ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

দিল্লিতে আগুনে ২৭ নিহতের ঘটনায় ভবনের ২ মালিক গ্রেফতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৩ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২২
দিল্লিতে আগুনে ২৭ নিহতের ঘটনায় ভবনের ২ মালিক গ্রেফতার

কলকাতা: স্থানীয় সময় তখন শুক্রবার (১৩ মে) বিকেল চারটা। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি জুড়ে চূড়ান্ত ব্যস্ততা।

ঠিক সেই সময়ই আগুন লাগে পশ্চিম দিল্লির মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি বাণিজ্যিক ভবনে। ভবনের একতলায় একটি যন্ত্রাংশ তৈরি কারখানায় আগুনের সূত্রপাত হয়।

দ্রুত বাতাস চলার কারণে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে সারা ভবনে। মুহূর্তেই কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। জানালা ভেদ করে বের হতে থাকে আগুনের লেলিহান শিখা। এতে কার্যত হতভম্ব হয়ে পড়েন ওই পথ দিয়ে চলাচলকারী দিল্লিবাসী।

বিকেল ৪টা ৪০ মিনিট নাগাদ ওই অঞ্চলের মুন্ডকা থানায় জানানো হয়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। খবর যায় ফায়ার সার্ভিসেও। ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি গাড়ি। তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় পরে যোগ দেয় আরও ১৪টি গাড়ি।

এ অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে প্রাণ বাঁচাতে জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিতে থাকেন ওই ভবনে অবস্থানরতরা। তাদের অনেকেই গুরুতর আহত হন। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন তারা।

বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ সারা ভবনে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে আগুন। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে দিল্লির বাণিজ্যিক ভবনটি। দমকল বাহিনীর সহযোগিতায় দড়িতে ঝুলে, ক্রেনে করে বাঁচার চেষ্টা করেন আটকে থাকা অফিস কর্মীরা। একদিকে আগুনের লেলিহান শিখা, কালো ধোঁয়া, আরেকদিকে চলে জীবন বাজি রেখে বাঁচার চেষ্টা।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়ও দমকল বাহিনীর ২৪ ইউনিটের প্রাণান্তকর চেষ্টায়ও আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

রাত ৮টার দিকে আটকা পড়াদের উদ্ধারে ভবনে ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হন দমকল কর্মীরা। এরপর একে একে উদ্ধার করেন আহতদের।

রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন কিছুটা আয়ত্তে আনতে সক্ষম হন দমকল কর্মীরা।

অবশেষে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মোট ৩০ টি ইউনিটের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। ততক্ষণে কয়েক ঘণ্টা আগের ঝকঝকে ভবনটি নেমে আসে শ্মশানের নিস্তব্ধতা, ছুটে আসেন স্বজনহারারা। ভবনটি থেকে উদ্ধার করা হয় ২৭ জনের পোড়া মরদেহ আর ১২ জনকে আধপোড়া অবস্থায়। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় সঞ্জয় গান্ধী হাসপাতালে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এদিকে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের পর ওই ভবনের এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। পরিচয় পত্র নিয়ে তাদের পাগলের খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনহারারা। অনেকের ধারণা ভেতরেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছেন তারা কিছু প্রাণ। তবু বোরবারও (১৪ মে) তাদের বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ।

মর্মান্তিক এই ঘটনায় দিল্লির দমকল বিভাগের প্রধান অতুল গর্গ জানিয়েছেন, বাণিজ্যিক ভবনের মালিকরা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের ব্যবস্থাই রাখেনি। কোনো এনওসি আবেদনই করেননি ফায়ার সার্ভিসের কাছে। এমনকি, এই বাণিজ্যিক ভবনের বেশির ভাগ অফিস দমকল বিভাগের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পর্যন্ত নেয়নি। অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা না মেনেই তারা ওই ভবনটিতে কাজ করছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা। আর ভবনের মালিক বরুণ গোয়েল এবং সতীশ গোয়ালকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ।

ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘আগুন লেগে মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ’ সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে নিহতদের পরিবারকে ২ লাখ রুপি এবং আহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। শোক জানিয়ে টুইট করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও। এতে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়া কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও টুইট বার্তায় দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।