কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। বিশেষ করে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় ডেঙ্গু সমস্যা মাকড়শার জ্বালের মতো বিস্তার করছে।
ধীরে ধীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের উত্তরের জেলাগুলোতেও। বিশেষ করে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে মতো জেলাগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে উত্তর কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার। তার নাম অনির্বাণ হাজরা।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাওড়া জেলার বাসিন্দা অনির্বাণ হাজরা (৪২), পহেলা নভেম্বর বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) তার প্লাটিলেট ১৬ হাজারে নেমে যায়। পরে পরিস্থিতি স্থিতিশীলও হয়। কিন্তু শুক্রবার সকালে ফের কমে যায় প্লাটিলেট। রক্তচাপজনিত সমস্যা দেখা দেয়। ফলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া অচল হতে থাকলে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
পরিবার সূত্রে খবর, করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অনির্বাণ। তবে দীর্ঘ চিকিৎসার পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। চিকিৎসকদের মতে, করোনার কারণে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করে।
এদিকে বৃহস্পতিবারই ‘ডেঙ্গু দমনে ব্যর্থ প্রশাসন’ অভিযোগ তুলে কলকাতা করপোরেশন অভিযানে নামে বিজেপি। সেই অভিযান ঘিরেই কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের একাংশ। মিছিলে পুশিল বাধা দিলে বিজেপি নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে তুমুল ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। আহত হয় দুই পক্ষ। পরে টেনে-হিঁচড়ে বিজেপি নেতাকর্মীদের সরায় পুলিশ।
শহরে ডেঙ্গু সংক্রণ বেড়ে চললেও হেলদোল নেই কলকাতা করপোরেশনের- এমনই অভিযোগ বিজেপির। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন ডেঙ্গু তথ্য গোপন করছে। ডেঙ্গুর কারণে অনেকের মৃত্যু হলেও ‘ডেথ সার্টিফিকেটে’ডেঙ্গু না দেখিয়ে অন্য তথ্য দেখানো হচ্ছে।
বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, কয়েক মাসের মধ্যে কলকাতায় ডেঙ্গু যেভাবে বেড়েছে, তাতে রাজ্য সরকার উদাসীন। বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। কলকাতাতেই ৫০ জন মারা গেছেন। করোনার সময় যেভাবে রাজ্য সরকার তথ্য কারচুপি করেছিল, ডেঙ্গুর বেলায়ও তাই হচ্ছে। কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, কতজন মারা গেছেন, কেউ জানে না। রাজ্য সরকার তথ্য লোপাট করছে।
তবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কলকাতা করপোরেশন চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখছে না। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ওয়ার্ডগুলো। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও জানান, ডেঙ্গু পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। নালা নর্দমায় জন্মায় না। নোংরা পানি পরিষ্কারের জন্য সরকার আছে। কিন্তু সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় বাসার এসি, ফ্রিজ, ফুলের টবে জমা পানি বা ছাদে জমা পানি পরিষ্কার করবে। এটা নাগরিকদের করতে হবে। সেই সচেতনতার কাজ প্রশাসন করছে।
তিনি আরও জানান, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা, রোগির রক্ত খেয়ে ডিম পাড়লে তার থেকে কমপক্ষে ১০০ মশার জন্ম নেয়। নজর রাখা দরকার, মশা যাতে ডেঙ্গু রোগির আশপাশে না আসে। সবাই মশারি ব্যবহার করুন। এছাড়া মশার চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটেছে। আগে বদ্ধ জায়গায় ডিম পাড়তো এখন খোলা স্থানেও ডিম পাড়ছে। বিশাল উন্মুক্ত স্থানে ড্রোন দিয়ে মেডিসিনে এডিস মশার লার্ভা মারার কাজ চলছে।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। তবে সচেতন থাকতে হবে। এই সময় সামান্য জ্বরজারি হলে নিজেরাই ট্রিটমেন্ট করতে যাবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বেশিরভাগ রোগি পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার পর চিকিসকের পরামর্শ নিচ্ছে, হাসপাতালে আসছেন। এভাবেই নিজেদের বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এডিস মশা নিজেদের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এডিস মশার ডিম তিন বছর জীবিত থাকতে পারে। পানির সংস্পর্শে এলেই ডিম সক্রিয় হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, ০৪ নভেম্বর, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড