‘পোল্ট্রি ফর হেলথ লিভিং’ স্লোগানকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (০৫ মার্চ) রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে পাঁচ দিনব্যাপী ১১তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন খ্যাতনামা পোল্ট্রি গবেষকরা। ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এ সেমিনারের আয়োজন করে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিং ইয়ং, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর মো. রফিকুল ইসলাম, ওয়াপসা-বিবির সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব হোসেন প্রমুখ।
ওয়াপসা-বিবি সভাপতি বলেন, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যেন খামারিরা অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে, তার উন্নয়ন ঘটাতে হলে পোল্ট্রি শিল্পকেই গুরুত্ব দিতে হবে। পোল্ট্রি বিমা চালু হলে গ্রামের সাধারণ খামারিরাও ব্যাংক ঋণের সুবিধা পাবে।
সেমিনারে বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমেরিকার কব-ভেনট্রেস ইনকের ডিপার্টমেন্ট অব রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের গবেষক ফ্রাঙ্ক সাউয়িয়ার্ডট, অ্যানুওলুয়াপো ফ্রাঙ্ক, মিলিন্ড লাইমি, ভারতের বেঙ্কটেশ্বর রিসার্চ অ্যান্ড ব্রিডিং ফার্ম প্রাইভেট লিমিটেডের জেনেটিক রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক গবেষক জিআই জিম, হুভেফার্মা সি (পুনে) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও পি সিং।
ফ্রাঙ্ক সাউয়িয়ার্ডট ও অ্যানুওলুয়াপো ফ্রাঙ্ক বলেন, ১৯৫০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০০টি কোম্পানি ব্রয়লার ব্রিডিং স্টক সরবরাহ করে আসছিল। মাত্র ৩৪ বছরের ব্যবধানে ওই কোম্পানির সংখ্যা ১শ’টি থেকে ১৯৮৪ সালে ২৮টিতে নেমে আসে। বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি ব্রিডিং কোম্পানি বিশ্বব্যাপী ব্রয়লার বাচ্চার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। গবেষক ও জেনেসিস্টদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পোল্ট্রি জার্মপ্লাজমের উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়টি সুনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
মিলিন্ড লাইমি বলেন, পুষ্টির উপাদানগুলোর মধ্যে পানি অন্যতম এবং সহজলভ্য একটি উপাদান। মানুষের যেমন বিশুদ্ধ পানি প্রয়োজন হয়, ঠিক একইভাবে পোল্ট্রির ক্ষেত্রেও বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। পানির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ এবং সরবরাহের ওপর নির্ভর করে পোল্ট্রি খামারের লাভ-ক্ষতি। বৃহৎ আকারের ক্ষেত্রে তাই গুণগত মানের পানি সরবরাহ করা একটি অপরিহার্য বিষয়। বিজ্ঞানীরা এখন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছে।
ও পি সিং বলেন, দ্রুত বর্ধনশীল পোল্ট্রি উৎপাদনের মাধ্যমে পৃথিবীর বর্ধিত জনসংখ্যার পুষ্টির চাহিদা যোগান দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ভারতে পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগ ১৪ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ইউরো এবং ব্রয়লার উৎপাদনের পরিমাণ ২০১৫-১৬ সালে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন টন বেড়েছে। ভারতীয় পোল্ট্রি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খাদ্যের গুণাগুণ ও পুষ্টি মান, কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা, সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার সংকট, আধুনিক ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য উৎপাদন, বায়োসিকিউরিটি এবং সাধারণ জনগণের সচেতনতাবোধ ইত্যাদি।
সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় পোল্ট্রি বিজ্ঞানী ও কব-ভেনট্রেস ইনকে’র সিনিয়র ডিরেক্টর ড. ফ্রাঙ্ক সিওয়ের্ড বলেন, পোল্ট্রিতে আজকের এ অগ্রগতি অনেক কষ্টের ফসল। এটি অত্যন্ত ধীর প্রক্রিয়া। বহু বছরের সাধনার পর এ অগ্রগতি এসেছে।
ওয়াপসা-বিবির সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে, সেজন্য স্বাস্থ্যবান জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে টেকসই ও সমতাভিত্তিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দেশের মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য একটি আর্থ-সামাজিক মডেল প্রয়োজন। এগুলোর ভালো সমাধান দিতে পারে পোল্ট্রি শিল্প। কারণ মানসম্পন্ন পুষ্টি সরবরাহে বড় অবদান রাখছে পোল্ট্রি খাত।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৯
টিএম/ওএইচ/এইচএ/