কলকাতা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘কলকাতায় বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হচ্ছে এক প্রামাণ্যচিত্র। এতে তুলে ধরা হবে বঙ্গবন্ধুর কলকাতায় কাটিয়ে যাওয়া সময় ও দিনগুলো।
সোমবার (৪ এপ্রিল) কলকাতার মৌলানা আজাদ কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়েছে সেই তথ্যচিত্রের শুটিং। তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজ অর্থাৎ বর্তমান মৌলানা আজাদ কলেজের ছাত্র ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তথ্যচিত্রে ১৯৩৪ থেকে ১৯৭২-এর ৮ ফেব্রুয়ারি সময়কালে বিভিন্ন ভূমিকায় কলকাতায় শেখ মুজিব এবং তার সেই কলকাতা যাপনকালের খুঁটিনাটির সঙ্গে সমসাময়িক প্রাকৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হবে এ প্রামাণ্যচিত্রে।
গৌতম ঘোষ বলেন, কলকাতায় বঙ্গবন্ধু তার ছাত্র জীবন কাটিয়ে ছিলেন। সেই সূত্রে তার রাজনৈতিক শিক্ষার একটা বড় অংশ কলকাতা শহর। তৎকালীন শহরের মানুষ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বঙ্গবন্ধুর জীবন আলোড়িত করেছিল। যার আঁচ আমরা অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে পাই। শেষবার তিনি কলকাতায় যখন এসেছিলেন এবং বিগ্রেডের জনসমাবেশ, যেখানে লাখ লাখ কলকাতাবাসী তাকে স্বাগত জানানো, সম্মান জানানো অর্থাৎ কলকাতাবাসী বঙ্গবন্ধুর প্রতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছিল তা আজ মানুষ ভুলতে বসেছে। তার আর্কাইভ বা তথ্য পাওয়া খুবই ডিফিকাল্ট। তবে আমরা চেষ্টা করবো একটা ইম্প্রেশন তুলে ধরার। পাশাপাশি প্রামাণ্যচিত্রে তুলে ধরা হবে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া ইত্যাদি জেলাগুলো। আমাকে গবেষণার কাজে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ আর্কাইভ, সোহেল আহমেদ সিদ্দিকি এবং কলকাতায় ব্যক্তিগত সংগ্রহে অনেকের কাছে বঙ্গবন্ধুর অনেক তথ্য আছে। সেগুলো মিলিয়েই তৈরি হবে এ প্রামাণ্যচিত্র।
বর্তমান মৌলানা আজাদ কলেজের অধ্যক্ষ শুভাশিস দত্ত বলেন, আমি ভীষণভাবে গর্বিত এ কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে, যেহেতু বঙ্গবন্ধু এ কলেজের ছাত্র ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ওপর একটা তথ্যচিত্র হচ্ছে, যা করছেন গৌতম ঘোষ এবং তার শুভ মহরত হয়েছে এ কলেজ থেকে। যা আমাদের গর্বিত করছে। আমি মনে করি এ কাজের মধ্য দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্পর্ক আরও উন্নত হবে।
২০০৮ সালের শেষের দিকে কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান শুভাশিস দত্ত। জানতে পারেন বেকার হোস্টেলের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি বিজড়িত ২৪ নম্বর কক্ষের কথা। তার উদ্যোগে ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগিতায় স্মৃতি কক্ষটি সাজিয়ে তোলা হয়। পরে বাংলাদেশ সরকার ও কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সহযোগিতায় স্মৃতি কক্ষটি আরও উন্নত হয়ে ওঠে। আগামী দিনে যাতে আরও ভালো করা যায় তারও পরিকল্পনা করছেন অধ্যক্ষ শুভাশিস দত্ত।
এদিন তিনি আরও বলেন, তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজ অর্থাৎ আজকের মৌলানা আজাদ কলেজ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতে কিছু করা যায় কিনা সে নিয়ে অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা চলছে। ইচ্ছে আছে এখানে বঙ্গবন্ধু একটি আবক্ষ ভাস্কর্য তৈরি করার। এ বিষয়ে পরিকল্পনা চলছে। পাশাপাশি তিনি বলেন, মুজিব শতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কলেজে সাত দিনের অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু করোনার জন্য তা ভেস্তে যায়। তবে এ এপ্রিলে অনুষ্ঠান হতে পারে বলে আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে।
প্রসঙ্গত, কলকাতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু নাড়ির টান ছিল বরাবরই। ১৯৩৪ সালে তিনি যখন চিকিৎসার জন্য বাবার হাত ধরে কলকাতায় আসেন তখন তিনি ছিলেন শুধুই শেখ মুজিব। তবে ১৯৭২-এর ৮ ফেব্রুয়ারি যখন ঢাকায় ফিরে যাচ্ছেন ততদিনে শেখ মুজিব হয়ে উঠেছেন বঙ্গবন্ধু। অর্থাৎ শেখ মুজিব থেকে তার বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার কলকাতায় সময়টাই তুলে ধরছেন গৌতম ঘোষ। তথ্যচিত্রে উঠে আসবে মৌলানা আজাদ কলেজ পড়া, বেকার হোস্টেলের ছাত্রবস্থা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া, পার্কসার্কাস এলাকায় অবাধ বিচরণ, আলিমুদ্দিনে পত্রিকা দপ্তরে রাত কাটানো থেকে শুরু করে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জনসমুদ্রে তার রক্তে আগুন ধরানো ভাষণ, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে পদচারণ সমস্তটাই উঠে আসবে গৌতম ঘোষের ৩০ মিনিটের তথ্যচিত্রে। প্রযোজনা করছে ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ ও কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২২
ভিএস/আরবি