ঢাকা: কিছুদিন আগেও প্রযুক্তিপ্রেমীদের ফেসবুকে পদচারণা বেশ লক্ষণীয় ছিল। বিশেষত টিনেজারদের ফেসবুকপ্রেম বৃদ্ধির পারদ এতোটাই দৃশ্যমান ছিল যে, শেষ পর্যন্ত এটাকে আসক্তিও বলতে হয়েছিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির এ উম্মাদনায় শামিল ছিল উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর স্কুল-কলেজপড়ুয়া বিপুলসংখ্যক টিনেজার।
তবে, এখন টিনেজারদের কাছে ফেসবুক আর পছন্দের যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে থাকছে না। এই সাইটটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। এমনকি, অন্য বয়সীদের ফেসবুকপ্রেমেও ভাটা পড়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্যাঙ্ক এন. ম্যাগিড অ্যাসোসিয়েটস পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।
জরিপ বলছে, ২০১২ সালে ৯৫ শতাংশ ও ২০১৩ সালে ৯৪ শতাংশ টিনেজারের কাছে ফেসবুক উন্মাদনার মাধ্যম থাকলেও চলতি বছর শেষে দেখা যাচ্ছে এ মাধ্যমটিতে মাতোয়ারা টিনেজারদের সংখ্যা নেমে গেছে ৮৮ শতাংশে। অর্থাৎ মাত্র একবছরেই ৬ শতাংশ ব্যবহারকারী খুইয়ে গেছে ফেসবুকের।
এই জরিপে ফেসবুক জনপ্রিয়তার পতনের চিত্রে অন্য সব বয়সী মানুষকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ফেসবুক জনপ্রিয়তা অন্য সব বয়সীদের ক্ষেত্রেও মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ৯৩ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশে নেমে গেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেতিবাচক প্রভাবের মুখে পড়ায় টিনেজার সহ ব্যবহারকারীদের হারিয়ে ফেলছে ফেসবুক।
অবশ্য বেশ কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে, অনেক টিনেজার তাদের ফেসবুক ব্যবহার বাদ দিয়ে অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছে। এর মধ্যে রয়েছে ইনস্টাগ্রাম, চমকপ্রদ ব্যাপার হলো এটা ফেসবুকেরই মালিকাধীন।
এর আগে, ২০১৩ সালের অক্টোবরে ফেসবুকের প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা ডেভিড এবারসম্যান জানিয়েছিলেন, ফেসবুকে দৈনিক টিনেজার ব্যবহারকারীর সংখ্যা বছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টার (এপ্রিল-জুন) থেকে তৃতীয় কোয়ার্টারে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কমে এসেছে।
তিনি বলেন, টিনেজার মার্কেট ধরে রাখতেই শুধু নয়, ফেসবুকে তরুণদের উপস্থিতি ধরে রাখাও ফেসবুকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা উদ্বেগজনক যে, ফেসবুক টিনেজারদের মধ্যে তার আবেদন হারাচ্ছে।
২০১৩ সালের নভেম্বরে ফেসবুকের প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা (সিওও) শেরিল স্যান্ডবার্গ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ টিনেজারের ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ প্রতিদিনই ফেসবুক ব্যবহার করছে।
অপর গবেষণা সংস্থা ফরেস্টার বলছে, গত জুনে প্রাপ্ত এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৪ হাজার ৫০০ হাজারেরও বেশি টিনেজারেরও কাছে ফেসবুক তখনও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
ফ্যাঙ্ক এন. ম্যাগিড’র জরিপ বলছে, টিনেজার ও সব মানুষের মধ্যে ফেসবুকের আগের জনপ্রিয়তা বতর্মানে না থাকার কারণও রয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ১৬ ভাগ মানুষ মনে করেন ফেসবুক ফ্যাশন দুরস্ত; ১৮ ভাগের মত, এটা মজার; ১৮ ভাগের মতামত এটা তথ্যবহুল; ৯ ভাগের মতে এটা নিরাপদ এবং ৯ ভাগের মতে এটা বিশ্বস্ত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে ফেসবুক প্রায়ই বিড়ম্বনায় পড়ছে। এর আগেও ফেসবুক নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য সংযোজন-বিয়োজন ও এর ব্যক্তিগত নীতি সংশোধনের জন্য সমালোচিত হয়েছে। এর ফলে উদ্বেগ দেখা দেয় এই মর্মে যে, কর্তৃপক্ষ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিবেচনা করছে না।
এসব উদ্বেগের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আরও মনোযোগী হওয়ার দাবি করলেও বিভিন্ন জরিপের তথ্য, এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষ এখন আরও সতর্ক।
এখন প্রশ্ন হলো, যদি টিনেজার ও বয়স্করা ফেসবুকে ব্যস্ত না থাকেন, তবে তারা অনলাইনে কীসে সময় পার করছেন? জরিপ বলছে, এদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তাৎক্ষণিক বিভিন্ন মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন।
জরিপে দেখা যায়, ফেসবুকে অনাগ্রহী ১৮ ভাগ ব্যবহারকারী এখন স্ন্যাপচ্যাটে সময় কাটাচ্ছেন, ১৭ ভাগ মানুষ ব্যবহার করছেন অ্যাপল’র মেসেজ, ৯ ভাগ ব্যবহার করছেন হোয়াটস অ্যাপ এবং ৯ ভাগ ব্যবহার করছেন গুগল’র হ্যাংআউট।
কিন্তু এসবের মধ্যে কোন অ্যাপ জনপ্রিয়তার দৌড়ে এগিয়ে আছে? জরিপের ভোট বলছে, ৪০ ভাগ ব্যবহারকারী নিয়ে সবার ওপরে ফেসবুক মেসেঞ্জার।
গত সেপ্টেম্বরে ম্যাগিড মোট ১৯৩৪ জন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর ওপর এ জরিপ পরিচালনা করে। যদিও বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ কোটি।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৯ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৪