ঢাকা: উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সঠিক তথ্য না দেওয়ায় বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের (বিআইপিডি) অনুমোদন কেন বাতিল হবে না, এর ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
প্রতিষ্ঠানটি এজেন্টদের প্রশিক্ষণ অনুমোদনের লক্ষ্যে আইডিআরএ’র কাছে করা আবেদনে, তাদের উদ্যোক্তা-পরিচালকরা বিমা খাতে অন্যান্য কোম্পানিতে জড়িত থাকার কথা গোপন করার পাশাপাশি অন্যান্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের চেয়ে বেশি কোর্স ফি নিচ্ছে।
আইডিআরএ সূত্র জানায়, গত ৩০ নভেম্বর সাত কার্যদিবসের মধ্যে জানতে চেয়ে বিআইপিডি’র মহাপরিচালক বরাবর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইডিআরএ’র কর্মকর্তা শাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নির্দেশনার সময়ও গত ১২ ডিসেম্বর সোমবার শেষ হয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো উত্তর দিতে পেরে আরও এক মাস সময় চাওয়া হয়েছে।
আইডিআরএ’র নির্দেশনায় বলা হয়, বিমা শিল্পে মানব সম্পদ তৈরিতে প্রশিক্ষণ একাডেমির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা জনগণের কাছে বিমা বিক্রি করে থাকেন। বিআইপিডি’র মেমরেন্ডাম ও আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনে দেখা যায়, যারা বিআইপিডি প্রতিষ্ঠা করেছেন, তারা অনেকেই জীবন বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক।
এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন এবং এর সঙ্গে যে সমস্ত কাগজাদি দাখিল করেছেন, সেসমস্ত দাখিল করা কাগজাদিতে উল্লেখিত তথ্য না থাকায় কর্তৃপক্ষের কাছে বিআইপিডি সঠিক তথ্যাদি দাখিল করেনি বলে প্রতীয়মান হয়। এটি ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’র আওতায় পড়ে।
এছাড়াও প্রশিক্ষণ কর্মশালার কোর্স ফি জনপ্রতি তিন হাজার ৫শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা অন্যান্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের চাইতে অনেক বেশি এবং কোর্স ফি দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে লাখ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হচ্ছে। যা পলিসি হোল্ডারদের স্বার্থের পরিপন্থি কাজ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রাইম ব্যাংক, প্রাইম ও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সসহ একই গ্রুপের ১৮টি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা-পরিচালকরাই বিআইপিডি’র পরিচালকের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
এর মধ্যে বিআইপিডি’র পরিচালক পদের পাশাপাশি একই গ্রুপের পরিচালক পদে রয়েছেন- এম এ খালেক, কেএম মোবারক হোসেন, তাসলিমা ইসলাম ও এম এ খালেকের দুই ছেলে রুবাইয়াত খালেদ ও শাহারিয়ার খালিদ। এছাড়াও রয়েছেন রাবেয়া বেগম।
অন্যদিকে, বিআইপিডি’র পরিচালক ও শরিয়াহ কাউন্সিলের পরিচালকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানিতে চাকরি করছেন কাজী মো. মোরতুজা আলী, এহসান খসরু ও কাজী ফরিদউদ্দিন আহমেদ।
জানা গেছে, কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের আওতায় পড়ায় অর্থাৎ বিমা কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ দেওয়ার একাডেমি হিসেবে অনুমোদন পায়নি। ফলে তারা এজেন্ট প্রশিক্ষণ দিতে পারছেন না।
জানা গেছে, বিআইপিডি এ পর্যন্ত ছয় হাজার এজেন্টকে সনদ দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এজেন্টদের কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার করে টাকা নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালার নামে টাকা তুলে নিয়েছে। এর বেশির ভাগ ফারইস্ট ও প্রাইম ইসলামী লাইফের এজেন্ট।
অথচ একই প্রশিক্ষণে একাডেমি অব লার্নিং ইনস্টিটিউশন ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমিতে আড়াই হাজার টাকা করে নেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মহপরিচালক কাজী মো মোরতুজা আলী বাংলানিউজকে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
এমএফআই/এসএনএস