ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

সাইবার ক্রাইম রোধে উদ্যোগী সরকার

সুকুমার সরকার, সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৫
সাইবার ক্রাইম রোধে উদ্যোগী সরকার ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ক্রমবর্ধমান হারে সাইবার অপরাধে উদ্বিগ্ন সরকার। আগামীতে ই-গভর্মেন্ট কার্যক্রমকে নিবিচ্ছিন্ন ও নিরাপদ করার জন্য তাই আগাম ব্যবস্থা হিসাবে সরকার দেশে এবং বিদেশে আড়াই হাজার সরকারি কর্মকর্তার উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে।

প্রশিক্ষণ শেষে তারা সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ ও অনলাইনভিত্তিক তথ্য ও সেবার নিরাপত্তা বিধানে কাজ করবে।   

এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের(বিসিসি) লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্পেi অধীনে ইতোমধ্যে ৮৫ জন সরকারি কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর এবং নয়াদিল্লির ইএসআই ট্রেনিং ইনস্টিটিউট তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক এলআইসিটি প্রকল্পের অধীনে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা, বিসিসির ডাটা সেন্টারের সম্প্রসারণ, ই-গভর্মেন্ট প্রতিষ্ঠা, সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণসহ বেশ কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়নে ৫৬০ কোটি টাকা ঋণ-সহায়তা দিচ্ছে

সরকার প্রশিক্ষণ ছাড়াও দেশে একটি ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ ফর আর্কিটেকচার (এনইএ) গড়ে তুলতে চাইছেন। এনইএ‘র লক্ষ্য হচ্ছে- সরকারের এক প্রতিষ্ঠানের তথ্য ও ডাটা যাতে সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানও শেয়ার করে কাজে লাগাতে পারে সে ব্যবস্থা করা।

কেননা দেখা গেছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দপ্তর, অধিদপ্তর ও বিভাগ আলাদা আলাদাভাবে সফটওয়্যার ও আইটি সিস্টেম গড়ে তুলেছে। এতে এক প্রতিষ্ঠানের তথ্য ও ডাটা প্রযুক্তি অন্য প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারে না। তদুপরি ঘটে যায় ডুপ্লিকেশন।

এতে করে অযথা শ্রম ও সময়েরও অপচয় ঘটে। অর্থের সাশ্রয়সহ সব মিলিয়ে সরকার তথ্য ও ডাটা ব্যবহারের নিমিত্তে একটি অভিন্ন প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এটা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে  কাজের গতি বাড়ার পাশাপাশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।

সরকারের ই-গভর্নমেন্ট বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামসুন্দর শিকদার বাংলানিউজকে জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকার অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম গ্রামবাংলা পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে। এমনকি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে মানুষ বিভিন্ন তথ্য ও সেবা পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, অনলাইন কার্যক্রমে ঝুঁকিও রয়েছে। সে-কারণে সাইবার অপরাধ ও আক্রমণ এড়াতে অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম নিরবিচ্ছিন্ন ও নিরাপদ রাখতে আড়াই হাজার সরকারি কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।   

লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক তারেক এম. বরকতউল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, আড়াই হাজার সরকারি কর্মকর্তাকে উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে আমরা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর এবং নয়াদিল্লির ইএসআই ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গিয়েছে।

এছাড়া বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এলআইসিটি প্রকল্পের আওতায় দেশে ৩৪ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কাজও শুরু হয়েছে। কেননা বর্তমান বিশ্বে সার্বিকভাবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দক্ষ মানবসম্পদের প্রয়োজন। এসব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ডাক দিয়েছেন। সবকিছু ছাপিয়ে সামনে উঠে এসেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। অর্থাৎ সব কিছুই ডিজিটাল।  

বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষার আলোকে সরকার এলআইসিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও তরুণদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ৭০ মিলিয়ন (৭ কোটি) মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। বাংলাদেশে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি এলআইসিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়।

এ লক্ষ্যে গত বছরের শেষ দিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ‘আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং’কে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ বছরের জানুয়ারি থেকে তারা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশই তরুণ। এমনই চিন্তা থেকে সরকার অন্যান্য খাতের মতো আইটি খাতেও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

এ খাতের বিকাশে মানবসম্পদ তৈরির নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে একটি হচ্ছে লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্প। প্রকল্পটি গ্রহণে বিশ্বব্যাংকের একটি সমীক্ষাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সরকার। উপ-প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ আরও বলেন, এলআইসিটি প্রকল্প দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।