অথচ আলী আক্কাসের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নবীউল হক মোল্লার তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি প্রতিবেদনে বলেছেন, সব অনিয়মের জন্য আলী আক্কাস একা দায়ী নয়।
আলী আক্কাস ১৯৮৩ সালে কারিগরি ক্যাডারে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বিসিআইসিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বিসিআইসির পরিচালক প্রযুক্তি ও প্রকৌশল পদে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালনের আগে তিনি ঘোড়াশাল সার কারখানা ও ফেঞ্চুগঞ্জ প্রাকৃতিক গ্যাস সার কারখানার দায়িত্বে ছিলেন। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন অনিয়ম করায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের নোটিশ দিয়েছিল বিসিআইসি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি পার পেয়ে যান।
২০১০-১১ অর্থবছরে উৎপাদন জালিয়াতি, ওয়াসমিল ও ক্রাসারে মাটি ও পাথর ফিডিংয়ে দুর্নীতি, সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার, বাড়ি ভাড়া, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ বিলের লাখ লাখ টাকা আত্মসাত, টেকেরহাট চুনা পাথর প্রকল্পে লুটপাট, কারখানার মালামাল ও যন্ত্রাংশ ক্রয়ে দুর্নীতি ও চাকরি দেওয়ার জন্য ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আলী আক্কাসের বিরুদ্ধে।
এসব অনিয়মের বিষয়ে এলাকাবাসী ও ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নবীউল হক মোল্লা ঘটনাস্থল পরিদর্শন, অভিযোগকারী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সংশ্লিষ্টদের কাছে জমা দিয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা ৪০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করেছেন, যার মধ্যে স্থানীয় থানার অফিসার ইনচার্জ, সুনামগঞ্জের উপ-কমিশনার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেডের কর্মকর্তা ছিলেন। এরমধ্যে কেউ আক্কাস আলীর পক্ষে কথা বলেননি। বিসিআইসি আলী আক্কাসকে পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়।
ওই প্রতিবেদনে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির এমডি আলী আক্কাসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের অধিকাংশই প্রমাণিত হয়েছে বলে মতামত দিয়েছেন নবীউল হক মোল্লা। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, এমডি বিতর্কিত কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ করানোয় একটি বৈরী পরিবেশ তৈরি করে অরাজকতা সৃষ্টি করেছেন।
এ বিষয়ে আলী আক্কাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি আলী আক্কাসের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বিসিআইসি’র তদন্ত প্রতিবেদনে। উথাপিত এসব অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) মহাব্যবস্থাপক প্রশাসন মোহাম্মদ জাকির হোসেনও একটি তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রতিবেদনে জাকির হোসেন আক্কাসের কোন দোষ খুঁজে পাননি। এসব অনিয়মের সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদ জাকির হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তার অফিসে গেলে সাক্ষাতে কথা বলতে চেয়েছেন।
শিল্প মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আলী আক্কাসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সব সংস্থার তদন্তে আলী আক্কাস অভিযুক্ত হলেও বিসিআইসি’র তদন্ত কর্মকর্তারা এসব অভিযোগের নির্দিষ্ট কোন প্রমাণ খুঁজে না পাওয়ায় তিনি বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি)। চেয়ারম্যান শাহ আমিনুল হক বলে, আমি সদ্য যোগদান করেছি। আগের কোন বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পরে জানাতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
এসই/এমজেএফ