ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিল্প

রাজস্ব ফাঁকি

বিএটিবির ব্যাংক হিসাব জব্দ হতে পারে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০১ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৬
বিএটিবির ব্যাংক হিসাব জব্দ হতে পারে

ঢাকা: মিথ্যা মূল্যস্তর ঘোষণায় ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব জমা দিতে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটিবি) কোম্পানিকে ডিমান্ড নোটিশ (দাবিনামা) দিয়েছে এনবিআর।
 
১২ এপ্রিল এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কমিশনার শাহনাজ পারভীন স্বাক্ষরিত ডিমান্ড নোটিশে রাজস্ব পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


 
ডিমান্ড নোটিশ অনুযায়ী আগামী ২ মাসের মধ্যে রাজস্ব জমা না দিলে বিএটিবি’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে বিএটিবি’র ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হতে পারে।
 
এলটিইউ’র একটি সূত্র বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে বিএটিবি কর্তৃপক্ষ বলছে, আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 
সূত্র জানায়, বিএটিবি পাইলট ও ব্রিস্টল ব্র্যান্ডে নিম্ন মূল্যস্তর দেখিয়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূসক (ভ্যাট) হিসেবে মোট ১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা ফাঁকি দেয়।
 
দুইটি ব্র্যান্ডের সিগারেটে যে কাগজ, তামাক ও উপকরণ ব্যবহার করা হয়, তা মধ্যম মূল্যস্তরের হলেও নিম্ন মূল্যস্তরের অসত্য ঘোষণা দিয়ে রাজস্ব পরিশোধ করেনি।
 
এরমধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এ ফাঁকি দেয়। ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর পৃথক তিনটি দাবিনামায় টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয় এনবিআর।
 
প্রথম দাবিনামায় ৭৯৮ কোটি ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা (রেফারেন্স নং: ১. ফাইল নং. ৪/এলটিইউ-মূসক/ল/৯৭/বিএটিবি/১৩/৯৬২৬)।
 
দ্বিতীয় দাবিনামায় ৬৯৯ কোটি ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯ টাকা (রেফারেন্স নং: ১. ফাইল নং. ৪/এলটিইউ-মূসক/ল/৯৭/বিএটিবি/ ১৩/৯৬২৫)।
 
তৃতীয় দাবিনামায় ৪২৬ কোটি ৫৩ লাখ ৫ হাজার ৬৬১ টাকা (রেফারেন্স নং: ১. ফাইল নং. ৪/এলটিইউ-মূসক/ল/৯৭/ বিএটিবি/ ১৩/৯৬২৭)।
 
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২২ মার্চ একটি দাবিনামা জারি করা হয় (পত্র নং-৪/এলটিইউ, মূসক/লি. অ্যা./৯৮/বিএটিবি/দাবিনামা/২০১৪/১৮৮৬)।
 
রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়নি-এ মর্মে বিএটিবি ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টে পৃথক দুইটি রিট (রিট পিটিশন নম্বর-২৮৪৮/২০১৫ ও ২৮৪৯/২০১৫) করে।
 
২০১৬ সালের ৬ মার্চ আদালত এনবিআরের পক্ষে রায় দিয়ে পাইলট ব্র্যান্ড সিগারেটের রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বিএটিবিকে নির্দেশ দেন।
 
রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রাজস্ব আদায় করতে এনবিআরকে নির্দেশ দেন। তবে ব্রিস্টল ব্র্যান্ডের সিগারেটে একই রাজস্ব জড়িত থাকলেও রায় এখনো হয়নি।
 
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২২ মার্চের ডিমান্ড নোটিশ অনুযায়ী, পাইলট ব্র্যান্ড ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অসত্য ঘোষণায় ফাঁকি দেয়।
 
এরমধ্যে সম্পূরক শুল্ক ৬৫৯ কোটি ২১ লাখ ৪৮ লাখ ১২ টাকা ও মূসক ১৩৯ কোটি ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮০ টাকাসহ মোট ৭৯৮ কোটি ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৯৩ টাকা।
 
তবে আদালত ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত ১০ ও ২০ শলাকা সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ও মূসক হিসেবে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
 
এ টাকা বাদ দিয়ে ৬৯৯ কোটি ৩৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬১ টাকা ৮২ পয়সা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বিএটিবিকে নির্দেশ দেন।
 
পাইলট ব্র্যান্ড মধ্যম মূল্যস্তরে প্রতি প্যাকেটে ১৩ টাকা ৮৬ পয়সা সম্পূরক শুল্ক জমা দেওয়ার কথা থাকলেও নিম্ন মূল্যস্তর দেখিয়ে ৪ টাকা ৭২ পয়সা পরিশোধ করে।
 
সূত্র জানায়, রায় পাওয়ার পর ১২ এপ্রিল এলটিইউ’র কমিশনার শাহনাজ পারভীন স্বাক্ষরিত একটি দাবিনামার মাধ্যমে এ রাজস্ব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
 
বিএটিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নিউ ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা’র ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে এ অর্থ জমা দিতে হবে।
 
এলটিইউ’র একজন অতিরিক্ত কমিশনার বাংলানিউজকে বলেন,‘ডিমান্ড নোটিশ জারি করা হয়েছে। ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে সদুত্তর না পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
 
ডিমান্ড নোটিশ পাওয়া গেছে, আইনজীবীদের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান বিএটিবি’র কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার আনোয়ারুল আজিম।
 
তিনি বলেন,‘ সিগারেটের মূল্যস্তর তো সরকার ঠিক করে দেয়। এরপর তারা যদি বলে কম দেখানো হয়েছে তাহলে তো মুশকিল। ব্যবসার ক্ষেত্রে দাবিনামা হয়, রাজস্ব ফাঁকি নয়। ’
 
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) পরীক্ষায় বলা হয়, দুইটি ব্র্যান্ডের রাসায়নিক পরীক্ষায় একই ফল পাওয়া গেছে। এতে মধ্যম মূল্যস্তরের সব রাসায়নিক ও তামাক রয়েছে।

বিএটিবি’র রাজস্ব ফাঁকি ৭শ’ কোটি টাকা

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৬
আরইউ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।