ঢাকা: দশটি নাগরিক সমস্যার মোবাইল প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান খুঁজে বের করতে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নে সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচি’র আয়োজনে শুরু হয়েছে ‘জাতীয় হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা’।
শনিবার (৬ সিম্বের) সকালে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে ৩৬ ঘণ্টার এ হ্যাকাথনের উদ্বোধন করা হয়েছে।
হ্যাকাথনে তরুণ প্রযুক্তিবিদেরা টানা ৩৬ ঘণ্টা কাজ করে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ, যৌন হয়রানি রোধ, যানজট, নিরাপদ সড়ক, দুর্নীতি রোধ, নিরাপদ প্রজনন স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, সাইক্লোন সেন্টার ম্যানেজমেন্ট, নিরাপদ পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন সমস্যার প্রযুক্তিনির্ভর ‘উদ্ভাবনী’ সমাধান বের করবেন।
৩৬ ঘন্টার এ হ্যাকাথন বাস্তবায়নে রয়েছে এমসিসি লিমিটেড। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সহযোগিতায় রয়েছে ইএটিএল, বেসিস, সিম্ফোনি, গ্রামীণফোন, রবি, সোলকোয়েস্ট, গুগল ডেভেলপার গ্রুপ, বেটার স্টোরিজ ও বিডিভেঞ্চার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জুনাইদ আহমদ পলক বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা শুধু বিভিন্ন সমস্যার কথা বলি। এসব সমস্যার জন্য একে অন্যকে দায়ী করে সমালোচনা করে থাকি। ট্রাফিক জ্যাম, প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে সবাই কথা বলছি। কিন্তু এর সমাধান নিয়ে কেউ কথা বলছি না। আমরা কি শুধু সমস্যা নিয়েই কথা বলবো, না কি এসব সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবো?
অনুষ্ঠিত হ্যাকাথনকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যাকাথন আখ্যা দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই হ্যাকাথনের মাধ্যমে তরুণ প্রযুক্তিবিদেরা নাগরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবেন। এর আগে দেশে ছোট পরিসরে আরো দু’বার হ্যাকাথন অনুষ্ঠিত হলেও এবারের হ্যাকাথন বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হ্যাকাথন।
মন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সরকার সব সময় তরুণ প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে এ হ্যাকাথনে তরুণ প্রযুক্তিবিদদের লিখিত মতামত গ্রহণ করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী ‘ভিশন-২০২১’ শীর্ষক একটি কর্মশালা পরিচালনা করেন। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা নির্দিষ্ট ফরমে ২০২১ সাল নাগাদ কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান সে বিষয়ে লিখিত মতামত দেন।
হ্যাকাথন প্রতিযোগিতায় এক হাজার ৬৭৫ জন তরুণ প্রযুক্তিবিদ, প্রোগ্রামার, ফ্রি-ল্যান্সার, শিক্ষার্থী, অ্যাপনির্মাতা ২৮৮টি টিমে বিভক্ত হয়ে অংশ নিচ্ছেন। একই সঙ্গে অংশ নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট ৫৯টি পেশাদার কোম্পানি।
এ আয়াজনে অংশগ্রহণকারী সেরা বিজয়ী দল বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিভিন্ন পুরস্কারের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকার ইনোভেশন ফান্ড পাবে। এছাড়া সেরা দশটি দলকে সরকারের পক্ষকে দুই লাখ করে টাকা দেওয়া হবে।
দু’দিনব্যাপী হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা বাস্তবায়নে পাঁচ সদস্যের কোডার ও ডিজাইনারের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে হ্যাকাথন ‘ম্যারাথন কোডিং ইভেন্ট’ হিসেবে স্বীকৃত। হ্যাকাথনে ডেভেলপারদের দক্ষতার চূড়ান্ত প্রদর্শনী হয়।
এবারের হ্যাকাথনে অংশগ্রহণকারীরা বিরতিহীনভাবে ৩৬ ঘণ্টাব্যাপী কোডিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সলিউশনের প্রোটোটাইপ (নমুনা সমাধান) করবেন। ৩০ জন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রতিযোগিতার মূল্যায়নের দায়িত্বে থাকবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, ‘জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নে সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচি’র প্রকল্প পরিচালক মীনা মাসুদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব শ্যামা প্রসাদ ব্যাপারী, বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুপন বীরা সিংহে।
হ্যাকাথনে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি’র পক্ষ থেকে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে এক মাসের ইন্টারনেট ডাটাসহ বিনামূল্যে একটি করে সিম দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পৃষ্ঠপোষক কিউবি’র পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ১০০ এমবিপিএস গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ওয়াইফাই জোন করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৪