কলকাতা: ভারতে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ ক্রমশ নিচের দিকে, পাশাপাশি বেড়েছে করেনা টিকাকরণের পরিধিও। এই পরস্থিতিতে প্রায় দুই বছর পর সোমবার (২৮ মার্চ) থেকে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা ফের চালু হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, আমেরিকা এবং ইরাকসহ ৪০টি দেশের বিমানকে ভারতে পরিষেবা শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা ফের স্বাভাবিক হয়েছে। আর ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে দেশটির বিমান পরিষেবা সংস্থাগুলি।
কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ বিমান এবং নভোএয়ার এই দুই প্রতিষ্ঠান চলাচলের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হয়েছে। বাকিগুলো খুব শিগগিরই চালু হবে। বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য ভারতীয়দের ২৪ মার্চ থেকে টুরিস্ট ভিসা চালু হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসও টুরিস্ট ভিসা চালু করছে বলে জানা গেছে। দিল্লির সবুজ সঙ্কেত পেলেই দুয়েক দিনের মধ্যেই ভারত ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশিদের জন্যও টুরিস্ট ভিসা চালু হবে। ফলে রোজার প্রথমদিকেই দু’দেশের যাতায়াত স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে প্রায় দু'বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দুই দেশের মধ্যে রেলপথে যাত্রী চলাচল। গত ২৬ মার্চ থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ফের চালু হওয়ার কথা ছিল। এজন্য ভারতীয়দের জন্য বাংলাদেশ এরই মধ্যে টুরিস্ট ভিসা চালু করেছে। কিন্তু ভারত টুরিস্ট ভিসা চালু না করায় এখনও চালু হচ্ছে না এই মৈত্রী ট্রেন চলাচল। তবে জানা গেছে, রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকেই ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসও চালু হয়ে যাবে।
অপরদিকে বেনাপোল-পেট্রাপোল অর্থাৎ সড়ক পথ খোলা থাকলেও দুই দেশের যাত্রীদের যাতায়াত খুব স্বাভাবিক ছিল না। এ বিষয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সম্প্রতি বলেন, আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত আছি। কেন্দ্রীয় সরকারের সবুজ সংকেত পেলেই আগের মতোই দুই দেশের যাত্রীরা সড়কপথে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। তবে এর জন্য খুব বেশিদিন সময় লাগবে না।
পাশাপাশি বেসরকারি সূত্রে জানা গেছে, যেসব বাংলাদেশি বাসে করে কলকাতার মারকুই স্ট্রিটে নামতো, খুব শিগগিরই তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সম্পূর্ণ বাস টার্মিনাল মারকুই স্ট্রিট থেকে উঠে যাচ্ছে। সম্ভবত সল্টলেক বা কলকাতার নির্দিষ্ট কোনো বাস টার্মিনালে এ ব্যবস্থা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শ্যামলীর মত প্রতিষ্ঠান অনেক আগেই তাদের বাস সল্টলেকে নিয়ে গেছে। তবে সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, মারকুই স্ট্রিট অনেকটা পুরান ঢাকার মত। ফলে স্থানীয়রা বাস টার্মিনাল তুলে দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। যদিও সেখানের হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন হঠাৎ করে সরিয়ে দিলে তাদের ব্যবসায় সমস্যা হবে। কারণ বাস যদি সল্টলেক বা অন্যত্র থামে তাহলে সেখানেই গড়ে উঠবে হোটেল। ফলে মারকুই স্ট্রিট মুখী হবেন না যাত্রীরা। বাস টার্মিনাল যাতে না ওঠে তা নিয়ে কিছু হোটেল ব্যবসায়ী লিখিত আবেদন প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছে।
চিকিৎসার জন্য বগুড়া থেকে কলকাতায় আসা এক বাংলাদেশির মতে, ম্যরকুই স্ট্রিট হলো কলকাতার সেন্ট্রাল পয়েন্ট। এখান থেকে সব স্থানে যাওয়া সম্ভব। এর সঙ্গে বাড়তি পাওনা কলকাতার নিউমার্কেট। ফলে বাস যেখানেই থামুক, মারকুই স্ট্রিটে কোনো হোটেলে ওঠার সব সময় পরিকল্পনা করব।
অপরদিকে চিকিৎসার কারণে ঢাকা থেকে আসা রাহানের মতে, কলকাতার চিকিৎসা ব্যবস্থার অবনতি ঘটছে। ফলে বেশিরভাগ বাংলাদেশি এখন দক্ষিণ ভারতমুখী। তবে কেনাকাটার জন্য কলকাতার নিউমার্কেটে আসতেই হবে। ফলে মারকুই স্ট্রিট হোক বা আশপাশ তাতে কোনো কিছু যায় আসে না। ফলে পরিস্থিতি শেষে কি দাঁড়ায় তা সময় বলবে। তবে এটুকু নিশ্চিত রোজার মাসেই স্বাভাবিক হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত চলাচল।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড