ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

কামড়-কাণ্ডে তৎপর কলকাতা পুলিশ, জেরার মুখে ইভা-অরুণিমা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২২
কামড়-কাণ্ডে তৎপর কলকাতা পুলিশ, জেরার মুখে ইভা-অরুণিমা

কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে কলকাতার রাজপথে উত্তাল আন্দোলন দমাতে গিয়ে পুলিশের নারী সদস্য ইভা থাপা কামড়ে দিয়েছিলেন চাকরিপ্রত্যাশী অরুণিমা পালের হাতে। যা নিয়ে এখনও উত্তাল রাজ্যের রাজনীতি।

সমালোচনার ঝড় নানা মহলে। এবার সেই কামড়-কাণ্ডে তৎপর হয়েছে কলকাতা পুলিশের প্রধান সদর দফতর লালবাজার থানা।

আগামী সোমবার লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়েছে অভিযুক্ত পুলিশকর্মী ইভা থাপাকে। একই দিনই ডেকে পাঠানো হয়েছে অরুণিমা পালকেও। একসাথে বসিয়ে দুজনেরই বয়ান রেকর্ড করা হবে। তদন্তের দায়িত্ব পড়েছে ডিসি সাউথ-২-এর বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়ের ওপর। ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১২ নভেম্বর) উত্তর২৪ পরগনার বেলঘরিয়াবাসী অরুণিমা পাল জানিয়েছেন, গত বুধবার গ্রেফতারের পর আহত আন্দোলনকারীদের চিকিৎসার জন্য কলকাতার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে কে কীভাবে আহত হয়েছেন, তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেনি। পরে স্থানীয় সাগর দত্ত হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, মানুষের কামড়ের আঘাতের কথা। সেই মর্মে অরুণিমার কাছে মেডিকেল সার্টিফিকেটও আছে।

তিনি বলেন, পুলিশ কী করবে তা জানি না, তবে যে পুলিশকর্মী আমাকে কামড়ে দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংগঠনের আইনজীবী বিষয়টা দেখছেন। শুধু আমার হাতে নয়, যারা চাকরি পাননি তাদের প্রত্যেকের হাতে এই কামড় পড়েছে। সমাজের ওপর কামড় পড়েছে। আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রত্যাশীরা তাদের নিয়োগের দাবি জানাতে গত বুধবার (৯ নভেম্বর) কলকাতার রাজপথে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীদের রুখতে মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ। চাকরিপ্রত্যাশীদের পুলিশ বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। রক্ত ঝড়ে রাজপথে। রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কলকাতা। স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো শহর। বিক্ষোভকারীদের আটক করতে একাধিক বেসরকারী যানবাহন আনে পুলিশ। কিন্তু সেই বাসের চাকার নিচে শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খায় পুলিশ। শরীরের একাধিক জায়গায় ক্ষত-বিক্ষত হন চাকরিপ্রত্যাশীরা।

কলকাতার রবীন্দ্রসদনের সামনে যখন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিল পুলিশ। ঠিক তখন বিক্ষুব্ধদের একদল পৌঁছে যান ক্যামাক স্ট্রিটে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের সামনে। সেখানেও দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। বলপ্রয়োগ করে পুলিশ। সেখানেই ঘটে কামড়ের ঘটনা। দেখা যায়, অরুণিমা পালকে কয়েকজন পুলিশকর্মী ধরে রেখেছেন, ঠিক তখনই এক নারী পুলিশ সদস্য তেড়ে গিয়ে কামড়ে দেন অরুণিমার হাতে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বদৌলতে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ে। যা ভাইরাল হতেই তুমুল সমালোচনা হয় মমতার প্রশাসনের। শেষমেশ উপর মহলের নির্দেশের পর শনিবারই চূড়ান্ত তৎপরতা দেখিয়েছে লালবাজার থানা। আগামী সোমবার ডেকে পাঠানো হয়েছে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীকে। যিনি এই মুহূর্তে ভর্তি রয়েছেন কলকাতার এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতালে।

ওই পুলিশ সদস্য ইভা থাপার দাবি, তাকে আগে কামড়ে দিয়েছিলেন অরুণিমা, প্রতিহিংসাবশত পরে তিনি তাকে কামড় দেন। অবশ্য অরুণিমার কামড়ের কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট আছে কিনা তা এখন জানা যায়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, যে জায়গায় ঘটনার সূত্রপাত সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হবে। পাশপাশি পুলিশের ক্যামেরাতেও তোলা ভিডিও খতিয়ে দেখা হবে। বয়ান রেকর্ড করা হবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের। সবদিক খতিয়ে দেখেই এগোবে তদন্ত। ডিসি সাউথ-২ বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায় ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জমা দেবেন ডিসি সাউথ আকাশ মাঘেরিয়াকে।

আরও পড়ুন:
চাকরিপ্রার্থীকে পুলিশের কামড়, বিরক্ত মমতা ঘনিষ্ঠ বিদ্বজনের একাংশ

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।