ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প

স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্প-কারখানা চালুর প্রস্তুতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২০
স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্প-কারখানা চালুর প্রস্তুতি কাজ করছেন শ্রমিকরা।

ঢাকা: করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে আমদানি-রপ্তানি। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। দুশ্চিন্তা বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। 

এ অবস্থায় শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্প কারখানা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বেকারত্ব রোধ, দরিদ্রদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি ও অর্থনীতির ক্ষতি কমিয়ে আনতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বুধবার (২২ এপ্রিল) বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে একাধিক ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বৈশ্বিক মহামারির কারণে সারা বিশ্ব কার্যত লকডাউনে থাকায় আমদানি-রপ্তানিতে ধস নেমেছে। লকডাউনের কারণে রপ্তানি বন্ধ, ব্যাংক ঋণের ইন্টারেস্ট এবং ক্রয় আদেশ বাতিল হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পোশাক খাতের পণ্য, প্রসাধনী, মুদ্রণ শিল্প, চিকিৎসা সরঞ্জাম, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক পণ্য, প্লাস্টিক শিল্পসহ দেশের অভ্যন্তরীণ সব ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের তৈরি পোশাকখাতের এক হাজার ১৪৪টি কারখানায় ৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা। রফতানি আদেশ বাতিল হওয়া এসব কারখানায় ২২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন।

দেশের রপ্তানি খাতের সিংহভাগ তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। তাই এ খাতের নেতিবাচক প্রভাব পুরো রপ্তানি বাণিজ্যে আঘাত হানবে। তাই লকডাউনের মধ্যেও পোশাক কারখানা স্বল্প পরিসরে চালু রাখার দাবি উঠেছে। শারীরিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পোশাক কারখানা চালুর প্রস্তুতিও নিচ্ছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সিনিয়র সহ সভাপতি ফয়সাল সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, এই মুহূর্তে আমরা ফ্যাক্টরিগুলোর প্রটোকল ঠিক করছি। এরপর এক্সপোর্টও করতে হবে। বায়াররা যেগুলো অর্ডার করেছে সেগুলো চাচ্ছে। তবে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আমরা ফ্যাক্টরি চালু করতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের ফ্যাক্টরিগুলো সার্ভে হচ্ছে। আমরা তথ্য পাচ্ছি। তড়িঘড়ি করার কোনো সুযোগ নেই।

করোনার প্রভাবে শুধু পোশাকখাত নয়, চামড়া শিল্পেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। করোনার কারণে ৪৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু করার বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কাঁচা চামড়া ২০ থেকে ২৫ বা সর্বোচ্চ একমাস লবণ দিয়ে রাখা যায়। এরপর সেটি ফিনিশিং না করলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে ফ্যাক্টরি চালু করার চিন্তা করছি। যারা এটি মেনে করতে পারবেন তারাই চালু করবেন। আর যারা তা মানবেন না, তারা ফ্যাক্টরি চালু করতে পারবেন না।  

এদিকে, লকডাউনের কারণে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন প্লাষ্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়ীরা। শুধু আন্তর্জাতিক বাজারে নয়, স্থানীয় বাজারেও এর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি ও বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের বেশকিছু অর্ডার বাতিল হয়েছে। আবার অনেকের অর্ডার রয়েছে। তাই সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি যারা মানতে পারবেন তারা ফ্যাক্টরি চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।  

তিনি আরও বলেন, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, কোরিয়া ও তাইওয়ানে লকডাউনের মধ্যেও ফ্যাক্টরি চালু রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সব ফ্যাক্টরি অল্প পরিসরে হলেও চালু রাখা প্রয়োজন।  

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গত ৭ দিন ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যারা কাজ করছেন, বিশেষ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সংক্রমণের ঝুঁকি না নিয়ে কিভাবে সবকিছু চালু করা যায়, এ ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। প্রস্তুতি বাস্তবায়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেই সবকিছু চালু করার চিন্তা করছি আমরা। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগতে পারে।  

অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা বৈশ্বিক অর্থনীতিসহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে প্রভাব ফেলেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, রেমিট্যান্স, আমদানি ও রপ্তানি, ট্রান্সপোর্ট খাত ও ট্যুরিজম খাতে প্রভাব পড়েছে। এ কারণেই করোনা আমাদের অর্থনীতির জন্য হতাশার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অল্প পরিসরে হলেও ধীরে ধীরে ফ্যাক্টরিগুলো চালু করা প্রয়োজন।  

তবে প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সামান্য কমতে দেখে কোনো দেশ যদি আগেভাগে লকডাউন তুলে নেয়, তাহলে ভাইরাসটি আরও ভয়ংকর রূপে প্রত্যাবর্তন করতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কোভিড-১৯ এর প্রকোপে বিপর্যস্ত দেশগুলোকে লকডাউন ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনেরও পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২০
এসএমএকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।