কলকাতা: শারদীয় দুর্গাপূজা শেষ হতে না হতেই চলে এসেছে লক্ষ্মীপূজা। আগামী রোববার (৯ অক্টোকর) কোজাগরি লক্ষ্মীপূজার আগে শনিবার (৮ অক্টোবর) কলকাতার বাজার দর আকাশ ছোঁয়া।
সনাতন পঞ্জিকা মতে, চলতি বছরের ৮ অক্টোবর রাত ৩টা ২৯ মিনিট ৪২ সেকেন্ড থেকে শুরু করে ৯ অক্টোবর রাত ২টা ২৫ মিনিট ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত পূর্ণিমা তিথি থাকবে। ঘরের শ্রীবৃদ্ধির জন্য পশ্চিমবাংলার সব বাড়িতেই এ পূজার আয়োজন করে থাকে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আর তা করতেই কলকাতার আমবাঙালির নাভিশ্বাস উঠেছে।
সবজি থেকে শুরু করে ফলের বাজার সবেরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। আগুন দাম ফুল ও প্রতিমারও। উৎসবের মৌসুমে বাজার করতে গিয়ে ছ্যাকা খাওয়ার জোগাড় উৎসব প্রিয় বাঙালির। দুর্গাপূজায় বৃষ্টির কারণে এ বছর সবজি থেকে ফলের বাজার ছিল অগ্নিমূল্য। সেই ছোঁয়া রয়েছে লক্ষ্মীপূজাতেও।
কলকাতার একাধিক জনপ্রিয় বাজার ঘুরে দেখা গেছে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি। লক্ষ্মীপূজা মানেই সবাই খিচুড়ি ও পাঁচমেশালি সবজি ভোগের আয়োজন করে থাকেন। সেখানে আলু কেজিপ্রতি ৪০-৩০ রুপি। প্রতি কেজি বেগুন ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, কুমড়া ৫০ টাকা। ফুলকপি জোড়া (ছোট) ৫০-৬০ রুপি, ফুলকপি জোড়া (বড়) ১০০ রুপি, পটল প্রতি কেজি ৫০ রুপি, গাজর ১০০ রুপি, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৪০ রুপি, কাকরোল প্রতি কেজি ৩৫ রুপি, ঝিঙে ৬০ রুপি। প্রতি কেজি শসা ৪০-৫০ রুপি, ছোট লেবু প্রতি পিস ৫-৭ রুপি, আদা প্রতি কেজি ২২০ রুপি, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১২০ রুপি, সিম ১০০ রুপি, বিনস ১২০ রুপি।
ফলের মধ্যে আপেল ১২০ রুপি কেজি। কমলা লেবু, মুসম্বি ও মাল্টা প্রতি পিস ২০-২৫ রুপি করে। নাশপাতি ১০০-১২০ রুপি প্রতি কেজি, পেয়ারা ১২০-১৪০ রুপি করে কেজি। আঙুর প্রতি কেজি ২২০ রুপি। বেদানা ১৮০-২০০ রুপি কেজি। এছাড়া পানিফল প্রতি কেজি ১০০ রুপি, কলা এক ডজন ৬৫-৭০ রুপি। এর সঙ্গে নারিকেল। যেই ফলের নাড়ু ছাড়া পূজাই সম্পূর্ণ হয় না। সেই প্রতি পিস নারিকেলের দাম ৫০ থেকে ৭০ রুপি। যা কিনতে গিয়ে ঘাম ছুটছে সবার।
মাছ বাজারও অগ্নিমূল্য। মুলত বাঙালিরা পূজায় মাছ ব্যবহার করে থাকেন। অর্থাৎ যাদের শেকড় বাংলাদেশ। আর যারা পশ্চিবঙ্গবাসী অর্থাৎ ঘটি তারা নিরামিষি পূজায় বিশ্বাসী। সেই মাছ বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ ১৮০-৩০০ রুপি, কাতলা প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ রুপি। ভেটকি প্রতি কেজি ৬০০ রুপি। পূজার সময় বাংলাদেশের ইলিশের খোঁজ পড়ে বেশি কিন্তু এবার নেই। দেশি ইলিশ প্রতি কেজি ১৫০০-১৮০০ রুপি। এছাড়া মলা মাছসহ যেকোনো ছোট মাছ মৌরোলা ৩০০ রুপি নিচে নয়।
করোনার বিধিনিষেধের সময় গত বছর সেভাবে ব্যবসা হয়নি। এবারে ধনদেবী মুখ তুলে তাকাবেন এ আশায় প্রতিমার দামও বেশি। প্রতিমা বিক্রেতা সমর পাল বলেন, গত বছর করোনার সময় সেভাবে ব্যবসা হয়নি। এবার বাড়তি মুনাফা লাভের আশায় প্রায় ২৫০টির মতো প্রতিমা তুলেছি বিক্রির জন্য। গত বছর থেকে প্রতিমার দাম খানিক চড়া, প্রতিমার সাজ-সজ্জার দাম বেড়েছে। তবে এ একটা দিন ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপূজা। চলতি বছর ভালো ব্যবসার আশা করছি।
দুবছর করোনা থাকায় আর্থিক মন্দার কারণে বহু পরিবার লক্ষ্মীপূজা সেভাবে করতে পারেনি। কিন্তু চলতি বছর পূজার চাহিদা বেড়েছে। যে কারণেই কলকাতার বাজারদর অগ্নিমূল্য। এমনটাই মত ক্রেতাদের। তাদের মতে, উপায় তো নেই, নিয়ত যখন পরিবার করেছে তখন আর ছোট করে নয় বড় আকারেই আয়োজন।
অর্থাৎ পকেটে ছ্যাঁকা লাগলেও ধনদেবীর আরাধনায় কোনও খামতি রাখতে চায় না উৎসব প্রিয় কলকাতার বাঙালি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২২
ভিএস/আরবি