কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা।
টানা ১০ বছর মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার আগলে রাখার পর মমতার কাছে তৃতীয়বার ক্ষমতা দখল করা এক প্রেস্টিজ ফাইটে পরিণত হয়েছে। আর তাই হয়তো একুশের নির্বাচনী কেন্দ্র হিসেবে স্বয়ং মমতা নিজেই বেছে নিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম।
ঠিক ৫০ বছরের আগে এ জায়গাই বেছে নিয়েছিলেন পদ্মবিভূষণ স্মারকপ্রাপ্ত রাজ্যের সাবেক আর এক মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ছিলেন তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের নেতা স্বাধীনতা সংগ্রামী অজয় মুখোপাধ্যায়। এ জেলার তমলুক কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
১৯৫১ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত টানা সাতবার এখান থেকেই নির্বাচিত হয়েছিলেন অজয় মুখোপাধ্যায়। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনবার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে শেষবারের মতো অজয় মুখোপাধ্যায় জয়ী হয়েছিলেন এখান থেকেই।
ঠিক তার পাঁচ দশক পর ২০২১ সালে আবার পূর্ব মেদিনীপুরের মাটি থেকে বিধানসভা ভোটে দ্বিতীয় কোনো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে লড়াইয়ে নেমেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অনেক আগেই অর্থাৎ গত ১৮ জানুয়ারি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে জনসভা করে সেখান থেকেই প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
মমতার নন্দীগ্রামে প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পরই এ জেলার রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ বেড়েছে। কারণ পশ্চিমবঙ্গের জমি আন্দোলনের ইতিহাসে সিঙ্গুরের পরই নন্দীগ্রাম উঠে আসে। আর সেই জমি আন্দোলনের স্রষ্টা স্বয়ং নিজেই বেছে নিয়েছে নন্দীগ্রাম। ফলে সবার যে এ কেন্দ্রের দিকে নজর থাকবে তা বোঝাই যাচ্ছে।
তবে এ কেন্দ্রের দিকে নজর থাকার আর এক কারণ শুভেন্দু অধিকারী। কারণ মমতা নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের ভিত শক্ত করেছিলেন শুভেন্দুর হাত ধরে। শুধু জমি শক্ত করাই নয়, বাম জমানার পতনের নৌকার হাল যখন মমতার হাতে ছিল তখন সেই স্রোতকে তরান্বিত করেছিলেন শুভেন্দুরাই। অর্থাৎ সিঙুর ও নন্দীগ্রামে যদি বামেদের পতন ঘটানো না যেত তাহলে সাড়ে ৩৪ বছরের বামেদের ক্ষমতার পতন ঘাটানো যেত না। ফলে মমতা সেদিন যাদের ওপর বেশি ভরসা রেখেছিলেন তার মধ্যে শুভেন্দুই ছিল তার শ্রেষ্ঠ শিষ্য।
বর্তমানে গুরু-শিষ্যের মধ্যে মতাদর্শ ও নৈতিকার কয়েক যোজন দূরত্ব তৈরি হয়েছে। নন্দীগ্রামের বিধায়ক পদ ও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে তার দল বদলে বিজেপি যাতে ফায়দা তুলতে না পারে, সে কথা মাথায় রেখে সম্ভবত তৃণমুল সুপ্রিমো নন্দীগ্রাম থেকে লড়াই করছেন।
মমতার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন নন্দীগ্রামের সাধারণ মানুষ। আর তা টের পাওয়া গিয়েছিল গত বুধবার (১০ মার্চ)। ওইদিন মমতা চোট পাওয়া নিয়ে শাসক দল যাই তত্ত্ব খাড়া করুক না কেন। মমতার জনপ্রিয়তার ভিড় সামাল দিতে পারেনি পুলিশ। সে কারণেই এ অ্যাকসিডেন্ট। যা স্বয়ং নির্বাচন কমিশনও স্বীকার করে নিয়েছে।
মমতাকে সামনে পেয়ে এলকাবাসী স্মরণে আবার জেগে উঠেছে জমি আন্দোলনের স্মৃতিকথা। সে কারণে সেখানকার সাধারণ মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে এ লড়াই এখন শুধু দুই রাজনৈতিক দলের লড়াই নয়। এ লড়াই গুরু-শিষ্যের। মানুষ কাকে বেছে নেয় তা তো সময় বলবে। কারণ মমতা যদি জমি আন্দোলনের স্রষ্টা হন সেই লড়াইয়ের মশাল ছড়িয়েছিলেন শুভেন্দুই।
তবে এ কথা ঠিক ভারতের নিরিখে দেশের একমাত্র নারী মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দোপাধ্যায়। ইতিহাস বলছে দীর্ঘ ৫০ বছর বাদে পুর্ব মেদিনিপুর জেলা থেকে দ্বিতীয় কোনো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনিই প্রার্থী হয়েছেন। তিনিই পূর্ব মেদিনীপুরের প্রতিনিধি হয়ে মুখ্যমন্ত্রিত্বের হ্যাটট্রিক করবেন এ আশা এখন তৃণমূল সমর্থকদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
ভিএস/আরবি