কলকাতা: প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি ট্রলার। ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী (আইসিজি), স্থানীয় মৎস্যজীবী এবং স্থানীয় পুলিশের তৎপরতায় সেসব ট্রলার থেকে ৬০ বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এসব ট্রলার বাংলাদেশ থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু ১৭ আগস্ট সন্ধ্যার পর থেকেই আবহাওয়া অবনতি হতে শুরু করে, তা চলে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত।
দুদিন প্রবল বর্ষণের সঙ্গে ঝড়ের দাপটে উত্তাল হয়ে ওঠে সমুদ্র। ফলে মাঝ সমুদ্রে ভয়ংকর দুর্যোগের সম্মুখীন হয় মৎস্যজীবীরা। অনেক ট্রলার ডুবে যায়, কারও ট্রলার ফুটো হয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। এমন অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে সমুদ্রে ভাসতে থাকেন তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ মৎস্যজীকে উদ্ধার করে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের প্রচেষ্টাতেও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করা হয়। শেষ খবর অনুযায়ী, দুই বাংলাদেশি মৎস্যজীবী এখনও নিখোঁজ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, পানির তোড়ে ওই দুজনের মৃত্যু ঘটতে পারে।
সোমবার (২২ আগস্ট) পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় প্রশাসন এবং ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী (আইসিজি) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে আটকে পড়া ৬০ জনের বেশি বাংলাদেশি মৎসজীবীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি মৎস্যজীবী জামাল সরদার জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের ট্রলারটি সমুদ্র ডুবে গেলে তারা ভাসতে থাকেন। এরপর তারা ভাসতে ভাসতে ভারতীয় জলসীমার মধ্যে ঢুকে পড়েন। পরে ভারতীয় মৎস্যজীবীরাই তাদের উদ্ধার করেন। তাদের জানান, শতাধিক বাংলাদেশি ট্রলার এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরেক মৎস্যজীবী ফরহাদ হোসেন জানান, গত ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের বরগুনা জেলার তালতলী থানার অধীন পাথরঘাটা থেকে ইলিশ মাছ ধরতে সাগরের উদ্দেশ্যে রওনা হই। ১৭ তারিখ বিকেল পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো ছিল। এরপর থেকেই আবহাওয়া খারাপ হতে থাকে। আমরা সে সময় মোংলা বন্দরের কাছে আশ্রয় নিই। কিন্তু ঝড়ে আমাদের নৌকাটি ফুটো হয়ে যায়, আমাদের যে শুকনো খাবার ছিল সেগুলো পানিতে ভেসে যায়। এ অবস্থায় আমরা কোনোমতে মানববন্ধন করে ভাসতে থাকি। কিন্তু তারপরেও আমাদের হাত ছুটে দুইজন সহকর্মী ভেসে অন্যদিকে চলে যায়।
গত শনিবার (২০ আগস্ট) অভিযান চালিয়ে প্রথমে ১০ বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী (আইসিজি)। রোববার (২১ আগস্ট) ফের উদ্ধার করা হয় আরও ১৭ জনকে। জানা যায়, ওই মৎস্যজীবীরা ১৬ আগস্ট বাংলাদেশের মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে বের হয়েছিল। এরপর ১৯ আগস্ট মাঝ সমুদ্রে তারা সবাই ঘূর্ণিঝড়ের মুখে পড়েন।
উদ্ধার কাজ এখনো চলছে। গত দুদিনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর যেসব মৎস্যজীবী এখনো নিখোঁজ বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাদের খোঁজেই গভীর সমুদ্রে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে আইসিজি। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলার থানাগুলোকেও নজরদারিতে থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, দুর্যোগের সময় থেকেই একদিকে আকাশ পথে অনুসন্ধানের কাজ চালাচ্ছিল ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর ডর্নিয়ার এয়ারক্রাফট। অন্যদিকে, গভীর সমুদ্রের বিচ্ছিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছিল বাহিনীর ২টি উদ্ধারকারী জাহাজ আইসিজিএস আনমোল এবং আইসিজিএস ভরত। এরপরই কার্যত নাটকীয়ভাবে ওই মৎস্যজীবীদের উদ্ধার করা হয়। এরপর তাদেরকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়ায় নিয়ে আসা হয় এবং রোববারই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শিগগিরই তাদের বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২২
ভিএস/এসআইএস