে দল প্রার্থী করে?
একইসঙ্গে সিঙ্গুরে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে বিজেপি প্রার্থী করায় কৃষ্ণা ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ৮০ বছরের বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে কি করে টিকিট দেয় দল? দলের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আগামী দিনে তিনি নির্দল প্রার্থী হতে পারেন বলেও জানিয়েছেন কৃষ্ণা ভট্টাচার্য। শুধু তারাই নয়, আলিপুরদুয়ার, হাওড়াসহ অনেক জেলাতেই বিজেপি প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
অপরদিকে তৃণমূলের মতো রাজ্যে তারাকা প্রার্থীদের টিকিট দিয়ে মাস্টার স্ট্রোক দিলো বিজেপির দিল্লি দপ্তর। একুশের ভোটযুদ্ধে বিজেপির হয়ে ময়দানে নামছেন বাবুল সুপ্রিয়, যশ দাশগুপ্ত, পায়েল সরকার, তনুশ্রী চক্রবর্তী এবং অঞ্জনা বসুর মতো তারকারা। তবে এদিনও শ্রান্তীর নাম শোনা যায়নি। অবশ্য আরও তিন দফার প্রার্থী ঘোষণা বাকি আছে বিজেপির।
চণ্ডীতলা থেকে লড়বেন যশ দাশগুপ্ত। চুঁচুঁড়া থেকে লড়ছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া সোনারপুরে দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে যেখানে তৃণমূলের তরফে দাঁড় করানো হয়েছে অভিনেত্রী লাভলি মৈত্রকে, সেই কেন্দ্র থেকে বিজেপির বাজি অভিনেত্রী অঞ্জনা বসু। উল্লেখ্য, লাভলির তুলনায় অঞ্জনার জনপ্রিয়তা বেশি।
এছাড়া টালিগঞ্জ কেন্দ্রে তৃণমূলের অরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যেখানে বাম-কংগ্রেসের সংযুক্ত মোর্চা প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন অভিনেতা দেবদূত ঘোষ, সেখানে বিজেপির বাজি আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ো। অন্যদিকে, পায়েল সরকার প্রার্থী হয়েছেন বেলাহা পূর্ব থেকে এবং শ্যামপুর থেকে টিকিট পেলেন অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তী।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
ভিএস/এমজেএফ