ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে বিজেপি হটানোর বার্তা মমতার

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে বিজেপি হটানোর বার্তা মমতার

কলকাতা: বৃহস্পতিবার ২১ জুলাই, পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল দিনটিকে শহীদ দিসব হিসেবে পালন করে থাকে। আর তা বৃষ্টির মধ্যেও সেই ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ পুরোপুরি সফল।

সমাবেশ শেষে এমনই দাবি তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এরই পাশাপাশি লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে নেত্রীর স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন তৃণমূল প্রধান।

একুশের মঞ্চে এদিন ভাষণের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন মমতা। বিজেপিকে চড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। পাশাপাশি আবারও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর অপব্যবহারের অভিযোগ তোলেন তৃণমূল নেত্রী।  

তিনি বলেন, আমরা মেরুদণ্ড সোজা, মাথা উঁচু করে চলি। ওদের মেরুদণ্ডে এজেন্সি। একদিকে ইডি, অন্যদিকে সিবিআই। তাই দিয়ে অন্যদের ভয় দেখাচ্ছে। যেখানে বিজেপি নেই সেসব রাজ্যের সরকার ভাঙতে শুরু করেছে ওরা। মহারাষ্ট্র ভেঙেছে, হরিয়ানা ভাঙছে, ছত্তিশগড় ভাঙছে। আবার বাংলাও ভাঙবে বলছে, এত ক্ষমতা ওদের। ভুলে যাবেন না এখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের বাস। সহজে মাথা নত করব না।

জ্বালানি তেল, রান্নার গ্যাস, নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি, বেকারত্ব, অস্থায়ী সেনাবিহানির (অগ্নিপথ) নিয়োগের বিষয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন মমতা। এছাড়া ২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন (গ্রামস্তরের ভোট) ও ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন ইস্যুতে দলের কর্মীদের আরও নমনীয় হওয়ার বার্তা দেন মমতা।

মঞ্চ থেকে দলের জনপ্রতিনিধিদের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তৃণমূল নেত্রী। একইসঙ্গে দলে দুর্নীতিবাজদের কখনই রেয়াত করা হবে না বলেও এদিন কড়া বার্তা দিলেন মমতা।

কর্মসংস্থানের প্রশ্নেও, এদিন বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, বাংলা চায় সবার চাকরি হোক আর বিজেপি চায় চাকরি যাক। এয়ার ইন্ডিয়া, কোল ইন্ডিয়া তুলে দিচ্ছে, রেলের চাকরি সংখ্যা কমিয়ে আনছে, টাকার দাম পড়ে যাচ্ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। আমরা জানি বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা চলছে। তা বলে মানুষ এভাবে কর্মসংস্থান হারাবে কেন? বাংলায় আমাদের তাজপুরে পোর্ট হচ্ছে সেখানে ১২ হাজার চাকরি হবে। ১৭ হাজার শিক্ষকের চাকরি তৈরি আছে মামলার জন্য চাকরি দেওয়া যাচ্ছে না। ডেউচাতে (কয়লাখনি) ১ লাখ চাকরি হবে।

চাকরি দুর্নীতি ইস্যুতে এদিন বিজেপির পাশাপাশি ক্ষণিকের জন্য সিপিএমকেও নিশানা করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তার কথায়, সিপিএমের আমলে চাকরি বিক্রি হতো। ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় চাকরি বিক্রি করেছে সিপিএম। ওরা অনেক অযোগ্যদের চাকরি দিয়েছে। ক্যাডাররা যাতে পার্টি করতে পারে তাই তাদের বউদের চাকরি দিয়েছে। আমার কাছে সব তথ্য আছে। বাংলায় অনেক জন্মনিবন্ধন আছে যারা এ রাজ্যের মানুষ নন। আমার কাছে সব তথ্য আছে। এসব ওদের আমলে হয়েছে।

এছাড়া মুড়িতে ট্যাক্স ইস্যুতে এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের তুমুল সমালোচনা করেছেন মমতা।  

এ ব্যাপারে কেন্দ্রকে বিঁধে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেছেন, মুড়িতেও জিএসটি, মানুষ খাবে কী? বিজেপির বন্ধুরা মুড়ি খান না। তারাও ভাবুন। আমাদের মুড়ি ফেরাও, নইলে বিজেপি বিদায় নাও। সব কিছু থেকে ট্যাক্স (জিএসটি) আদায় করতে চাইছে। মানুষ খাবে কী?

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাজ্যের নানা এলাকায় তৃণমূলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে বলে অভিযোগ করেন মমতা।  

এ প্রসঙ্গে শহীদ সমাবেশ থেকে দলনেত্রীর বার্তা, তৃণমূলের নামে টাকা তুললে থানায় জানান। নিজেরাই থানায় ধরে নিয়ে যান।

আগামী বছরেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। ঠিক তার পরের বছর ‘২৪-এ লোকসভা নির্বাচন। তার আগে এবারের একুশের সভা মঞ্চে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজোট হওয়ার ডাক দিলেন মমতা। সব ধর্মকে এক সঙ্গে নিয়ে চলার অঙ্গীকারবদ্ধ হন তিনি। দিল্লি দখল করতে মঞ্চ থেকে স্লোগান দেন মমতা।  

‘জয় বাংলা দিচ্ছে ডাক, জয় ভারত বেঁচে থাক। ’ দেশ বিপদে আছে। সবাইকে একসঙ্গে বিজেপি মুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলার রাজনীতিতে মমতার উপস্থিতি জানান দিয়েছিল ২৯ বছর আগের ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই। ওই সালে যুব কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি ছিলেন মমতা। ক্ষমতায় তখন বাম সরকার। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। নির্বাচনে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করার দাবিতে ২১ জুলাই রাইটার্স বিল্ডিং (তৎকালীন প্রশাসনিক ভবন) অভিযানের ডাক দেন মমতা।  

১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই সকাল ১০টা থেকে রাইটার্স বিল্ডিং অভিমুখী জমায়েত শুরু হয়। রাইটার্স বিল্ডিংয়ের দিকে এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। শুরু হয় পুলিশের সংঘর্ষ। পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইট-পাথর, বোমা বৃষ্টি। সেই উত্তেজনার আঁচ ছড়িয়ে পড়ে গোটা মধ্য কলকাতায়। পুলিশের ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের তাড়া খেয়ে পুলিশের পদস্থ কর্তারা পালাতে থাকেন। পরিস্থিতি হাতের নাগালে যেতে গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৩ জন মারা গেছে। ওই ঘটনার ব্যাপক রাজনৈতিক মাইলেজ পায় মমতা। হয়ে ওঠেন বাম সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান মুখ। পরের বছর থেকেই তার উদ্যোগে শুরু হয় ‘শহীদ দিবস’ পালন। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করেন মমতা। তৃণমূলের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি হয়ে ওঠে ২১ জুলাই পালন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।