কলকাতা: কাছাকাছি চলে এসেছে ভারতের গুজরাট রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। প্রথম ধাপে ভোট হবে আগামী ১ ডিসেম্বর ও দ্বিতীয় ভোট হবে ৫ ডিসেম্বর।
ভারতীয় ক্রিকেটার রবীন্দ্র জাদেজার স্ত্রী রিভিবা জাদেজাকে প্রার্থী করছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি (সিইসি) বৈঠকে এ তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। এদিন দলটির দলীয় কার্যালয় থেকে প্রার্থীদের তালিকায় প্রথম নাম ঘোষণা করা হয় জাদেজা পত্নীর। তিনি গুজরাটের জামনগর-উত্তর কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ভুপেন্দ্র প্যাটেল ঘাটলোডিয়া কেন্দ্রের টিকি পেয়েছেন। কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসা জনপ্রিয় নেতা হার্দিক প্যাটেল ভিরামগামকে কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। মোরবি কেন্দ্র থেকে টিকিট পেয়েছেন সেই কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক, যিনি ঝুলন্ত সেতু বিপর্যয়ের সময় নদীতে ঝাঁপিয়ে অনেকের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন।
প্রায় ২৭ বছর ধরে গুজরাটে টানা ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। এ প্রথম দলের ৩৮ জন বিদায়ী বিধায়ককে এবারের নির্বাচনে টিকিট দেয়নি বিজেপি। টিকিট পাননি দলের বহু বর্ষীয়ান নেতাও। বিরোধীদের কটাক্ষ, এভাবে রাজ্যের ২৭ বছরের শাসনে ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া’কে প্রতিরোধ করতে চাইছে বিজেপি। গুজরাট মূলত, ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের বাস ও মোদীর নোট বাতিল বিষয়টাকে খুব ভালোভাবে নেয়নি। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরে নোট বাতিলের ঘটনা চলতি বছর ৬ বছর পূর্ণ হল। বিরোধীরা প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া তুলে সেই নোট বাতিলকে হাতিয়ার করেছে।
বিরোধীদল আম আদমি পার্টি (আপ) রিজার্ভ ব্যাংকের তথ্য তুলে জানিয়েছে, নোট বাতিলের ছয় বছরেও ঠেকানো যায়নি জাল রুপির রমরমা। বরং তা উত্তরোত্তর বেড়েছে। পরিস্থিতি সামলা দিতে দিশাহারা স্বয়ং রিজার্ভ ব্যাংক। তাদের হিসেব অনুযায়ী, গত অর্থবর্ষে ৫০০ রুপির জাল নোটের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। ২০০০ রুপির নকল নোট বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। সার্বিকভাবে বিগত আর্থিক বছরে জাল রুপির বাড়ার হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশে। অথচ এ জালিয়াতি কারবার বন্ধ করাই ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিল সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য।
সেই লক্ষ্য তো এখন দূর অস্ত। সঙ্কট মোকাবিলায় তিন মাস অন্তর সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও পোস্ট অফিসে থাকা নগদ যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক। বৈধ নোটের প্রতিটি চিহ্ন এবং প্রতীক সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিঃসন্দেহ হলেই তবে গ্রাহককে তা দেওয়া যাবে বলে নির্দেশ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক।
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ জাল রুপির নোট উদ্ধার হয়েছিল। পরবর্তী চার বছরে বাজেয়াপ্ত হওয়া নকল রুপির পরিমাণ প্রায় ১৯ লাখ। শুধু ৫০০ ও ২০০০ নয়, ১০ ও ২০ রুপির জাল নোটও বাজারে রয়েছে। তবে সংখ্যায় সামান্য। যেখানে ৫০০ রুপির জাল নোট বাড়ার হার ১০০ শতাংশের বেশি সেখানে ১০ ও ২০ জাল রুপি বেড়েছে যথাক্রমে ১৬ শতাংশ।
যত্রতত্র হানা দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে জাল নোট চক্র ও কারখানা। জালিয়াতির রমরমা ঠেকাতে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ২০০০ রুপির নোটের সার্কুলেশন। বাজারে ছাড়া তো প্রায় হচ্ছেই না। এটিএম ও ব্যাংকের শাখায় মূলত ৫০০, ২০০ ও ১০০ রুপির নোট পাওয়া যাচ্ছে।
যদিও জাল নোটের বিষয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রিজার্ভ ব্যাংকের পাশাপাশি একাধিক বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামী সপ্তাহে ‘সন্ত্রাসে অর্থ বরাদ্দ’র বিরুদ্ধে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজিত হতে চলেছে ভারতে। প্রথম দু’বছর তা হয়েছিল প্যারিস ও মেলবোর্নে। এবার সেই সম্মেলন দিল্লিতে হবে। যেসব দেশ থেকে সরকারি কিংবা সংশ্লিষ্ট সংস্থা জঙ্গি সংগঠনকে আর্থিক সহায়তা করে, তাদের একঘরে করাই এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য। সেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে আগ্রহী ভারত।
তবে এবার গুজরাটের সমীকরণ বদল হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ দিল্লি ও পাঞ্জাব জয়ের পর আম আদমি পার্টি গুজরাটে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করেছে। আসন্ন গুজরাট নির্বাচনকে পাখির চোখে দেখছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। একইভাবে কংগ্রেস। ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপিও। সেটাই ফুটে উঠছে বিজেপির প্রার্থী তালিকায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২২
ভিএস/আরবি