কলকাতা (ভারত): পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় উত্তপ্ত রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম। ওই গ্রামের তৃণমূলের উপপ্রধান খুনের পর ৮ জনকে পুড়িয়ে মারায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদীরা রাতভর গ্রামে তাণ্ডব চালায়। ভাদু শেখের মৃত্যুর পর বাইকে চেপে চার-পাঁচজন বগটুই গ্রামে এসে একাধিক বাড়িতে ভাঙচুর চালায়, তারপর ১০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাতে ৮ জন পুড়ে মারা যায়। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রাতেই পুলিশ মরদেহগুলি দাফন করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ তৃণমূল নেতার খুনের বদলা নিতেই এই ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে গ্রাম্যভোট (পঞ্চায়েত নির্বাচন) রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের ধারনা, শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই এই গণহত্যা। এই মুহূর্তে গোটা ভারতের নজর এখন পশ্চিমবঙ্গের বগটুই গ্রামের দিকে। তবে এ বিষয়ে পুলিশ এখনও কিছু বলেনি। যদিও প্রথমদিকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বলে ধামা চাপা দেওয়া হলেও পরে সরকারিভাবে আগুন দেওয়ার ঘটনাই সামনে আসে। একরাতে ৯ জনের হত্যায় ২১ জনকে গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ের সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রাজ্য পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করে মমতা বলেছেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে এর চেয়ে অনেক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। তবে আমাদের সরকার দোষীদের শাস্তি দেবে। নিরপেক্ষ ভাবেই তদন্ত হবে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র ও পুলিশমন্ত্রী। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে।
তবে বুধবার (২৩ মার্চ) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিরোধীরা একজোট হয়ে সরকারের বদনামের চেষ্টা করছে। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কেউ ছাড়া পাবে না। ওসি ও এসডিপিওকে সরিয়ে দিয়েছি। সিট গঠন করেছি। ফিরহাদ হাকিমকে পাঠিয়েছিলাম। আজই যেতাম। কিন্তু বিরোধীরা গেছেন। তাই বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) আমি যাব। আমরা সিপিএম, কংগ্রেসের মতো চক্রান্তকারী দল নই।
এদিকে এই হত্যার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একাধিক মামলা জমা পড়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এদিন বলেছেন, নারী-শিশুসহ ৮ গ্রামবাসীর আগুনে পুড়ে মৃত্যু বেদনাদায়ক ঘটনা। এটি একটি সিরিয়াস ক্রাইম।
গণহত্যার প্রতিবাদে এদিন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বাম প্রতিনিধিদের নিয়ে ওই গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ তাকে বাধা দেয়। তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম মোটরসাইকেলে ঘুর পথে ওই গ্রামে পৌঁছান। তিনি সেখানে পোড়া বাড়িগুলি ঘুরে দেখেন। কথা বলেন স্থানীয়দের সঙ্গে।
পরে তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাওয়াই চপ্পলে রক্তের দাগ রয়েছে। যা হয়েছে সব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে।
পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সেলিম বলেন, অপরাধীরা যখন এই বাড়িগুলিতে তাণ্ডব চালাচ্ছিল, তখন পুলিশ বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিল। পুলিশের সামনেই এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, কালীঘাটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই এখানে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় আরেক ভাইপো দায়িত্বে আছেন। ভাইপো আশিস এবং এসডিপিও মিলে অত্যাচার চালিয়েছে। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) ঘটনাস্থলে আসে সিআইডি- যেই তদন্ত করুক, কোনো লাভ হবে না। মমতার সিআইডি এবং অমিত শাহের সিবিআইয়ের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। কাক কখনও কাকের মাংস খায় না। মমতা আর অমিতের বোঝাপোড়ায় তদন্ত ঘুরে যাবে!
এদিকে এঘটনায় হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছে কংগ্রেসও। বসে নেই বিজেপি। দিল্লি পৌঁছে গেছে তারাও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে বিজেপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অফিসে গিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, অর্জুন সিংহ এবং রাজু বিস্তা প্রমুখ। তারপরই ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের কাছে এই ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছে।
সব মিলিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি রাজ্যে। উত্তপ্ত কলকাতাও। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে একাধিক রাজনৈতিক দল ও গণ সংগঠন। এদিন বিধানসভার সামনে তুলকালাম ধ্বস্তাধস্তি চলে পুলিশ ও এসইউসিআই কর্মীদের মধ্যে। গণহত্যাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড