বিড়িশিল্প বন্ধ করার আগে বিড়িশ্রমিকরা বিকল্প কমর্সংস্থানেরও দাবি করেছেন। সিগারেট থাকলে বিড়িশিল্পও রাখার দাবি শ্রমিকদের।
জানা যায়, দেশের বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, চট্টগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, খুলনা ও শরিয়তপুরসহ ২৪টি জেলায় বতর্মানে ১৫ লাখেরও বেশি বিড়িশ্রমিক কর্মরত আছেন।
যশোর নাভারনের একটি বিড়ি কারখানার শ্রমিক আসলাম হুদা বাংলানিউজকে জানান, বোঝার (বুদ্ধি হওয়ার) পর থেকে বিড়ি বানান তিনি। ৩০ বছর পেরিয়ে গেছে এই পেশায়। তার স্ত্রী সাবেরা বেগমও বিড়ি বানান। এই বিড়ি বানিয়ে তারা ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। এখন যদি বিড়িশিল্পই বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে তাদের পথে নামতে হবে। তাই বিড়িশিল্প বন্ধের আগে তাদের জন্য বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। আর দেশে যদি সিগারেট থাকে তাহলে বিড়িশিল্প বন্ধ করা কেন হবে? বিড়িশিল্প বন্ধ হলে তাদের মতো লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। এসব শ্রমিকের রুটি রুজির দায়িত্ব কে নেবে?
কুষ্টিয়ার ‘মাসুদ বিড়ি’র শ্রমিক রেজাউল জানান, ৪০ বছর ধরে বিড়ি বানাচ্ছেন তিনি। ১ হাজার বিড়ি বানালে পান ৩৮ টাকা। দিনে ১শ টাকার মতো আয় করেন। আর এই আয়ের টাকায় চলে তাদের পুরো পরিবার। বাবাও বিড়ি বানাতেন কিন্তু গত হয়েছেন বছর পাচেক হবে। এখন যদি সরকার বিড়িশিল্প বন্ধ করে দেয় তাহলে কি করবেন তারা? হুট করে বিড়িশিল্প বন্ধ যেন করা না হয়, সেজন্য সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তিনি।
বিড়িশিল্প বিষয়ে বাংলাদেশ বিড়িশ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সারাদেশে ১০-১২ টি সিগারেট কোম্পানিতে সব মিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক নেই। অথচ বিড়িশিল্পে বতর্মানে ১৫ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। বিড়িতে অগ্রিম ১০ শতাংশ আয়কর দিতে হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য সিগারেটে মাত্র ৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়। সেটাও ১ মাস পর দিতে হয়। এটা বিড়িশিল্পের প্রতি মারাত্মক বৈষম্য। এই কর বৈষম্যের কারণে বিড়ির বাজার দিনদিন সিগারেট মালিকরা দখল করে নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নিম্নমানের সিগারেট যদি বিক্রি হয় বা চলতে পারে তাহলেও বিড়ি কেন চলতে পারবে না? সরকার তো রাজস্ব পাবে। ২০১৭-১৮ অথর্বছরে বিড়ির ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করার ফলে বেশকিছু বিড়িশিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আর যেসব এখনো চলছে সেগুলোতেও সপ্তাহে তিন দিনের বেশি কাজ চলে না।
এ কারণে বিড়িশ্রমিকরা চরম আর্থিক সংকটে আছে। আর যদি এখন বিড়িশিল্প বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ১৫ লাখের বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই যেখানে ক্রমশ বাড়ছে, সেখানে বিড়িশিল্প বন্ধ করে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ানোর প্রশ্নই আসে না-- এভাবেই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন আব্দুর রহমান।
বিড়িশিল্প রক্ষায় আমরণ অনশনের ঘোষণা
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৭
এসজে/জেএম