সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ভ্যাট ফাঁকির রায় এনবিআরের পক্ষে গেছে। সুতরাং ফাঁকি দেওয়া অর্থ এখন মীর সিমেন্টকে সরকারের কোষাগারে পরিশোধ করতে হবে।
এনবিআর-এর সংশ্লিষ্ট সূত্র বাংলানিউজকে বিষয়টি জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে বৃহৎ করদাতা ইউনিটে মীর সিমেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। পরে একই বছরের ১৭ অক্টোবর একটি তদন্ত দল মীর সিমেন্টের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় পরিদর্শন করে।
ওই সময় মীর সিমেন্ট থেকে মূসক ৫ এর মাধ্যমে জব্দ করা ২৩ টি দ্বৈত মূসক (ভুয়া) চালান বই, দু’টি ডেসপাস রিপোর্ট (পণ্য সরবরাহ) ফাইল ও কাঁচামাল ক্রয়ের রশিদ আড়াআড়ি পরীক্ষা করে তদন্ত টিম।
এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি মূসক ১৬, মূসক ১৭ ও মূসক ১৮ রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি না করে পণ্য উৎপাদন ও উৎপাদিত পণ্যের তথ্য গোপন করে সরকারের ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৪ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
জানা যায়, কোম্পানিটি ভুয়া চালান বই ব্যবহার করে ২০১৩ সালের আগস্ট থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬৪৮ টাকা, ডেসপাস রিপোর্টের মাধ্যমে ২০১২ সালের জুন থেকে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ৩ কোটি ৫ লাখ ৯১ হাজার ১৪৩ টাকা, মূসক ১১ চালান ছাড়া ফ্লাই-অ্যাশ কিনে উৎসে মূসক বাবদ ৯ লাখ ৯ হাজার ৯৮২ টাকা, মূসক ১১ চালান ছাড়া স্ল্যাগ ক্রয়ের উপর উৎসে মূসকবাবদ ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১৪৩ টাকা ও অডিট রিপোর্ট থেকে উৎসে মূসক বাবদ ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৮ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
এনবিআর সূত্রে আরও জানা যায়, মামলার পর মীর সিমেন্টের বিরুদ্ধে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন-১৯৯১ এর ধারা ৫৫ (১) অনুসারে দাবিনামা জারি করে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি কেরে এনবিআর।
ওই নোটিশের বিপরীতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দাখিল করে মীর সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ। এরপর হাইকোর্ট ওই রিট পিটিশনের বিপরীতে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন।
কিন্তু এলটিইউ থেকে রিট পিটিশনের স্থগিতাদেশের বিপরীতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করা হলে আদালত স্থগিতাদেশ বাতিল করে দেন।
এরপর প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সম্প্রতি শুনানি শেষে এনবিআরের পক্ষে রায় দিয়েছেন। ফলে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের অর্থ এখন মীর সিমেন্টকে পরিশোধ করতেই হবে।
এ বিষয়ে এলটিইউ-এর সহকারী কমিশনার (আইন ও বিচার শাখা) বদরুজ্জামান মুন্সী বাংলানিউজকে বলেন, মীর সিমেন্ট দাবি করছিল তারা ভ্যাট ফাঁকি দেয়নি। এমনকি কর ফাঁকির বিষয়টি মানতেও নারাজ ছিল তারা।
তিনি বলেন, মামলা করলে মীর সিমেন্ট হাইকোর্টের রিট করে। হাইকোর্টও তাদের দাবির প্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় স্থগিতাদেশ দেন। পরিশেষে যাবতীয় তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে।
এ রায়ের ফলে অচিরেই তাদের ফাঁকি দেওয়া অর্থ সরকারের রাজস্ব কোষাগারে জমা হবে বলে জানান বদরুজ্জামান মুন্সী।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
এসজে/এমএ