কলকাতা: ২০১৪ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হাজার হাজার প্রার্থী নিয়োগের দাবি জানাতে বুধবার (৯ নভেম্বর) কলকাতার রাজপথে নামেন। বিকেল গড়াতেই আচমকা এসপ্ল্যানেড, রবীন্দ্রসদন চত্বরে গাড়ি থামিয়ে সড়কে নেমে পড়েন তারা।
আন্দোলনকারীদের রুখতে মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। শুরুতেই চাকরিপ্রত্যাশীদের পুলিশ বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। রক্ত ঝড়ে রাজপথে। রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কলকাতার রবীন্দ্রসদন সংলগ্ন এক্সাইড মোড়।
বিক্ষোভকারীদের আটক করতে একাধিক প্রিজন ভ্যান আনে পুলিশ। কিন্তু প্রিজন ভ্যানের চাকার নিচে শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন চাকরিপ্রার্থীরা। তারা স্লোগান দেন—‘হয় নিয়োগ দাও, নাহলে মৃত্যু দাও’। আন্দোলনকারীদের সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খায় পুলিশ বাহিনী।
কলকাতা পুলিশের ডিসি সাউথ আকাশ মাঘেরিয়ার নেতৃত্বে কঠোর হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু হয়। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে চলে আন্দোলনকারীদের ধ্বস্তাধস্তি। শরীরের একাধিক জায়গায় ক্ষত-বিক্ষত হন আন্দোলনকারীরা। তাদের শরীরের রক্ত ঝরে পড়ে রাজপথে।
রবীন্দ্রসদনের সামনে যখন এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। ঠিক তখন জানা গেলো বিক্ষুব্ধদের একদল পৌঁছে গেছে ক্যামাক স্ট্রিটে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের সামনে। চাকরিপ্রার্থীরা অভিষেকের সঙ্গে দেখা করার আর্জি জানান। দেখা না করতে দেওয়ায় সড়কে বসে পড়েন সবাই। অনেকে শুয়ে পড়েন সড়কের মধ্যখানে, স্লোগান দেন—নিয়োগ চাই।
দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে চলে খণ্ডযুদ্ধ। বলপ্রয়োগ করে পুলিশ। মাথা ফাটে এক চাকরিপ্রার্থীর। এমনকি এক চাকরিপ্রার্থীর হাত কামড়ে দেন পুলিশের এক নারী সদস্য। বুধবার এই দৃশ্যই দেখা গেল ক্যামাক স্ট্রিটে।
পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে বহু চাকরিপ্রার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। রক্তাক্ত হন অনেকেই। এসবের মধ্যেই পুলিশ প্রিজন ভ্যানে করে তুলে নিয়ে যায় বহুজনকে।
এক আন্দোলনকারী বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি রাখছেন না। পুলিশ সদস্যরা মানুষ নয়! অকথ্য নির্যাতন করেছে। আমার ২০১৪ থেকে টেট পাস করে বসে আছি। আর কতদিন থাকবো। এবার নিয়োগ চাই। নিয়োগ ছাড়া জায়গা ছাড়ব না।
অপর এক প্রার্থী বলেন, প্রতিবার পুলিশ দিয়ে আমাদের তুলে দেওয়া হচ্ছে। এবার আর ফিরব না। ২০১৪ সালের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া না হলে এখান থেকে সরব না। বহু বিক্ষোভকারীকে প্রিজন ভ্যানে তোলার পরও তারা নেমে এসে ফের সড়কে বসে পড়েন। সব মিলিয়ে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কলকাতা!
সম্প্রতি ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণরা সল্টলেকের করুণাময়ীতে রাস্তায় বসে টানা চারদিন বিক্ষোভ করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তুলে দিয়েছিল। সেদিনও রক্ত ঝরেছিল রাজপথে, যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। ফলে এ দিন কিছুটা কৌশলেই কলকাতার রাজপথে নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে পথে নেমেছিলেন প্রার্থীরা। এদিনও ঝড়ল রক্ত। চলল ধস্তাধস্তি। পথ চলতিদের মত, এভাবে আর কতদিন?
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ