আর সেই কাঠেই সাজছে ঘরে দরজা, জানালা, আসবাব, টাইলসের বিকল্প হিসেবে মেঝে, সিলিং থেকে একটি ঘরে যা যা লাগে তার সব। যা নান্দনিকতার পাশপাশি পরিবেশবান্ধব ও ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখার তকমা অর্জন করেছে স্বল্পসময়েই।
ভারতবর্ষে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবনী ইকো ফ্রেন্ডলি এ কাজটি করেছে মুম্বাই ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মুথা গ্রুপ। দেশটির শিল্পের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে থাকা রাজ্য ত্রিপুরার শিল্পনগরীতে কারখানা গড়ে উৎপাদন হচ্ছে নান্দনিক টেকসই এ কাঠ। রাজ্য সরকারের বর্তমান ডেপুটি স্পিকার ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী পবিত্র করের হাতে গড়া আরকে নগর শিল্পপার্ক এমন অনেক সম্ভাবনাময় শিল্পের দুয়ার খুলেছে।
তিন হাজার টনের চাপে সলিড কাঠে পরিণত হচ্ছে বাঁশ। দেখতে অবিকল কাঠের মতো, কিন্তু দ্বিগুণ চাপ নিতে সক্ষম ‘ব্যাম্বোউড’। ‘এপিটম’ ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করে বাঁশকাঠ থেকে তৈরি আসবাবসহ বিভিন্ন জিনিস এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাজারজাত করছে প্রতিষ্ঠানটি।
চৌদ্দ মিলিমিটার পুরু একটি কাঠের তক্তা সর্বোচ্চ ৬শ কেজি লোড নিতে পারে। সেখানে বাঁশকাঠ ১২শ কেজি লোড নিতে সক্ষম। কাঠে ধাতব পদার্থ দিয়ে আঁচড় লাগলে সহজেই স্ক্রাচ বা দাগ পড়ে যায়, কিন্তু বাঁশকাঠ এর কোনোসম্ভাবনা নেই।
কাঠের টেবিলে অসাবধানতাবশত আগুন পড়লে দাগ বসে যায়। কিন্তু এতে সেটা হবে না। সাধারণত কাঠ আগুনের সংস্পর্শে এলে ৭ মিনিটের মাথায় জ্বলতে শুরু করে, হাইড্রোলিক চাপে প্রস্তুত ‘এপিটম ব্যাম্বুউড’ ১৬ মিনিট পর্যন্ত থাকে নিরাপদ। কাঠে ঘুনপোকাসহ নানারকম কীটের আক্রমণ হয়, বাঁশকাঠ এখানেও সেরা। কীটের আক্রমণের সম্ভাবনা জিরো শতাংশ। আবার স্থায়ীত্ব কাঠের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
ভারতীয় কোম্পানি মুথা ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের উৎপাদিত ‘ব্যাম্বোউড’র গ্যারান্টি দিচ্ছে ২০ বছর। এর মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে পুরো টাকাই ফেরত। অর্থাৎ, একবার লাগালে নিশ্চিন্ত কয়েক যুগ। কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন একবারেই জীবন পার।
‘ব্যাম্বোউড’ ইউরোপ আমেরিকায় বেশ পরিচিত হলেও ভারতবর্ষে প্রথম এবং একমাত্র কারখানা সাড়ে তিন বছর আগে ত্রিপুরার প্রাদেশিক রাজধানী আগরতলায় স্থাপিত হয়। অত্যাধুনিক মেশিনে প্রস্তুত ‘ব্যাম্বুউড’ এরই মধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। অর্জন করেছে গ্রাহকের আস্থা। বিশেষ করে যারা ফ্যাশনেবল, বৈচিত্র্যানুসন্ধানী তাদের প্রথম পছন্দ এখন এ কাঠ।
কাঠের তুলনায় অনেক বেশি সৌখিন বাঁশকাঠের গুণের শেষ নেই। গরমের সময় বাইরে তাপমাত্রা থেকে অন্তত ৪-৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা কম রাখে এ কাঠ। আবার শীতের সময়ে থাকে বেশ উষ্ণ। কাঠের ইন্টেরিয়র ফিটিংসের একটি নির্দিষ্ট স্পেস শীতল হতে যেখানে দশ ঘণ্টা শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালাতে হয়, সেখানে ‘ব্যাম্বোউড’র ইন্টেরিয়রে মাত্র ৬ ঘণ্টায় পুরোপুরি শীতল হয়ে যায়। অর্থাৎ, বিদ্যুৎ খরচ একলাফে ৪০ শতাংশ কমে যায় বলে জানান এপিটমের সিনিয়র ম্যানেজার [উৎপাদন] সুদীপ চক্রবর্তী।
এখানে সাধারণ বাঁশকে পরিশোধন করে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে ব্যাম্বোউডে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। আর প্রত্যেকটি ধাপে রয়েছে কঠোর মনিটরিং। সবশেষ ফিনিশ ‘ব্যাম্বুউড’ কতটুকু মানসম্মত হলো সেটি পরীক্ষা করা হয় ল্যাবরেটরিতে। তারপর ছাড়া হয় বাজারে। যে কারণে মান থাকে সর্বোচ্চ।
মানের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর করার ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ মনোযোগ, একে পরিশোধনের মাধ্যেমে সম্পূর্ণ জীবানুমক্ত করা হয়। যাতে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো উপাদান থাকতে না পারে।
কীটের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য প্রথমে সুগার কনটেন্ট ফ্রি করা হয় বয়েলিং এবং কার্বোনাইজিংয়ের মাধ্যমে। একটি সবুজ বাঁশ পনের দিনের কঠোর প্রক্রিয়ায় পরিপূর্ণ কাঠে পরিণত হয়। এখানে সলিড কাঠ, ফার্নিচারের উপযোগী নানা সাইজের কাঠ, দেয়াল, মেঝে, ছাদ, সিঁড়ির রেলিংয়ের ফিটিংস- কাঠের সব বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে।
এর আরেকটি বাড়তি সুবিধা খুব সহজেই স্থানান্তর করা যায়। আপনি একটি ঘরের মেঝেতে মোড়ালেন। কখনও যদি সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিশে অক্ষত অবস্থায় সরিয়ে নিয়ে অন্য রুমে সেটিং করা সম্ভব। একইভাবে দেয়াল এবং ছাদের ফিটিংসের ক্ষেত্রেও।
ফিটিংয়ের জন্য এটা প্লাস্টিকের পাজলের মতো ছাঁচে তৈরি করা। কোনো রকমের আঠার ব্যবহার ছাড়াই একটি আরেকটির সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব। দেখতেও অনেক বেশি সৌখিন। যে কারণে খুব সহজেই কাঠের বিকল্প হয়ে উঠছে বাঁশকাঠ।
আর পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব। একটি গাছ থেকে উন্নতমানের কাঠ পেতে যখন যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করতে হয়, সেখানে বাঁশ থেকে দুই থেকে আড়াই বছরে উন্নতমানের কাঠ পাওয়া যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন গাছের উপর নির্ভরতা কমছে, পরিবেশ সুরক্ষিত থাকছে, অপরদিকে দ্রুতবর্ধনশীল বাঁশ হয়ে উঠছে আরও কাজের। যোগাযোগ +৯১৯৪৮৫১৯০৫৪০
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৫ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৭
এসআই/এএ