কলকাতা: ভারতে গত ১০ দিনে ৯ ধাপে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এতে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ, পাশাপাশি আশঙ্কা থাকছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির।
কলকাতায় বুধবার যে পেট্রোল লিটার প্রদি দাম ছিল ১১০ রুপি ৫২ পয়সা। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) তা ৮৩ পয়সা বেড়ে হয়েছে ১১১ রুপি ৩৫ পয়সা। পাশাপাশি ৯৫ রুপি ৪২ পয়সা থেকে বেড়ে কলকাতায় ডিজেলের নতুন দাম ৯৬ রুপি ২২ পয়সা। ডিজেলে নতুন করে ৮০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে।
দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে পেট্রোল সেঞ্চুরি পার করেছে। লিটার প্রদি দাম হয়েছে ১০১ রুপি ৮১ পয়সা এবং ডিজেলে ৯৩ রুপি ৭ পয়সা। মূলত, ভারতের চার মেগা সিটির মধ্যে দিল্লিতে জ্বালানি তেলের দাম সবচেয়ে কম থাকে।
অপরদিকে, মুম্বাইতে লিটার প্রতি ৮৪ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে পেট্রোল ও ডিজেলের যথাক্রমে দাম হয়েছে ১১৬ দশমিক ৭২ রুপি এবং ১০০.৯৪ রুপি।
ভারতের মেগা সিটির মধ্যে মুম্বাইতে জ্বালানির দাম সবচেয়ে বেশি থাকে। এরপর আছে চেন্নাই। সেখানে লিটার পিছু ৭৬ পয়সা বেড়ে দুই জ্বালানির দাম হয়েছে যথাক্রমে ১০৭ দশমিক ৪৫ রুপি এবং ৯৭.৫২ রুপি।
টানা জ্বালানির দাম বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ জমছে গোটা ভারতসহ বঙ্গবাসীর মধ্যে। কারণ, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির আঁচ পড়বে পরিবহন ব্যবস্থায়। যার ফলে যাতায়াতে পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বাজারজাত নিত্যপণ্য সব কিছুতেই মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে। আরও চাপ পড়বে মধ্যবিত্তের পকেটে।
ভারতের পাঁচ রাজ্য অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশ পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, গোয়া এবং মনিপুর রাজ্যে বিধানসভা ভোট আবহের জেরে বিগত সাড়ে চার মাস দেশটিতে অপরিবর্তিতই ছিল জ্বালানির দাম। ওই সময়ে অপরিশোধিত তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজোরে ব্যারেল প্রতি প্রায় ৩০ ডলার বেড়ে গিয়েছিল। সেই সময় প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ৮২ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছিল ১২০ ডলার। কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি তখন দাম বৃদ্ধি করেনি।
এরপর পাঁচ রাজ্যে ভোটপর্ব মিটতেই গত ২২ মার্চ প্রথমবার ভারতের জ্বালানির দাম বৃদ্ধি হয়। এরপর থেকে একদিন বাদ দিলে ১০ দিন ধরে দেশটিতে বেড়েই চলেছে জ্বালানির দাম। কখনও ৫০ পয়সা তো কখনও আবার ৮০ পয়সা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রসঙ্গে দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। বলেছেন, যুদ্ধের জেরেই আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বলানির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিন্তু দেশটির বিশেষজ্ঞদের মতে ভারতে অপরিশোধিত তেল যে পরিমাণে মজুদ রয়েছে, তা কখনোই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতে তার প্রভাব পড়ার কথা নয়। তার ওপর রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির পর আগামী মে মাসে আরও সস্তায় অপরিশোধিত তেল কিনতে চলেছে ভারত। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের এই যুক্তি চলে না।
কলকাতার সাধারণ মানুষের মতে, ‘দাম বৃদ্ধির তো একটা সীমা থাকে। আগে ধারণা করা যেত কতটা বাড়তে পারে এবং কোথায় থামতে পারে। এখন সবকিছুই ধারণার বাইরে চলে যাচ্ছে। এর শেষ কোথায়? জ্বালানির দাম বৃদ্ধি মানে সব কিছুর দাম বাড়বে। মোদী সরকার কী করছে! এত আয় কই যে, ব্যয় করবো। চলবো কোথা থেকে? সরকার কি একবার ভাববে না?’
তবে একাংশের মত, দাম বৃদ্ধির দায় শুধু ভারত সরকারের নয়, রাজ্যেরও। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি হলে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি এর আয় রাজ্যগুলো পায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার অংশের কিছুটা ছাড় দিলে অনেকটাই স্বস্তি পাবে বঙ্গবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ০১০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ