কেবলমাত্র স্থানীয় কোরবানির পশুর চামড়া কিনে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করছেন আড়তদার এবং খুচরা ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। বাইরের ক্রেতারা এলে সেগুলো বিক্রি করবেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থানীয় চামড়া আমদানি হলেও জেলার বাইরে থেকে আসতে সময় লাগবে আরো ১০/১৫ দিন। তবে আগামী বৃহস্পতিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) দিনভর চামড়ার হাট জমজমাটভাবে চলবে বলে আশাবাদী তারা।
সোমবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেনা-বেচা তেমনভাবে শুরু না হওয়ায় চামড়ার মোকাম অনেকটাই ফাঁকা।
স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম নুরু বাংলানিউজকে জানান, ঈদের দিন বিকেল থেকে স্থানীয় কাঁচা চামড়া আসছে। ছোট-বড় আকারভেদে প্রতিটি গরুর চামড়া ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ৬০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেগুলো কিনে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করছেন তারা। তবে গ্রামাঞ্চল থেকে চামড়া কিনে লাভের আশায় এবং গরমের হাত থেকে রক্ষায় লবণ দিয়ে আড়তে আনতে একটু দেরি করছেন মৌসুমী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
জেলার বাইরে থেকে এখনও চামড়া আসা শুরু হয়নি। তবে আগামী হাট বৃহস্পতিবার থেকে পুরোদমে আমদানি চলবে।
ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান লাল্টু জানান, এবার ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেওয়া মূল্যেই চামড়া কেনা-বেচা হচ্ছে। কিন্তু আমদানি পুরোপুরি এখনও শুরু হয়নি। অথচ বিগত কোরবানির ঈদগুলোতে চামড়া কিনতে এক সপ্তাহ আগেই চলে আসতেন ঢাকার ট্যানারি মালিকসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা।
আগের বছরের পাওনা টাকা আদায় করে নতুন করে চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিতেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। কিন্তু এবার সেই চিরাচরিত কর্মযজ্ঞের দেখা মিলছে না।
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে আড়তগুলোতে চামড়া আমদানি না থাকায় শ্রমিকরা অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। ফলে আড়তগুলোতে শ্রমিক সংকট রয়েছে। নতুন শ্রমিকদের নিয়ে ভোগান্তিতে আছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, একটি চামড়ায় লবণ দিতে হয় ৫/৬ কেজি। বর্তমানে প্রতি কেজি লবণের দাম ২২ টাকা হওয়ায় চামড়ার খরচ একটু বেশি পড়ে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন জানান, চকবৈদ্যনাথ এলাকায় ছোট-বড় মিলে অন্তত ১৫০টি চামড়ার আড়ত ও প্রায় ৩০০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। প্রতি ঈদ মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলা ও দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ১২টি জেলার চামড়া আসে এখানে। কেনা-বেচা ভালো হলেও টাকা বকেয়া থাকায় ঈদ মৌসুম এলেই চামড়া কিনতে হিমশিম খেতে হয় তাদের।
ব্যবসায়ী বকুল হোসেন জানান, চামড়া সংরক্ষণে লবণ কেনার টাকাও তার কাছে নেই। ঢাকার ট্যানাররাই এখন শেষ ভরসা।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেড় শতাধিক ব্যবসায়ীর প্রায় ৬০ কোটি টাকা ট্যানারদের কাছে আটকে আছে। তাই এবার হাতে টাকা না থাকায় নতুন করে চামড়া কেনা এবং গত বছরের বকেয়া টাকা পরিশোধ নিয়ে উৎকন্ঠায় রয়েছেন তারা। তবে ব্যবসার স্বার্থে ধার-কর্জ করে চামড়া কেনার চেষ্টা করছেন।
নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শরীফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রায় সব ব্যবসায়ীরই কম-বেশি মূলধন আটকে আছে ঢাকার ট্যানারদের কাছে। কিছু কোম্পানি বকেয়া টাকা পরিশোধ করলেও অধিকাংশই করেনি। ফলে চামড়া কেনা নিয়ে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। তবে দু’একদিনের মধ্যে টাকা পেয়ে যাবেন অনেকেই।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৭
এএসআর