ঢাকা: আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই ঈদ-উল আযহা। সারা দেশে অসংখ্য পশু কোরবানি দেওয়া হবে।
এবারও তাই রাজধানীর হাজারীবাগেই কাঁচা চামড়া প্রসেসিং করা হবে। সরকারের আল্টিমেটাম ও আদালতের নির্দেশনা কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। ফলে এবারও দূষণের মধ্যেই থাকছেন হাজারীবাগবাসী।
ট্যানারি মালিকদের সংগঠন ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের ঈদে সব ট্যানারি সাভারে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সম্পূর্ণ স্থানান্তরে আরও কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।
সাভার উপজেলার কান্দিবৈলারপুর ও চন্দ্র নারায়ণপুর এবং কেরানীগঞ্জ উপজেলার চর নারায়ণপুর মৌজার ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক চামড়া শিল্পনগরী। এর ১৭ একর জমিতেই নির্মিত হয়েছে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি)। প্রকল্প এলাকায় ২০৫টি প্লটে ১৫৫টি শিল্প ইউনিটকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্যানুসারে, নতুন চামড়া শিল্পনগরীতে ১২টি ট্যানারি তাদের কার্যক্রম চালানোর জন্য বিদ্যুৎ ও পানিসহ সকল সার্ভিস লাইন স্থাপন করেছে। ১০টি ট্যানারি তাদের ড্রাম বসানোর কাজ শেষ করেছে।
ঈদের আগে প্রাথমিকভাবে ৩০টি ট্যানারি সাভারে উৎপাদনে যেতে পারবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ছোট-বড় ১৫৪টি ট্যানারি স্থানান্তরের কথা ছিলো। বাকি ১২৪টি কবে নাগাদ স্থানান্তরিত হবে তার কোনো টাইমফ্রেম নেই।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) তথ্যানুসারে, শিল্পনগরীতে ১৫৪টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৪টি প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিং আংশিক প্রস্তুত আছে। ১০টি ট্যানারির দৃশ্যমান কোনো কাজই হয়নি। কিছু পাইলিং কাজ শেষ করে বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এরপরও বিসিকের টার্গেট- ঈদের আগেই ৪৮টি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি কাজ শুরু করানো।
ট্যানারি স্থানান্তর না হলেও চামড়া শিল্পনগরীতে নির্মিত সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান (সিইটিপি) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ট্যানারি বর্জ্য পেলেই পরিশোধন কাজ শুরু করতে পারবে সিইটিপি।
তবে ট্যানারির সলিড বর্জ্য ফেলার জন্য এখনো ডাম্পিং স্টেশন করা হয়নি। ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ, ডাম্পিং ইয়ার্ড করতে না পারলে নতুন ট্যানারি শিল্পনগরী ও আশপাশের এলাকায় দূষণের মাত্রা বেড়ে যাবে।
সিইটিপি’র প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল কাইয়ুম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত। ট্যানারি এলেই বর্জ্য দিয়ে কাজ শুরু করতে পারবো’।
তিনি বলেন, ‘এই ঈদে সব ট্যানারি স্থানান্তর হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ১২টির সার্ভিস লাইন দেওয়া হয়েছে এবং ১০টি ট্যানারি তাদের ড্রাম বসানোর কাজ শেষ করেছে। আমরা যতোদূর জানি, ঈদে ৩০টি ট্যানারি নতুন চামড়া শিল্পনগরীতে উৎপাদনে যাবে’।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের দুই সংগঠন মিলিয়ে ৩০টি ট্যানারি ঈদের আগে সাভারে কাজ শুরু করতে পারবে। বাকিগুলো যেতে সময় লাগবে’।
সরকারের ঘোষণা অনুসারে হাজারীবাগে কোনো কাঁচা চামড়া ঢুকতে দেওয়া হবে না। আদালতেরও নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও হাজারীবাগে চামড়া প্রসেসিং করবেন কি-না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে কোনো উপায় নেই। যদি সরকার না দেয় তাহলে তো কিছু করা যাবে না, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে’।
ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন মাহমুদ মাহিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা যতো দ্রুত সম্ভব সাভারে স্থানান্তরের চেষ্টা করছি। তবে এই ঈদে সব ট্যানারি স্থানান্তর সম্ভব হবে না। আশা করি, ঈদের পর পরই অনেকে চলে যাবে’।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৬
এসএম/এএসআর