ফেনী: ফেনী শহরতলীর পাঁচগাছিয়া। বৃহত্তর নোয়াখালীর সর্ববৃহৎ চামড়া বাজার।
নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, মিরসরাই ও চৌদ্দগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ বাজারে পশুর চামড়া আসে।
এবার এ বাজারে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ। যার আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা।
জানা যায়, ফেনী জেলা শহর ছাড়াও উপজেলায় গরু ও ছাগল মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পশু কোরবানি দেওয়া হবে। এসব চামড়া বাজারজাত ও সংরক্ষণের জন্য ফেনীর পাঁচগাছিয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিছিন্নভাবে গড়ে ওঠেছে প্রায় ৫০টি আড়ৎদার প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই চামড়া সংগ্রহ করে আড়ৎদারদের কাছে বিক্রি করেন।
প্রতিবছর কোরবানির ঈদের সময় এসব আড়তে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ চামড়া বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব বাজারে চামড়ার দর না থাকায় এবার বেশ চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া লবণের দাম ও শ্রমিকের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি এবং বিদেশিদের অনাগ্রহের কারণে ব্যবসায়ীরা চরম দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। এছাড়া সীমান্ত দিয়ে পাচারের আশঙ্কা তো রয়েছেই।
এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি-৪) ভারপাপ্ত অধিনায়ক মেজর কাজী ওবায়দুর রেজা বাংলানিউজকে জানান, সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনোভাবেই চামড়া পাচার না হয় সেজন্য কড়া নজরদারি থাকবে। পাচার রোধে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন সড়কে ৪৩টি স্পটে বিজিবি চেকপোস্ট থাকবে।
সরেজমিনে পাঁচগাছিয়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোরবানি পশুর কাঁচাচামড়া সংগ্রহের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।
এ ব্যাপারে পাঁচগাছিয়া বাজারের বড় আড়ৎদার নুর নবী ট্রেডার্সের মালিক নুর নবী মেম্বার বলেন, ‘অন্যবারের তুলনায় এবার বেশি কোরবানি হতে পারে। সে অনুপাতে পশুর চামড়াও সংগ্রহ হবে বেশি। এসব চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করা হবে।
আরিফ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার সিরাজুল হক বলেন, গত বছর প্রতি ফুট চামড়ার দাম ধরা হয়েছে ৮০ টাকা। আর এবার মন্দাভাব থাকায় তা ৩০ টাকায় নেমে এসেছে।
এ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য স্বল্প পুঁজির কিছু লোক মাঠে নামেন। তারা এ চামড়া কিনে বিক্রয় করেন পাঁচগাছিয়া বাজারে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এদের ঠেকাতে মাঠে নেমেছে আড়ৎদারদের একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় খুচরা বিক্রেতারা। ফলে পাঁচগাছিয়ার কোনো ব্যবসায়ী খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি চামড়া কিনতে চান না। গত কয়েক বছরে লাভের আশায় মাঠে নেমে তাই লোকসান গুণতে হয়েছে খুচরা বিক্রেতাদের।
সূত্র আরো জানায়, ওই বাজারের কোনো কোনো ব্যবসায়ী ৫/৭ কোটি টাকা পর্যন্ত সিন্ডিকেটদের মাধ্যমে মাঠে ছাড়েন। কমদামে চামড়া সংগ্রহ করতে ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলের আশ্রয় নেন। ঈদের আগে হঠাৎ করে তারা চামড়ার দাম কমে গেছে বলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নতুন দাম প্রচার করেন। তাদের ধার্যকৃত দামেই খুচরা বিক্রেতাদের গ্রাম থেকে চামড়া সংগ্রহ করতে বাধ্য করেন।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান খন্দকার বাংলানিউজকে জানান, চামড়া পাচাররোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৬
আরবি/এসআর