প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যে বাংলাদেশ যেমন প্রাচুর্যময়, তেমনি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও নানা উৎসব আয়োজনেও আকর্ষণীয় এ দেশের মানুষের জীবনধারা। বিশেষ করে ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ-এর মতো প্রধান উৎসবগুলোর সময় মানুষে মানুষে যোগাযোগ, ভাবের বিনিময় বেড়ে যায় সঙ্গত কারণেই।
অসাধুচক্রের অপকৌশল সম্বন্ধে ধারণা থাকলে আর একটু সতর্ক হলেই এসব প্রতারণার ফাঁদ এড়ানো সম্ভব। এমন কিছু কৌশল হলো -
ঈদ বা উৎসবকে কেন্দ্র করে ‘অস্বাভাবিক উপহারের ঘোষণা’ সম্পর্কে সজাগ থাকা
যে কোনো উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে এক ধরনের অসাধুচক্র ‘উপহার পাবেন’ বা ‘উপহার জিতেছেন’ প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে চেষ্টা করে সরলমতি গ্রাহককে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সরাসরি মোবাইলে–‘আপনি উপহার জিতেছেন’, ‘আপনি প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাচ্ছেন’ বা বড় কোনো কোম্পানি থেকে ঈদ উপলক্ষে আপনাকে টাকা উপহার দেওয়া হবে, এমন অসংখ্য তথ্য দিয়ে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে তারা।
এমন কোনো ঘোষণা বা তথ্য দেখলে বা কোনো লিংক দেখলে তা ক্লিক করা কিংবা কোনো ধরনের তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। অনেক সময় আবার কোনো লিংকে ক্লিক করার পর নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বরের মতো ব্যক্তিগত তথ্য দিতে বলা হয়ে থাকে, নিশ্চিত না হয়ে এরকম কোনো তথ্য কাউকে দেওয়া বিপদজনক।
বাস্তবতা হলো, কোনো ধরনের উপহার বা পুরস্কার এমন গড়পরতাভাবে সবার জন্য বিতরণ করা হয় না। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজ থেকে সত্যতা যাচাই করে নেওয়া ভালো। কোনো ধরনের অফিসিয়াল বার্তা না পেলে এগুলো সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে হবে। নিরাপদ থাকতে মোবাইলে মেসেজ বা কল এলেও এড়িয়ে যাওয়া অথবা যাচাই করা উচিত।
‘অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে’ এমন তথ্যকে যাচাই করা
‘আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে’–বিভিন্ন সময় প্রতারকরা এমএফএস কর্মকর্তা সেজে এভাবে ভয় দেখিয়ে গ্রাহককে প্রতারণার জালে আটকায়। আদতে এটি একটি প্রতারণার চেষ্টা। এমন কোনো ফোন পেলে ঘাবড়ে না গিয়ে যাচাই করা এবং প্রয়োজনে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করা জরুরি।
‘ভুল করে টাকা চলে গেছে’ এমন কথায় বিশ্বাস না করে নিজের অ্যাকাউন্ট চেক করা
‘আপনার এমএফএস অ্যাকাউন্টে ভুল করে টাকা চলে গেছে, ফেরত দিন’–এমন কথা বলেও আপনাকে প্রতারণায় ফেলতে পারে। কোনো টাকা ফেরত দেওয়ার আগে প্রথমেই নিজের এমএফএস অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স যাচাই করে নিন।
‘খুব বিপদ, জরুরি সাহায্য প্রয়োজন’ এমন আবেদনে সাড়া দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকা
‘আপনার সন্তান/আত্মীয়/আপনজন বিপদে পড়েছে, টাকা পাঠান’–ফোন করে বা সামাজিক মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে এভাবে প্রতারণার ফাঁদ পাততে পারে। যতো বিপদের কথাই বলুক, আপনাকে যতটাই বিচলিত করার চেষ্টা করুক না কেন, আগে নিজে খোঁজ নিয়ে তথ্যের সত্যতা যাচাই করুন। বিপদের কথা বলে আপনার দুর্বল মুহূর্তের সুযোগ যেন কেউ নিতে না পারে সে ব্যপারে সর্তক হোন।
‘প্রলোভনে’ প্রতারিত না হওয়া
চাকরি পেয়েছেন, লটারি জিতেছেন, টাকা দান করা হচ্ছে, অল্প বিনিয়োগে অধিক লাভ, প্রায় বিনামূল্যে পাচ্ছেন দামী পণ্য এমন অসংখ্য প্রলোভনে ফাঁসিয়ে আপনার কাছ থেকে অর্থ নিতে চেষ্টা করতে পারে প্রতারকরা। একটা বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, কোনো কারণ ছাড়াই কিছু প্রাপ্তির সুযোগ নেই বললেই চলে। ফলে প্রলোভনে পড়ে প্রতারণার ফাঁদে জড়াবেন না। এমন কোনো প্রস্তাব পেলে এড়িয়ে যান অথবা যাচাই করুন, প্রশ্ন করুন।
আর্থিক লেনদেন সব সময়ের জন্য যে সতর্কতা মেনে চলা জরুরি
• পিন এবং ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) এগুলো গোপন তথ্য। কখনোই শেয়ার করা যাবে না।
• অপরিচিত নম্বর থেকে আসা সন্দেহজনক ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা না বলে কেটে দিন, প্রয়োজনে যাচাই করুন।
• অপরিচিত কাউকে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
• ভুল করে টাকা চলে গেছে বললে আগে নিজের অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স চেক করে নিশ্চিত হোন।
• কাছের কেউ বিপদে পড়েছেন বলে সহায়তা চাইলে আগে সত্যতা যাচাই করুন।
• অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে এমন কোনো তথ্য দিলে প্রথমেই নিজে কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে সত্যতা যাচাই করুন।
• সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব পরিচিত কেউও টাকা চাইলে দেয়ার আগে তার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ অ্যাাকউন্ট হ্যাক হয় এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহার হয়।
• টাকা দ্বিগুণ হবে, অল্পদামে পণ্য পাওয়া যাবে, চাকরি পাবেন, পুরস্কার পাবেন এমন প্রলোভনেও বিশ্বাস করা যাবে না।
এমএফএস অ্যাকাউন্ট আপনার টাকার ওয়ালেট। যে কোনো ধরনের তথ্য পেলে আগে নিজে যাচাই করুন। তাহলেই আপনার অ্যাকাউন্টটি সম্পূর্ণ নিরাপদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৪
এইচএ/