ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প

চামড়া শিল্পে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮
চামড়া শিল্পে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা সাভার চামড়া শিল্পনগরীর রাস্তা-ঘাট বেহালদশা। ছবি: বাংলানিউজ 

ঢাকা (সাভার): সাভার চামড়া শিল্পনগরীর রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় বেহালদশার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা। ইতোমধ্যেই ক্রেতা অর্ধেকে নেমে আসায় ধস নামতে শুরু করেছে চামড়া শিল্পে। অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এ শিল্প হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন ট্যানারি মালিকরা।

সরেজমিনে সাভার চামড়া শিল্পনগরী ঘুরে ট্যানারি মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।  

ফেন্সী লেদার ট্যানারির হিসাব সহকারী মো. রমজান আলী বাংলানিউজকে বলেন, সরকার পরিবেশের কথা চিন্তা করে আমাদের হাজারিবাগ থেকে সাভারে পাঠালো।

কিন্তু এখানে চামড়া শিল্পনগরীর রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় বেহালদশার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা। হাজারিবাগে যেসব ক্রেতারা আসতেন তারাও এখানে আসছেন না। ফলে অর্ধেকে নেমে এসেছে ক্রেতার সংখ্যা।
সাভার চামড়া শিল্পনগরীর রাস্তা-ঘাট বেহালদশা।  ছবি: বাংলানিউজতিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কর্তৃপক্ষ সাভারে চামড়া শিল্পনগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। চালু হয়নি কয়েকটি ইউনিট। পাশাপাশি কেমিকেলমিশ্রিত পানির জন্য যে ড্রেনেজ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত সরু হওয়ায় অতিরিক্ত চাপ নিতে পারছে না। এছাড়া ড্রেন পরিস্কার না করায় তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট।
সাভার চামড়া শিল্পনগরীর রাস্তা-ঘাট বেহালদশা।  ছবি: বাংলানিউজট্যানারি শ্রমিক রাশেদ বলেন, চামড়ার মূল্য কমার প্রকৃত কারণে হলো এখানে ক্রেতা নেই। ট্যানারি শিল্পটি হাজারিবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর করা হলেও এখনও এখানে সব ধরনের মেশিন আসেনি। ফলে ছোট ব্যবসায়ীরা সামান্য পরিমাণ চামড়া নিয়ে তা প্রসেসিং করার জন্য বিভিন্ন কারখানায় যাতায়াত করায় তাদের কস্টিং বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী ক্রেতা না থাকায় চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। চামড়া বিক্রি করতে না পেরে নতুন চামড়া কিনছেন না ট্যানারি মালিকরা।

বিসিকের দুর্বল ব্যবস্থার কারণে রাস্তা-ঘাটের বেহালদশা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিসিকের ট্যানারি স্থাপন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। বিষয়টি আগে পর্যবেক্ষণ করে ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে করা উচিত ছিলো। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নেই। মাঝে মধ্যেই এ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়।
সাভার চামড়া শিল্পনগরীর ড্রেনেজের বেহালদশা।  ছবি: বাংলানিউজরিলায়েন্স ট্যানারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, রাস্তাঘাটের বেহালদশার কারণে ব্যবসারও বেহালদশা। এ কারণেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা। ট্যানারি শিল্পের এ বেহালদশার জন্য বর্তমান বিসিক কর্তৃপক্ষকেই দায়ি করেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রতিফুট চামড়া ৪০-৫০ টাকায় কিনলেও এরসঙ্গে কেমিকেল খরচ হিসাবে অতিরিক্ত আর ৫৫-৬০ টাকা যোগ করতে হয়। এরপর আবার ২৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। তাই সরকারিভাবে চামড়ার দাম কম নির্ধারণ হলেও কেমিকেলের দাম, শ্রমিকের মজুরি, পরিবহন, বিদ্যুৎ-গ্যাস, পানির মূল্য দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বাজারে চামড়ার চাহিদা থাকলেও দাম নেই উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী বলেন, আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সমন্বয় করে চামড়া বিক্রি করতে গেলে ট্যাক্সের টাকাটাও আমাদের মধ্যে পড়ে যায়। যেকারণে কেমিকেল ও ট্যাক্স দিয়ে ৪০ টাকার চামড়ার দাম পড়ে যায় ১২৫ টাকায়। অবিলম্বে সাভার চামড়া শিল্পনগরীর রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর হিসাব রক্ষণ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ইতোমধ্যে ইউজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ এবং রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে চামড়া শিল্পনগরীর সব রাস্তাঘাট মেরামত করা হবে। ঈদের জন্য কিছুদিন রাস্তার কাজ বন্ধ ঈদের পর আবার শুরু হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ড্রেনেজের কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮
ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।