নাটোর: কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা, আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও নিবিড় পরিচর্যার কারণে চলতি মৌসুমে নাটোরে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এবার বিঘাপ্রতি ৭ থেকে ৮ মণ বাদাম উৎপাদন হয়েছে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন খরচের স্বল্পতা ও অধিক মুনাফার কারণে কৃষকদের মধ্যে বাদাম চাষে আগ্রহ অনেকাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার হেক্টরপ্রতি ফলন ২ টন ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৭ মণ বাদাম।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সাধারণত রবি ও খরিপ এই দুই মৌসুমেই বাদাম চাষ হয়। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত রবি আর জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়কে ধরা হয় খরিপ মৌসুম।
জেলার ৭টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৬০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ জমিতে বাদাম চাষ করেন কৃষকরা। আবাদকৃত ১১৬৬ হেক্টর জমির অধিকাংশ নাটোর সদর উপজেলায়, এর পরিমাণ ৮৩০ হেক্টর। গত মৌসুমে সদরে ৬৯২ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছিল।
নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান জানান, বাদাম চাষে খরচ খুবই কম। বিঘাপ্রতি চাষ, বীজ, সার, শ্রমিক, নিড়াড়ি ও উত্তোলন বাবদ খরচ হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় কমপক্ষে ৭/৮ মণ বাদাম। এতে করে খরচ উঠিয়েও লাভ হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা।
বিলজোয়ানী গ্রামের কৃষক সৈয়দ আলী মাস্টার জানান, তিনি এবার ৪ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করেছেন। শুধু হালতিবিলের পানাউল্লাহ খালের মুখেই অন্তত ৩০০ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। প্রায় সব কৃষকই ৩ থেকে ৪ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। ফলন ও দাম ভাল পাওয়ায় তারা খুশি।
নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার বাদাম চাষি তসলিম উদ্দিন জানান, জমিতে মশুর ডাল উঠলে ওই জমিতে চৈত্র্য মাসে বাদাম চাষ করা হয়। ৩ মাস পরে আষাঢ়ে ফলন পাওয়া যায়।
অপর কৃষক তায়েজ উদ্দিন জানান, আবাদি জমি ছাড়াও পতিত জমিতে তারা বাদাম চাষ করে থাকেন। এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করে ভাল ফলন পেয়েছেন।
নাটোর শহরতলীর তেলকুপি এলাকার কৃষক তমজ্জিদ আলী কয়েক বছর ধরে বাদাম চাষ করছেন। ভাল ফলন হওয়ায় তার বিঘাপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১৫ হাজার টাকার মতো।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. সাইফুল আলম বাংলানিউজকে জানান, মাঠে বিনা-৪, ঝিঙা ও প্রাণ চায়না জাতের চাষাবাদ হয়েছে। বাদাম উত্তোলন প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে লাল ও বড়দানার কারণে আকর্ষণীয় ঢাকা-১ ও ঢাকা-২ বীজ কৃষকদের কাছে অধিক জনপ্রিয়।
এসব বিষয়ে নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দিন আহাম্মেদ বাংলানিউজকে জানান, বাদাম চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। দেশের মানুষের মধ্যে খাদ্য সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে বাদামের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৬
এসআর/জেডএম