কলকাতা: ১২ দিন ভারতের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা-ইডির হেফাজতে থাকার পর ফের শুক্রবার (৫ আগস্ট) পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতাকে আদালতে তোলা হবে। স্থানীয় সময় দুপুর ২টার পর কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের অন্তর্গত নগর দায়রা আদালতে তোলার কথা রয়েছে।
২৩ জুলাই পার্থ-অর্পিতাকে গ্রেফতারের পর ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় ইডি। এরপর বুধবার (৩ আগস্ট) আদালতে তোলা হলে আরও দুদিন রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দেন নগর দায়ের আদালতের বিচারক জীবন সাধুখা। সেই অনুযায়ী, আজ সকালে দুদিন শেষ হয়েছে।
তবে ইডি সূত্রে জানা গেছে, পার্থ-অর্পিতার জুডিশিয়াল কাস্টডি (জেসি) চাইতে পারে তারা।
ইডি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) দফায় দফায় আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পার্থ এবং অর্পিতাকে। কিছু কথার অমিল থাকলেও বেশিরভাগ কথারই সামঞ্জস্য পেয়েছিল। ইডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অর্পিতা মুখোপাধ্যায় জেরায় সহযোগিতা করলেও কোনোভাবে সহযোগিতা করছেন না সাবেক শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এরপর দুজনকে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করে ইডি। সেখানে প্রথমে পার্থ, অর্পিতাকে চেনেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দেন। পরবর্তীতে একাধিক নথি দেখে চুপ হয়ে যান।
গত বুধবার (৩ আগস্ট) আদালতে তোলা হলে ইডির আইনজীবী এসভি রাজু বিচারককে বলেছিলেন, পার্থ ও অর্পিতা দুজনেই যে পার্টনারশিপে কাজ করেছেন তার একাধিক প্রমাণ তাদের কাছে আছে। মোট ৯টি সম্পত্তি পার্থ-অর্পিতার যৌথ নামে কেনা রয়েছে বলে ইডির পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি অর্পিতার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, জীবনবীমাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে নমিনি হিসেবে রাখা হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম। সেসব দেখিয়ে ইডি আজ আদালতে বিচারকের কাছে জেসির আবেদন করতে পারেন।
তাদের জেল হেফাজতে রাখা হোক এবং জেলে গিয়ে যাতে জেরা করা যায় তার অনুমতিও ইডিকে দেওয়া হোক- এমনই আবেদন ইডির পক্ষ থেকে থাকবে বলে জানা যাচ্ছে। তাদের তদন্তের কাজ এখনও শেষ হয়নি বলেই বিচরককে জানাবে ইডি।
পাশাপাশি ইডির পক্ষ থেকে পার্থর জামাতাকে আমেরিকা থেকে কলকাতায় তলব করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পরিবারের সহযোগিতায় শিক্ষক নিয়োগের নামে অবৈধ অর্থ বিদেশেও পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (৩ আগস্ট) শিল্পমন্ত্রীর আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস বলেছিলেন, ২৩ জুলাই থেকে ইডির হেফাজতে পার্থবাবু আছেন। ওনার নামে একটাও অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেনি। আমার মক্কেল অসুস্থ। তদন্তে ইডি তার ব্যাপারে কোনো ডকুমেন্ট পায়নি। ৭২ বছর বয়স ওনার, তিনি রাজ্যর দায়িত্বশীল নাগরিক। শাসকদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এখন নেই। তাই তিনি এখন আর প্রভাবশালীও নন। আদালত যখন ডাকবে তখন তিনি চলে আসবেন। দয়া করে জামিন দিন।
ইডির আইনজীবী বলেছিলেন, দুই অভিযুক্ত তারা যা কিছু করেছে সবকিছু পার্টনারশিপে। এরকম বহু সম্পত্তির হদিশ পেয়েছি। প্রতিদিন এরকম নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছি। প্রমাণ নেই এটা সত্য নয়।
বিচারক জীবন সাধুখা আজ কি রায় দেয় সেদিকেই সবাই তাকিয়ে।
ইতোমধ্যে কলকাতার টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ায় অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে ৫৫ কোটি ৪৩ লাখ রুপি উদ্ধার করেছে ইডি, পাশাপাশি ৬ কেজি স্বর্ণ, রাশি রাশি রুপার মুদ্রা, মিলেছে প্রচুর সম্পত্তির দলিলও। অর্পিতার ব্যাঙ্কে পাওয়া গেছে ৮ কোটি রুপি। এরপর থেকে প্রকাশ্যে আসছে একের পর এক সম্পত্তির খবর। বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, গাড়ির যে তালিকা এখনও পর্যন্ত উঠে এসেছে। সবমিলিয়ে উদ্ধার হওয়া সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি রুপির কম নয় বলে ইডির ধারণা। পাওয়া গেছে একাধিক ভুয়া কোম্পানি। মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুটি ডায়েরির উদ্ধার করেছে ইডি। তাতে কোন কোন ব্যক্তি ও জায়গা থেকে কত টাকা আসত এবং যেত তার তথ্য মিলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫ আগষ্ট, ২০২২
ভিএস/এসএ