ভেড়ার পশমে তৈরি কাপড়ের কম্বল ও কম্বলের কাপড়, লেডিজ শাল বা চাদর, মুজিব কোট, স্যুটসহ এসব বস্ত্র সামগ্রী ছাড়াও পাপোস উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। এগুলো বিএলআরআই ও তাদের বিজ্ঞানীদের সমন্বিত উদ্ভাবনী চিন্তার ফসল বলে জানিয়েছে ইনস্টিটিউটটি।
বিএলআরআই জানায়, ‘সমাজভিত্তিক ও বাণিজ্যিক খামারে দেশি ভেড়ার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশি ভেড়ার পশম, পাট ও সুতার মিশ্রণে বস্ত্র সামগ্রী তৈরি করা হয়েছে। এ প্রকল্পের ‘কম্পোনেন্ট-বি’ তে ভেড়া সম্প্রসারণের কাজও করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বেলা ১১টায় বস্ত্র সামগ্রী হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক, প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মীর শওকত আলী বাদশাসহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত থাকবেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বিএলআরআই’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় মন্ত্রণালয় প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় এ সফলতার স্মারক প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হবে।
পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. মনজুরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০১৪ সালে বিএলআরআই আমাদের কাছে এসে জানালো যে, দেশে ৩০ লাখ ভেড়া আছে। প্রতি বছর দু’বার করে পশম কাটা হয়। এতে বছরে ৩০ লাখ কেজি পশম পাই। পশমগুলো ব্যবহার করা হয় না, ফেলে দেওয়া হয়’।
‘তারা বললো, পশমগুলোকে কোনো কাজে লাগানোর সুযোগ আছে কি-না। সে সময় তারা কিছু পশম দিলো’।
ড. মনজুরুল বলেন, ‘এরপর কটন ও জুট সিস্টেমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হলো। কটন সিস্টেমে ভেড়ার পশম মিশিয়ে সুতা ও সেই সুতা দিয়ে তৈরি হলো কাপড়। যেমন, মুজিব কোট, স্যুট, লেডিজ শাল ইত্যাদি।
‘পরবর্তীতে আমাদের গবেষণায় পাট ও ভেড়ার পশম মিশিয়ে কম্বল ও কম্বলের কাপড় তৈরি করা হলো’।
শীত প্রধান দেশে ম্যাট জাতীয় এসব কাপড়ের চাহিদা আছে বলেও জানান তিনি।
ড. মনজুরুল আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে যে ভেড়া আছে, তার পশম কুটির শিল্পেও কাজে লাগতে পারে। শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে উৎপাদন করতে গেলে অনেক পশমের প্রয়োজন। ভেড়ার উৎপাদন বাড়ালে প্রোটিনের পাশাপাশি পশমেরও উৎপাদন বাড়বে। পরিমাণ বাড়লে শিল্প প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলতে পারবো’।
ভেড়ার পশম দিয়ে তৈরি কাপড়গুলো পরে বিএলআরআই’র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বলেন, ‘টেকনোলজিটা আমাদের। তবে বাইরে থেকে কিছু যন্ত্রপাতি এনে সহায়তা নেওয়া হয়’।
সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভেড়া থেকে পশম নিয়ে উদ্ভাবন করেছি আমরা। এ প্রযুক্তি দেশে ভেড়ার মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভেড়ার পশম ও পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করবে। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এক্ষেত্রে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন বলেও আশা করছি’।
বিএলআরআই এ পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক ৭৭টি বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ও প্যাকেজ উদ্ভাবন করেছে, যেগুলো মাঠ পর্যায়ের খামারিরা পোলট্রি ও প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে সফলভাবে ব্যবহার করছেন। উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, বিভিন্ন এনজিও ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
এমআইএইচ/এএসআর