ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প

পোশাক শিল্পের ইতিহাসে কালো অধ্যায় ‘তাজরীন’

উর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
পোশাক শিল্পের ইতিহাসে কালো অধ্যায় ‘তাজরীন’

চার বছর আগে ২৪ নভেম্বর রাতে কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছিলো আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের আকাশ। জ্বলন্ত আগুনে ছাই হয়েছিলেন ১১৩ জন শ্রমিক। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছিলো নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ।

ঢাকা: চার বছর আগে ২৪ নভেম্বর রাতে কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছিলো আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের আকাশ। জ্বলন্ত আগুনে ছাই হয়েছিলেন ১১৩ জন শ্রমিক।

স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছিলো নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ। সেদিনের তাজরীন ট্র্যাজেডির ঘটনা দেশের শিল্পের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়েই রয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  
 
নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তালাবদ্ধ করে আগুনে পুড়িয়ে ১১৩ জন শ্রমিককে ‘হত্যার’ ঘটনা অবশ্যই বাংলাদেশের শিল্পের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে রয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়াজ ফাউন্ডেশনের পরিচালক শ্রমিকনেত্রী নাজমা আকতার।  
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগুন লাগার পরে যেসব শ্রমিকরা জীবন নিয়ে গুরুতর আহত হয়ে ফিরে এসেছিলেন, তারাই বলেছেন, কিভাবে মালিকপক্ষ আগুন লাগার পর কারখানার কলাপসেবল গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তারা জানতেন যে, অস্বাভাবিক আগুনে মানুষগুলো পুড়ে মরবেন। তারপরও গেট খুলে দেননি’।  

‘এটিকে কোনো দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া বলা যাবে না, এটি হত্যা। বাংলাদেশের শিল্পের ইতিহাসে এটি একটি কালো অধ্যায়’।  
 
‘শুধু বাংলাদেশের শিল্পের ইতিহাসেই নয়, পুরো বিশ্ব দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তাজরীনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্মরণ করলেও আমাদের দেশে কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেন কিন্তু খোলা বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন’- বলেন নাজমা আকতার।  

তাজরীন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুদণ্ডও দাবি করেন তিনি।  
 
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা বাংলানিউজকে, ‘আগুন লাগার পর পরই আমাদের শ্রমিকরা জীবন বাঁচাতে যখন ছোটাছুটি করেছেন, তখন বলা হয়েছে যে, মহড়া চলছে! কি অস্বাভাবিক ঘটনা! এটি একটি হত্যাকাণ্ড। দেশের ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য হত্যাকাণ্ড’।  

‘বাংলাদেশ যতোদিন থাকবে, ততোদিন তাজরীন ট্র্যাজেডি একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে’।  
 
শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন সমাজবিজ্ঞানীরাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে পোশাক শিল্পের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু এ দেশের ইতিহাসে তাজরীন অগ্নিকাণ্ডকে কালো অধ্যায় বললে ভুল হবে না। কারণ, ঘটনাটি ঘটার পর নানা তদন্তে উঠে এসেছে যে, কিভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী শ্রমিকদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে’।  
 
দায়ী ব্যক্তিদের সঠিক সাজাদানের মাধ্যমে ইতিহাসে অন্য দৃষ্টান্ত অর্জন করাও সম্ভব বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।  

তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর পরই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মালিককে গ্রেফতার করেছিলো। বিচার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু এখানে থেমে থাকলেই চলবে না, দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। তাহলেই কেবল এ ক্ষতির কিছুটা পূরণ করা সম্ভব হবে’।  
 
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় তাজরীন ফ্যাশন পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেদিন কারখানার ২য় তলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত এক হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। কারখানার নিচতলার গুদামে আগুন লেগে তা দ্রুত ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে পুড়ে মারা যান ১১৩ জন শ্রমিক, আহত হন আরও তিন শতাধিক।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৬
ইউএম/এএসআর

আরও পড়ুন
** তাজরীন ট্র্যাজেডির ৪ বছর: অথৈ জলে মোমেনা-মমতাজরা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।