কলকাতা: বাংলা গানের কিংবদন্তি গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকার্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করে কলকাতায় ফিরে এসেছেন। প্রবাদপ্রতিম এই সঙ্গীতশিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
টুইট বার্তায় তিনি বলেন, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর নেই। তাঁর মৃত্যুতে আমি গভীর শোকাহত। তাঁর মৃত্যুতে সঙ্গীতজগতে ও লাখ লাখ মানুষের হৃদয়ে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হলো। ওঁকে আমি বরাবরই নিজের দিদির মতো নজর রাখতাম। তাই তাঁর মৃত্যু আমার কাছে এক ব্যক্তিগত ক্ষতি। আমাদের সঙ্গীত অ্যাকাডেমির প্রাণ ছিলেন সন্ধ্যা। তাঁর মৃত্যুতে সঙ্গীতজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। স্বর্ণকণ্ঠী গীতশ্রী সন্ধ্যাদির সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল। তাঁর মৃত্যুতে আমি আমার অগ্রজাকে হারালাম। আমি সন্ধ্যাদির পরিবার-পরিজন ও অসংখ্য অনুরাগীকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সরকারি এক শোকবার্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কিংবদন্তিপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী, অমর সুরসাধিকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে আমি গভীরতম শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। দশকের পর দশক ধরে তিনি তাঁর অবিস্মরণীয় কণ্ঠমাধুর্যের জাদুতে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন। তাঁর গাওয়া অসংখ্য গান সঙ্গীতপ্রেমীদের পছন্দের তালিকায় আজও শীর্ষে রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার সঙ্গীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে ২০১১ সালে ‘বঙ্গবিভূষণ’, ২০১২ সালে ‘সঙ্গীত মহাসম্মান’ ও ২০১৫ সালে ‘ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি বিশেষ সঙ্গীতসম্মান’ দেয়। তিনি ভারত নির্মাণ অ্যাওয়ার্ড, ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ড সহ বহু সম্মানে ভূষিত হন। তিনি আমৃত্যু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমির সভাপতিও ছিলেন।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি)। এ দিন বেলা ১২টার দিকে তার মৃতদেহ আনা হয়েছে রবীন্দ্রসদনে। সেখানেই রাখা হবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। রবীন্দ্রসদনে তাঁর নশ্বর দেহকে শেষ সম্মান জানাতে পারবেন সকলেই। এরপর রবীন্দ্রসদন থেকে পায়ে হেঁটে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ কালীঘাটের কেঁওড়াতলা মহাশ্মশানে গান স্যালুটে বিদায় জানানো হবে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে।
মঙ্গলবার স্থানীয় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় পথচলা থেমে যায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। বিগত কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন কিংবদন্তী এই শিল্পী। অ্যাপোলো হাসপাতালে বেশ কয়েকদিন ধরেই ভর্তি ছিলেন। কিছুদিন ধরেই তিনি বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন। কোভিডেও আক্রান্ত হন।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাঁর রক্তচাপ কমতে থাকে, শুরু হয় পেটে ব্যথাও। এরপর অবস্থা আরও শঙ্কাজনক হলে তাঁকে ক্রিটিক্যাল ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ প্রায়ত হন প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পী। গীতশ্রীর প্রয়াণে পুরো বাংলায় শিল্পীমহলে নেমে আসে শোকের ছায়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১
ভিএস/এমজেএফ