একই সঙ্গে আমরা ধান ছাড়া অনেক অপ্রচলিত ফসল উৎপাদন করছি। সেগুলো কিভাবে প্রসেস করা যায় সে বিষয়ে তাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি।
তারা বিশেষজ্ঞ পাঠাবেন এবং আমাদের দেশ থেকেও উদ্যোগক্তাদের নিয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
বুধবার (৪ মার্চ) কৃষি মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে ঢাকায় সফররত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া জিআই সহকারী মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি মি. ক্রিস্টোফার উইলসন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের নেতৃত্বে ছয় সদস্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, তুলার মাধ্যমে কোনো জীবাণু বা পোকামাকড় (কটন বল ইউবিল) বাংলাদেশে আসুক, এটা আমরা কোনো ক্রমেই চাই না। তারা বলেছে আমরা ফিউমিগেশন করে দেই। ফলে ডাবল ফিউমিগেশনের প্রয়োজন নেই। এটা না করলে বাংলাদেশে যে আইন আছে সেটা পরিবর্তন করতে হবে। এ বিষয়ে তারা গত কয়েক বছর ধরে চাপ দিচ্ছে। কারণ তাদের ডাবল ফিউমিগেশন করতে খরচ বেশি পড়ে যায়। সময় নষ্ট হয়, অনেক সময় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে যেহেতু চায়না ও ভারত থেকে তুলা আনতে ডাবল ফিউমিগেশন করতে হয় না। তাদেরটা ঝামেলা বেশি হওয়ায় বায়াররা কিনতে চায় না।
তিনি বলেন, ইউএসএ থেকে প্রতিবছর তুলা আমদানি করতে ডাবল ফিউমিগেশন করতে হয়। কারণ তুলায় যাতে কোনো জীবাণু বা পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত না থেকে। যদিও তারা তুলা এমনভাবে ফিউমিগেট করে দেয় তাতে কোনো জীবাণু বা পোকামাকড় থাকার কথা না। কিন্তু আমাদের একটা আইন আছে তুলায় (কটন বল ইউবিল) নামে একটা পোকা আছে যে খুবই মারত্মক ক্ষতিকারক এবং জীবনের জন্য খুবই হুমকিস্বরুপ। কোনোক্রমেই যেন এই পোকাটা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে তুলা আসে সেটা আমরা এখানে আবার ফিউমিগেট করি। তারা বলে এই ডাবল ফিউমিগেশনে খরচ হয় বেশি এবং এটা একটা ঝামেলার কাজ তাই এটা তুলে দিতে হবে। আমরা বলেছি আমাদের একটা আইন আছে দেশে সে আইন পরিবর্তন করতে হবে বা সংশোধন করতে হবে। তাছাড়া এটা আমরা করতে পারবো না।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ রয়েছে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যাওয়া হয়নি। কারণ তারা জানিয়েছেন তাদের তুলা হারভেস্ট হয়ে গেছে এখন সময় নেই। এজন্য আমরা প্রস্তাব করেছি পরবর্তী তুলার মৌসুমে এই বিশেষজ্ঞ টিম যাবে এবং দেখবে কীভাবে তারা তুলা ফিউমিগেশন করে ও সেটা নিরাপদ কিনা সেটা দেখবে। তারপর আমরা পরের মৌসুমের জন্য সিদ্ধান্ত নেবো। এতে তারা রাজি হয়েছেন। তারা বলেছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটা ভালো। আমরা এটা পলিসি লেভেলে আলোচনা করছি। এ প্রস্তাব আমরা অনেক গুরুত্ব দিচ্ছি। কিন্তু বিভিন্ন দিক-বিবেচনায় না নিয়ে ও নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা ডাবল ফিউমিগেশন বন্ধ করতে পারব না। অর্থাৎ আমাদের দেশে আমরা যে ফিউমিগেশন করি সেটা চট্টগ্রাম বন্দরে। সেখানে যে ফিউমিগেশন হয় সেটা আমাদের করতেই হবে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা তাদের বলেছি কৃষিখাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ তোমরা এখন আমাদের এগ্রো প্রসেসিং এ প্রযুক্তি ও সহায়তা দিতে পারো। তাদের কাছে অনেক প্রযুক্তি আছে। তারা চাইলেই সহায়তা করতে পারেন। তবে ইউএসএ সরকার, ইউএসএইড ও ইউএসডিএ আমাদের কৃষিখাতের উন্নয়নে তারা অনেক সহযোগিতা করেছে। তারা আমাদের টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছে। আজকে বাংলাদেশ বিশেষ করে দানা জাতীয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা এখন চেষ্টা করছি বাংলাদেশের কৃষিখাতকে আরও আধুনিকায় করতে এবং আমাদের ঐতিহ্যবাহী কৃষিখাতকে বাণিজ্যিকীকরণ করতে চাই। একই সঙ্গে আংশিক যান্ত্রিকিকরণ হয়েছে, আমরা চাই সম্পূর্ণরূপে যান্ত্রিকিকরণ করতে চায়। জমি চাষ থেকে শুরু করে হারভেস্ট ও মারাই পর্যন্ত৷ ধান লাগানো, কাটা, মাড়াই সবকিছু আমরা যান্ত্রিকিকরণ করতে চাই যাতে উৎপাদন খরচ কমে যায় কৃষকরা লাভবান হয়। আমাদের দেশে শ্রমিকের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এই যান্ত্রিকিকরণেও তারা চাইলে আরও সহজ ও ভালো প্রযুক্তি দিয়ে।
জিএসপি নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিএসপি নিয়ে আলোচনা করিনি। তারা বললো সেটা নিয়ে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আলোচনা হবে। আমি বলেছি, তোমরা প্রতিবছর মিটিং কর কিন্তু এর কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এজন্য আমাদের মধ্যে এই মিটিং নিয়ে হতাশা কাজ করে। আমরা অনুরোধ করেছি যে, এবছর যেন এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আলাপ করা হয়। আমরা তো সব শর্ত পূরণ করেছি। এজন্য আমি আশাবাদী এ বছর একটা ভালো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বৈঠক থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২০
জিসিজি/এএটি