ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জনবান্ধব স্মার্ট উদ্যোগ ‘সাথী’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জনবান্ধব স্মার্ট উদ্যোগ ‘সাথী’

ঢাকা: স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে নাগরিক সেবাকে আরও সহজ ও জনবান্ধব করে তোলার পাশাপাশি ডিজিটাল ডিভাইড শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে স্মার্টসেবার উদ্যোগ নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

এই বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং ডাক অধিদপ্তর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এসপায়ার-টু-ইনোভেট-এটুআইর কারিগরি সহযোগিতায় ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড পলিসি বাস্তবায়নের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ ‘সাথী’ অবমুক্ত করেছে।

এর মাধ্যমে মোবাইল এয়ারটাইমভিত্তিক সরকারি সেবার ফি পরিশোধ, স্মার্ট আর্টিকেল কালেকশন (চিঠি, ডকুমেন্ট, পারসেল), স্মার্ট মোবাইল ডাকঘর এবং স্মার্ট পোস্ট বক্সের মতো স্মার্টসেবার পাইলট কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

নির্বাচনকালীন সরকারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্ব পাওয়ার পরে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক ৬ ডিসেম্বর পৃথক সভায় এ স্মার্টসেবা কার্যক্রমগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার নির্দেশনা দেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এটুআইর সহায়তায় ইতোপূর্বে আয়োজিত স্মার্ট সার্ভিস ডিজাইন ল্যাব থেকে উদ্ভূত সব স্মার্টসেবাগুলো বাস্তবায়নে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।

স্মার্ট বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ ‘সাথী’ মূলত অ্যাপলের সিরি কিংবা আমাজনের অ্যালেক্সার মতোই একটি ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ হিসেবে চালু করা হচ্ছে। স্মার্ট নাগরিকের জন্য স্মার্ট সংযোগ। এটা এমন একটা সংযোগ ব্যবস্থা, যা হবে মানুষের সাথী বা পার্টনার। তার কাছ থেকে ব্যবহারকারী সব ধরনের তথ্য পাবেন। এটুআই উদ্ভাবিত এআই প্রযুক্তির  ‘সাথী’ অ্যাপ জিরো রেট ও প্রতিটি মোবাইলে ডাউনলোড করার জন্য বিটিআরসি সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে।

সরকারের সব ধরনের ডিজিটাল সেবা ও পেমেন্ট সেবা এতে সংযুক্ত থাকবে। ফলে নাগরিকরা আগের চেয়ে মোবাইল ব্যবহার করে বেশি বেশি কাজ সহজে করতে পারবেন। এরই মধ্যে  ‘সাথী’র একটি প্রাথমিক ইন্টারফেস তৈরি হয়েছে।  ‘সাথী’ মোবাইল নম্বরের সঙ্গে ‘একীভূত’ করা থাকবে।

মোবাইলে সিম চালু থাকলেই এটি সেটে সক্রিয় হবে না বরং মোবাইলে ইনস্টল করে নিতে হবে। তবে এটি ডাউনলোড করতে যাতে ব্যবহারকারীর কোনো ধরনের ডাটা (ইন্টারনেট) খরচ না হয় সেই ব্যবস্থাও থাকবে। সাথী যাতে মোবাইলে খুব বেশি জায়গা না নেয় সেটা নিয়েও ভাবা হচ্ছে। স্মার্ট ও ফিচার ফোন- দুই ফোনেই ‘সাথী’ ব্যবহার করা যাবে। সাথীকে অ্যাপ স্টোর বা প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিতে হবে।

যেসব ব্যবহারকারী ইউএসএসডি বা অন্যান্য ফিচার ব্যবহার করতে অস্বচ্ছন্দ বোধ করেন, সাথীকে মুখে বললেই কানেক্ট করিয়ে দেবে সেসব সেবায়। কলসেন্টার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও কথা বলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে ‘সাথী’। ধীরে ধীরে বেসরকারি অপারেটর ও বিভিন্ন সেবাকেন্দ্রের সেবাকেও সাথী সংযোগ করিয়ে দেবে। এতে করে মোবাইলে বিভিন্ন সেবার জন্য বিভিন্ন অ্যাপের ব্যবহার কমে আসবে। সাথীর বিভিন্ন ফিচার পর্যায়ক্রমে গ্রাহকের কাছে উন্মুক্ত করা হবে। এক্ষেত্রে সাথী ইনস্টল করা থাকলে প্রতিটি ফিচার উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লে-স্টোর ও আপ-স্টোরে থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হবে। ‘সাথী’ একটি জিপিটি এনাবল এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ব্যবহারকারীর সেবা দিতে দিতে আরও স্মার্ট হতে থাকবে। গ্রাহকের সুবিধার্থে ভবিষ্যতে ‘সাথী’র সঙ্গে চ্যাটবট যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এছাড়া জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩- এর এআই অ্যাসিস্ট্যান্টকে জরুরি হেল্পলাইন ৯৯৯- এর সঙ্গে সংযুক্ত করে একটি কমন এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট গড়ে তোলা হবে। এক্ষেত্রে বিটিআরসি এবং এটুআই একসঙ্গে কাজ করবে। এছাড়া টেলিকম সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ প্রতিকারের জন্য জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩- এর এআই অ্যাসিস্ট্যান্টকে প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে।
নাগরিকদের বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন সরকারি সেবার অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়া সহজ করার লক্ষ্যে ডিরেক্ট অপারেটর বিলিং (ডিবি) পেমেন্ট সিস্টেম চালু করা হবে। ডিবি হলো একটি অর্থপ্রদানের পদ্ধতি, এর মাধ্যমে মোবাইলফোন গ্রাহকরা এয়ারটাইম ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদির অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। সব সরকারি সেবায় ডিওবি চালু হলে পেমেন্ট চ্যানেলের ঝামেলা দূর করা সম্ভব হবে এবং একই সঙ্গে নাগরিকরা ঘরে বসে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা উপভোগ করতে পারবেন।

এয়ারটাইম ইন্টারঅপারিবিলিটি ও অন্যান্য নাগরিকবান্ধব সেবাকে ডিবির আওতায় আনার জন্য বিটিআরসির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ডাক অধিদপ্তরের আওতায় স্মার্ট আর্টিকেল কালেকশন (চিঠি, ডকুমেন্ট, পারসেল) সেবার আওতায় নাগরিকরা ডাকঘরে না এসে ঘরে বসেই যেকোনো ডিভাইসের মাধ্যমে প্রেরক ও প্রাপকের ঠিকানা এবং ডাকযোগে প্রেরিতব্য আর্টিকেরের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে ঠিকানা লেবেল প্রিন্ট করতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা মাদকদ্রব্য ডাকঘরের নিয়োজিত ‘র্যাপিড রানাররা’ প্রেরকের ঠিকানা থেকে সংগ্রহ করবেন ও ডাকযোগে প্রেরণের ব্যবস্থা নেবেন। এই সেবার আওতায় ডাকযোগে প্রেরিত ডকুমেন্ট ও পারসেলগুলো ট্র্যাক ও ট্রেসিংয়ের আওতায় থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা শহরের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ঠিকানাগুলো থেকে সংগ্রহপূর্বক দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো ঠিকানায় প্রেরণের জন্য এই সেবা চালু হতে যাচ্ছে।

স্মার্ট মোবাইল ডাকঘরের মাধ্যমে দেশের প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো থেকে দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো ব্যবসায়ী, দোকান ও ভোক্তার ঠিকানায় পারসেল যোগে বিভিন্ন বিকৃত পণ্য পাঠানো যাবে। সপ্তাহের সাত দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চালু থাকা এই স্মার্ট মোবাইল ডাকঘরগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোই অবস্থান করে নিয়মিত ডাকঘরের বর্ধিত সেবা হিসেবে কাজ করবে।  

এই ডাকঘরগুলো থেকে প্রেরিত পণ্যগুলো দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে দ্বিতীয় কর্মদিবসেই পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকার প্রধান কয়েকটি পাইকারি বাজারে স্মার্ট মোবাইল ডাকঘরের অপারেশন শুরু হবে। এই ডাকঘরগুলো পর্যায়ক্রমে দেশের সব বাণিজ্যিক কেন্দ্রে সম্প্রসারণ করে কমিউনিটি লেভেলেও সম্প্রসারিত করা হবে।
কমিউনিটি পর্যায়ে ‘স্মার্ট পোস্ট বক্স’ নামক একটি অটোমেটেড ডেলিভারি সেবা চালুর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী নির্দেশনা দেন।

এটুআই উদ্ভাবিত স্মার্ট পোস্ট বক্সগুলো চালু করা হলে কমিউনিটি পর্যায়ে স্থাপিত ‘স্মার্ট পোস্ট বক্স’ এগুলোতে নাগরিকদের বিভিন্ন ঠিকানায় আগত ডাকদ্রব্যগুলো পৌঁছে দেওয়া হবে। এই বক্সে প্রদান করা মাত্রই নির্দিষ্ট প্রাপক তার মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পাবেন। পরবর্তীতে নিজ পরিচয় নিশ্চিত করে নির্দিষ্ট বক্স থেকে নির্দিষ্ট ডাকদ্রব্য সংগ্রহ করতে পারবেন। সম্পূর্ণভাবে ডিভাইস ও প্রযুক্তিনির্ভর এই অবকাঠামো হতে কোনো ধরনের জনবলের উপস্থিতি ছাড়াই সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টাজুড়ে ডাকদ্রব্য সংগ্রহ করা যাবে। প্রাথমিকভাবে প্রধান প্রধান জনবহুল এলাকায় ধারাবাহিকভাবে এই বক্সগুলো স্থাপন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।