ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প

হ্যাচারি সিন্ডিকেটে দিশেহারা খামারি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৭
হ্যাচারি সিন্ডিকেটে দিশেহারা খামারি পোল্ট্রি ফাইল ফটো

যশোর: বাংলাদেশে পোল্ট্রি হ্যাচারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের লাখো খামারি। বছরের পর বছর দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই খাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকি না থাকায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে একের পর এক খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। এতে স্থায়ীভাবেই দেশি-বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির দখলে চলে যাচ্ছে পোল্ট্রি শিল্প। ফলে এ খাতের দেশীয় উদ্যোক্ত‍ারা বেকার হয়ে পড়ছেন। 

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দেশে প্রাণিজাত প্রোটিনের বড় যোগানদাতা পোল্ট্রি শিল্প। দেশে মোট চাহিদার শতকরা ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ প্রোটিন আসে পোল্ট্রি থেকে।

ফলে চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রান্তিক পর্যায়ের লাখো উদ্যোক্তা পোল্ট্রি খামার গড়ে তোলেন। এতে একদিকে বেকারদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়, তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে শুরু করে।

তবে গত কয়েক বছর পোল্ট্রি হ্যাচারি মালিকদের সিন্ডিকেটে একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম দফায় দফায় বেড়ে চলেছে। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণেরও বেশি দরে ব্রয়লায় মুরগির বাচ্চা বেচাকেনা চলছে। গত দুই বছরে একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম বেড়েছে প্রায় ৫০০ শতাংশ।

বাজার ঘুরে জানা যায়, বর্তমানে একদিনের ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। অথচ, সরকার নির্ধারিত মূল্য ৩০ টাকা। তবে খামারিদের অভিযোগ, সরকার ও হ্যাচারি মালিকরা সমন্বিতভাবে বাচ্চার দাম নির্ধারণ করলেও ওই দামে কখনোই মুরগির বাচ্চা বিক্রি হয়নি।

গত কয়েক বছর ধরে দেশব্যাপী কাজী ফার্মস, আফিল অ্যাগ্রো লি., আফতাব গ্রুপ, প্যারাগন, নীলসাগর, সিপি, বি এগ্রো, আমান হ্যাচারি, নারিশ, সিপি, প্রোভিটা, নাহার অ্যাগ্রোসহ অন্তত ১৫টি হ্যাচারি সিন্ডিকেট তৈরি করে বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণ করছে।

জানা যায়, অধিকাংশ দিন সকালে কাজী ফার্মস তাদের বাচ্চার দাম নির্ধারণ করে ডিলারদের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠায়। এরপরে অন্য হ্যচারিগুলো একই পন্থায় দু’চার টাকা কমবেশি করে তাদের বাচ্চার দাম নির্ধারণ করে এসএমএস পাঠায়। এছাড়াও এসব হ্যাচারি কোম্পানি মনোপলি ব্যবসার উদ্দেশ্যে নিজেরাই পোল্ট্রি খামার গড়ে তুলছে।

পোল্ট্রি খামারি ও ডিলাররা বাংলানিউজকে বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাচ্চার দাম অতিরিক্ত বাড়ানো হলে খামারিরা বাচ্চা ক্রয় বন্ধ করে দিতো, ফলে হ্যাচারি সিন্ডিকেটগুলো দাম কমাতে বাধ্য হতো। কিন্তু বর্তমানে হ্যাচারি মালিকরা নিজেরাই পোল্ট্রি খামার ও খাদ্য তৈরি করেছে। ফলে অতিরিক্ত দামে খামারিরা বাচ্চা না কিনলে নিজেদের ফার্মে তুলে মুরগি প্রস্তুত করে। এতে তারা নিজেদের উৎপাদিত বাচ্চা ও নিজেদের তৈরি খাবার-ওষুধ দিয়ে অল্প খরচে মুরগি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে। ফলে এদেশের প্রান্তিক পর্যায়ে খামারি থাকলো নাকি নিঃস্ব হলো তা নিয়ে হ্যাচারি মালিকদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

বর্তমানে ৬৫ টাকার বাচ্চা ও প্রতি বস্তা খাদ্য ২১৫০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা দরে কিনে ৩৪ দিন মুরগি পালন করতে মুরগিপ্রতি খরচ হয় ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। অথচ, পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি পোল্ট্রি মুরগি সর্বোচ্চ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এছাড়াও ফার্মে রোগের কারণে কম-বেশি কিছু মুরগি মরে যায়, সবমিলিয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে প্রান্তিক খামারিদের। ফলে দিন দিন একের পর এক খামার বন্ধ হচ্ছে। বর্তমানে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ৮৮ হাজার ফার্মের অন্তত ৫০ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হুমকির মুখে রয়েছে।   

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালের জুলাই মাসে অতিরিক্ত দামে মুরগির বাচ্চা বিক্রির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ওই সময় বিষয়টি সুরাহা করতে হাইকোর্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে তিন মাস সময় দেন। পরে সরকার ও হ্যাচ‍ারি মালিকরা মূল্য নির্ধারণ বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে হ্যাচারি মালিকরা তথ্য দেন, একদিনের ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ২০ টাকার মধ্যে। সে অনুযায়ী বাচ্চার বিক্রি দাম নির্ধারণ করা হয় ৩০ টাকা। তবে ওই নির্ধারিত দামে আজ অবধি কোন হ্যাচারি বাচ্চা বিক্রি করেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।