চীনের নিজস্ব স্যাটেলাইট নেভিগেশন ব্যবস্থা ‘বেইদো’ গত বছর দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে আরও দৃঢ় অবস্থান অর্জন করেছে। এর অর্থনৈতিক প্রভাব ৭ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি এখন আরও বেশি সংখ্যক ডিভাইসে সেবা দিতে সক্ষম।
প্রাচীন চীনে নৌযাত্রায় দিকনির্দেশনার জন্য ব্যবহৃত সাতটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নামে নামকরণ করা 'বেইদো' ২০২৪ সালে মোট ৭৯.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অর্থনৈতিক কার্যকলাপে অবদান রেখেছে। এই তথ্য জানিয়েছে চীনের আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান জিএনএসএস এন্ড এলবিএস অ্যাসোসিয়েশন।
বর্তমানে চীনে ২৮৮ মিলিয়ন স্মার্টফোনে ‘বেইদো’ ব্যবহৃত হয়— যেগুলোর বেশিরভাগই স্থানীয় ব্র্যান্ড যেমন হুয়াওয়ে ও শাওমির তৈরি। প্রতিদিন 'বেইদো'-এর মাধ্যমে ১ ট্রিলিয়নেরও বেশি লোকেশন ট্র্যাক করা হয়।
চীনের জনপ্রিয় নেভিগেশন অ্যাপ ‘বেইদো ম্যাপ’ ও ‘এম্যাপ’ জানিয়েছে, তারা প্রতিদিন বেইদো ম্যাপ সিস্টেম ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের মোট ৪০০ কোটি কিলোমিটার পথ দেখিয়ে সহায়তা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জিপিএস সেবার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার সময় দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেইজিং বেইদো-তে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। তবে বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজারও এই প্রযুক্তিকে একটি লাভজনক ব্যবসায় রূপ দিয়েছে।
সাধারণ স্মার্টফোন এবং যানবাহনের নেভিগেশন ব্যবস্থার বাইরে বেইদো এখন ড্রোন, স্মার্টওয়্যার, ইলেকট্রিক বাইক এবং রোবটসহ বিভিন্ন আধুনিক ডিভাইসের সঙ্গে সামঞ্জস্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া।
এছাড়া, বেইদো বর্তমানে চীনে নিজস্ব কাভারেজ বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করছে যাতে সিগন্যাল লেটেন্সি (বিলম্ব) কমানো যায়। অন্যদিকে, চীনে জিপিএস ব্যবহারে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাজনিত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
চেজিয়াং সাই-টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখন অনেক চীনা ডিভাইসে জিপিএস ব্যবহার করা যায় না, অথবা নিরাপত্তার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করা হয় না। বিশেষ করে সরকারি সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বা সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে এ ধরনের সীমাবদ্ধতা বেশি দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো চীনে উচ্চ-নির্ভুলতার মানচিত্র ডেটা সংগ্রহে নানা বিধিনিষেধের সম্মুখীন হয়। তবে অনেক স্মার্টফোন যেমন আইফোনে জিপিএস ও বেইদো উভয়ই ব্যবহার করা যায় এবং ডিভাইসটি সেরা সিগন্যালটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেছে নেয়।
বেইদো ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে চিপ, অ্যালগরিদম, ডেটা প্রসেসিং, টার্মিনাল যন্ত্রপাতি ও ভূ-অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। এছাড়া স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অবকাঠামোও সম্প্রসারিত হচ্ছে।
বেইদো ইতোমধ্যে বৈশ্বিকভাবে তার কভারেজ বিস্তার করেছে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ এমন দেশগুলোতে আরো নির্ভুল সেবা দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
চীনের স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন অফিস জানিয়েছে, তারা ২০৩৫ সালের মধ্যে বেইদো সিস্টেমের বর্তমান স্যাটেলাইটগুলোকে আরও উন্নত সংস্করণ দ্বারা প্রতিস্থাপন করবে। এই নতুন স্যাটেলাইটগুলো সেন্টিমিটার-পর্যন্ত নির্ভুল ‘রিয়েল-টাইম লোকেশন’ সেবা দিতে পারবে।
রাষ্ট্রীয় মিডিয়া অনুসারে, এই স্যাটেলাইটগুলো গভীর সমুদ্র অনুসন্ধান এবং উচ্চ-উচ্চতায় বিমান চলাচলেও নির্ভুল নেভিগেশন সেবা দিতে পারবে।
সূত্র: সাউথ চাইনা মর্নিং পোস্ট
এমএম