আমাদের দেশে ব্যবহৃত প্রোবায়েটিকের পুরোটাই আমদানিনির্ভর। আমদানি কমাতে এবং উপকারী অণুজীবের কার্যকারিতা বাড়াতে এখন দেশেই বাণিজ্যিকভাবে অণুজীব উৎপাদন করতে চলছে গবেষণা।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাণিস্বাস্থ্য গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে অনেক আগেই প্রোবায়োটিকের ব্যবহার শুর হয়েছে। তবে এ অণুজীবের ব্যবহার বর্তমানে অনেক বেড়েছে। আমাদের দেশি মোরগ-মুরগী রাস্তাঘাটে নানা ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। এসব খাবারে থাকে অনেক অণুজীব। এসব দেশি মুরগীর পাকস্থলির বৃহদান্ত্র এবং খাদ্যথলিতে রয়েছে বেশ কিছু উপকারি অনুজীব। এসব উপকারী অনুজীব মুরগীর দেহে প্রবেশ করা ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে ফেলে। তাই দেশি মুরগীর রোগ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়।
তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে দেশি মুরগীর দেহে বেশ কয়েকটি উপকারী অণুজীব শনাক্ত করতে পেরেছি। এসব অণুজীব প্রোবায়োটিক হিসেবে ব্যবহার করে অ্যান্টিবায়োটিক নির্ভরতা অনেকাংশেই কমিয়ে ফেলা সম্ভব। ফলে পোল্ট্রির উৎপাদন খরচ অনেকটাই কমে যাবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এসব উপকারী অণুজীব বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে খামারিদের সরবরাহ করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের “ শিক্ষাখাতে উচ্চতর গবেষণা সহয়তা কর্মসূচির” আওতায় “বাংলাদেশি স্থানীয় অনুজীব থেকে বাণিজ্যিক প্রোবায়োটিক উৎপাদন ও তাদের সম্ভাব্যতা যাচাই” প্রকল্পের প্রধান গবেষক হিসেবে কাজ করছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. কে, বি, এম, সাইফুল ইসলাম।
গবেষক সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শতকের মহা-আবিষ্কার অ্যান্টিবায়োটিক। ক্ষতিকর অণুজীব আক্রমণে মোরগ-মুরগী অসুস্থ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই খামারিরা একই অ্যান্টিবায়োটিক অনিয়ন্ত্রিতভাবে বারবার ব্যবহার করেন। ফলে ক্ষতিকর অণুজীবগুলো অ্যান্টিবায়েটিক প্রতিরোধী হয়ে যাচ্ছে। এসব মুরগী খাচ্ছে মানুষ। মানুষ ও পশু-পাখিতে প্রয়োগকৃত অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা প্রায় একই।
তাই মানুষ অসুস্থ হলে প্রয়োগকৃত অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে পারছে না। আবার একই অ্যান্টিবায়োটিক বারবার ব্যবহার করায় তা মুরগীর ক্ষতিকর অণুজীবও ধ্বংস করতে পারছেনা। তাই অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে আমরা প্রোবায়োটিক দেখছি।
গবেষণার অংশ হিসেবে সাইফুল ইসলাম চলতি বছরে রাস্তায় ময়লা-আর্বজনা খেয়ে অভ্যস্থ সুস্থ দেশি মুরগী সংগ্রহ করেন। সংগৃহিত এসব মুরগী জবাইয়ের পর গবেষণাগারে নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় মুরগীর বৃহদান্ত্রের সিকাম এবং খাদ্য থলির গায়ে উপকারীবিফিডোব্যাকটেরিয়া এবং ল্যাকটোবেসিলাসের উপস্থিতি শনাক্ত করেন। এসব উপকারী অণুজীব মুরগীর পাকস্থলির এপিথেলিয়াল স্তরে লেগে থাকে। এরপর মুরগীর দেহে ক্ষতিকর জীবাণু প্রবেশ করলেও তা ধংস হয়ে যায়।
তরুণ এ গবেষক বলেন, দেশি মুরগীতে প্রাপ্ত এসব অণুজীবের মধ্যে কোনটি বাণিজ্যিক পোল্ট্রিতে ভাল কাজ করবে, তাই নিয়ে গবেষণা করছি।
চট্টগ্রাম ভেটিরিনারী ও অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতমবুদ্ধ দাশ বাংলানিউজকে বলেন, দেশি মুরগী থেকে প্রাপ্ত কিছু প্রোবায়োটিক অণুজীব আমরা ব্রয়লার মুরগীতে দিয়ে ভাল ফল পেয়েছি। আমরা দেখেছি উপকারী অণুজীবগুলো জীবাণু ধ্বংসের পাশাপাশি মুরগীর বৃদ্ধিতেও দারুণভাবে সহয়তা করে।
প্রোবায়োটিক অণুজীব নিয়ে গবেষণা করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান। তিনি দেশি মুরগীতে প্রাপ্ত ল্যাকটোবেসিলাস নিয়ে গবেষণা করছেন।
চলমান এ গবেষণার মাধ্যমে দেশি মুরগী থেকে বাণিজ্যিক মুরগীতে ব্যবহার উপযোগী প্রোবায়োটিক অণুজীব উৎপাদন করার কৌশল আবিষ্কার করতে পারলে সমৃদ্ধ হবে পোল্ট্রিশিল্প। নিশ্চিত হবে সম্ভাবনাময় পোল্ট্রি খাতের মানসম্পন্ন উৎপাদন। কমবে এসব অনুজীবের আমদানিব্যয় এবং পোল্ট্রির অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হওয়ার কুফল। ফলে দেশের প্রাণিজাত আমিষের বড় যোগানদাতা পোল্ট্রি খাতে উৎপাদনব্যয় কমবে বলে মনে করছেন পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৭
জেএম