তারা বলছে, ২০০৭ সালের দিকে দেশে প্রায় দেড় লাখ পোলট্রি খামার থাকলেও গত ১০ বছরে অর্ধেকেরও বেশী কমে বর্তমানে ৬৫ হাজারের মতো খামার টিকে আছে।
সংস্থাটি জানায়, বর্তমানে ৭টি বিদেশি কোম্পানি সরকারের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে।
এ বিষয়ে যশোর জেলার কড়িয়াখালী গ্রামের শাহাবুদ্দীন বলেন, আমার আগে পোলট্রি খামার ছিলো। কিন্তু ব্যাংকে বিভিন্ন সময় আবেদন করেও ঋণ পাইনি। যার কারণে ডিলারদের কাছ থেকে বাকিতে মুরগীর বাচ্চা, খাবার ও মেডিসিন কিনতে হয়েছে। ঋণ সুবিধা পেলে ডিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হতো। লোকসানেও পড়তে হতো না। এখন ফার্ম তুলে দিয়ে ভাড়ার মোটরসাইকেল চালাই।
একই গ্রামের মনসুর আলী বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে খামার দিয়েছিলাম। কিন্তু ভ্যাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেটা বেশি দিন টিকে থাকেনি। মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা ও এনজিও থেকে লোন নিয়েছিলাম। কিন্তু বছর না পেরুতেই খামার বন্ধ করে দিয়ে কাঁচামালের ব্যবসা করছি।
এভাবে যশোর অঞ্চলের অধিকাংশ ক্ষুদ্র খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের মহাসচিব মঞ্জুর মোর্শেদ বাংলানিউজকে বলেন, পোলট্রি শিল্পে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ সুবিধা থাকলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিরা কোনো ঋণ সুবিধা পায় না। তাদের ঋণ সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি খাতা কলমেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু প্রান্তিক ও মাঝারি খামারিরা ঋণ সুবিধা না পাওয়ায় তাদের ডিলারদের কাছ থেকে বাকিতে পোলট্রির বাচ্চা, খাবার ও মেডিসিন কিনতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পোলট্রি শিল্প সরকারের একটি শিল্পখাত। এ শিল্পকে অনেকেই কর্মসংস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাই এই শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাংকগুলো কেন তাদের ঋণ সুবিধা দিচ্ছে না তার সমাধানে সরকারের উদ্যোগী হওয়া উচিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর এসকে সুর চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, পোলট্রি শিল্পে ব্যাংক ঋণের সুবিধা আছে। প্রায় সব ব্যাংক ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিরা ব্যাংক ঋণ সুবিধা পান না এমন অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলানিউজকে বলেন, পোলট্রি শিল্পে ব্যাংক ঋণের সুবিধা আছে। কোনো খামারি এ সুবিধা পান না বলে জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিরা যেনো ঋণ সুবিধা পান সে ব্যবস্থা করা হবে।
বিপিআইসিসি জানায়, ১৯৪৭ সালে ছয়টি পোলট্রি ফার্ম স্থাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এ শিল্পের যাত্রা শুরু হলেও ১৯৮০ সালের দিকে বাণিজ্যিকভাবে পোলট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে। দেশে প্রাণীজাত প্রোটিনের বড় যোগানদাতা পোলট্রি শিল্প। দেশে মোট চাহিদার শতকরা ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ প্রোটিন আসে পোলট্রি থেকে। পোলট্রি শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ জড়িত।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৭
এসজে