কলকাতা: শনিবার ২১ কোটি রুপি উদ্ধারের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে ২০ কোটি রুপি উদ্ধার করেছে ইডি। বুধবার (২৭ জুলাই) রাতের শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, টাকার পরিমান আরো বাড়তে পারে, এখন গোনা চলছে।
এদিন উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘরিয়ার ক্লাবটাউন আবাসনের দুটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় ইডি-র গোয়েন্দারা। রীতিমতো দরজার তালা ভেঙে সেখানে প্রবেশ করেন ইডি কর্তারা। এরপরই ওই আবাসনের ৫ নম্বর ব্লকের ৮-এ ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমান অর্থের হদিশ মেলে।
টাকার সন্ধান পাওয়া মাত্র এসবিআই ব্যাঙ্কের হেড অফিস থেকে আনা হয় চারটে বড়মাপের টাকা গোনার মেশিন। জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত নগদ ২০ কোটি উদ্ধার হয়েছে। তবে গোনার কাজ এখন চলছে।
পাশাপাশি ইডি সূত্রে জানা যায়, অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে প্রচুর স্বর্ণ, রূপোর কয়েন ও জমির দলিল মিলেছে। আবাসনের ফ্ল্যাটটি সিল করে দিয়েছে ইডি।
গত শনিবার (২৩ জুলাই) পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের কলকাতার ডায়মন্ড সিটি আবাসনের ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে ২১ কোটির বেশি রুপির সন্ধান পেয়েছিল ইডি। সাথে পাওয়া গিয়েছিল, ৭৯ লাখ রুপির স্বর্ণের গহনা, বিদেশি মুদ্রা, সরকারি স্ট্যাম্প লাগানো খাম-সহ নানান নথি। টুইট করে সেই ছবি প্রকাশ করেছিল ইডি।
তবে এদিন এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া নগদের পরিমাণ ২০ কোটি রুপি বলে ভারতের আর্থিক গোযেন্দা সূত্রের খবর। এর অংক আরো বাড়তে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
খবর চাউর হতেই তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, যথেষ্ট উদ্বেগজনক ঘটনা। মাথা হেঁট হয়ে যাওয়ার মতো বিষয়। এটাকে কোনওমতেই আড়াল করার চেষ্টা আমি করব না। এ একেবারেই কাম্য নয়। এত বিপুল পরিমানে অর্থ এক জায়গায় জমিয়ে রাখা এসব গল্পে হয়। এই ঘটনা আমাদের পক্ষে মোটেও গর্বের নয়, কলঙ্কের। গোটা পরিস্থিতিটাই অস্বাভাবিক। দল সবটাই নজর রাখছে।
পাশাপাশি কুণাল বলেছেন, আমরা দোষীকে আড়াল করার চেষ্টা করব না। এত বিপুল পরিমানে অর্থ কে রাখল, কারা রাখল, কী ভাবে রাখল, তা তদন্ত করে তাদের সম্পর্কে ইডি ন্যূনতম তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করলে দলের শীর্ষনেতৃত্ব যথাসময়ে ব্যবস্থা নেবে।
এদিন বেলঘরিয়ার আবাসনের দুটি ফ্ল্যাট ছাড়াও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাড়িতে ইডি কর্তার হানা দেন। বেলঘরিয়ার আবাসনে তিনটি গাড়িতে আসেন ইডি কর্তারা। সঙ্গে ছিল সশস্ত্রবাহিনী। সেই সময় ওই বাড়িতে ছিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মা মিনতী মুখোপাধ্যায়। তাকে নিচে নেমে যেতে বলেন গোয়ন্দারা। শুরুতে নিচে নামতে রাজি ছিলেন না অর্পিতার মা। যদিও পরে এক ইডি কর্তা তাকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামানোর চেষ্টা করেন।
কেন তল্লাশিতে বাধা দিয়েছিলেন অর্পিতার মা? বৃদ্ধা জানিয়েছেন, ইডির গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন শুধু তার সঙ্গে কথা বলবেন। সেক্ষেত্রে দোতলায় বসেই তা সম্ভব ছিল। পরে তল্লাশির কথা গোয়েন্দার জানালে আস্তে আস্তে একরোখা মনভাব ছেড়ে নিচে নেমে আসেন অর্পিতার মা মিনতীদেবী। মেয়ের কোনও কাজই তিনি জানেন না বলে দাবি করেছে তিনি।
শিক্ষক দুর্নীতি মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শিল্পমন্ত্রীকে শনিবার (২৩ জুলাই) গ্রেফতার করেছে ইডি। গোয়েন্দাদের ধারণা এই বিপুল পরিমান অর্থ শুধু পাইয়ে দেওয়া সরকারি চাকরি নয়। এর পিছনে আরো বড় কোনো চক্র রয়েছে। তাই সন্ধান চালাচ্ছে ইডি কর্তারা। সব মিলিয়ে এ শিক্ষক দুর্নীতি মামলায় ৪১ কোটি অবৈধ রুপির হদিশ পেয়েছে ইডি কর্তারা। যার জেরে যথেষ্ট অস্বস্তিতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।
বাংলাদেশ সময়: ০০২২ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২২
ভিএস/এনএটি