ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

নামেই ‘রাইড শেয়ারিং’ নীতিমালা!

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৭
নামেই ‘রাইড শেয়ারিং’ নীতিমালা! নামেই ‘রাইড শেয়ারিং’ নীতিমালা!

ঢাকা: পাবলিক পরিবহনের ক্ষেত্রে ‘রাইড শেয়ারিং’ শব্দটি বেশ পরিচিত হয়ে উঠছে ঢাকায়। তবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ‘রাইড শেয়ারিং’ শুধু উবারের ক্ষেত্রেই মনে করছে। অথচ বাংলাদেশে উবার এ মুহূর্তে রাইড শেয়ার করছে না। শুধু অ্যাপসভিত্তিক ট্যাক্সি সার্ভিস দিচ্ছে। যা ‘উবার এক্স’ নামে পরিচিত।

দেশ আরও যারা অ্যাপভিত্তিক এ সেবা নামাচ্ছে তারাও রাইড শেয়ার নয়; ট্যাক্সি সার্ভিস দেবে। প্রকৃতপক্ষে রাইড শেয়ারিং করছে অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো।

কিন্তু সেটি আমলে নিচ্ছে না মন্ত্রণালয়। আবার বিআরটিএ অ্যাপসভিত্তিক এ সেবার যে নীতিমালার খসড়া তৈরি করতে যাচ্ছে তার নাম দিয়েছে ‘রাইড শেয়ারিং’ নীতিমালা। এতে স্টেক হোল্ডারদের অংশগ্রহণ নেওয়া হয়নি। এটা হতে যাচ্ছে অনেকটা আমলাতান্ত্রিক নীতিমালা।

**‘রাইড শেয়ারিং’ নীতিমালার নামে অনিয়ন্ত্রিত ফাঁকির সুযোগ!
***আসছে আরও অ্যাপস্‌ নির্ভর ট্যাক্সি-বাইক
***নীতিমালার আগেই অ্যাপ নির্ভর সার্ভিস নিয়ে বিস্তর অভিযোগ

বুধবার (২৩ আগস্ট ) এ নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় যেসব আলোচনা হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়! বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন অতিরিক্ত সচিব বলছেন, ভালো যাচাই-বাছাই করতে পারিনি।
 
বৈঠকের বিষয় নিয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে খোদ মন্ত্রণালয়ের সচিব এনএম ছিদ্দিক উবারকেই বাংলাদেশের প্রথম রাইড শেয়ারিং পরিবহন সেবা বলে উল্লেখ করেছেন।
 
ঢাকায় উবার আসার কয়েকমাস আগে থেকে বিশ্বের প্রথম মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং অ্যাপস যাত্রা শুরু করে। তখন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিআরটিএ তাকে ‘অবৈধ বেআইনী’ আখ্যা দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
 
নীতিমালা প্রণয়নের গুরুভার পালন করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মালেক। ঢাকায় কি ধরনের রাইড শেয়ারিং হচ্ছে তার স্পষ্ট ধারণা তিনি দিতে পারেননি। যদিও নীতিমালা প্রণয়নে তিনিই দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি পর্যায়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।
 
মোটরসাইকেলে এখন বেশ কয়েকটি অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাইড শেয়ারিং করছে। দিনে ঢাকায় কয়েক হাজার মোটরসাইকেল চালক রাইডারকে শেয়ার করে গন্তব্যে নিচ্ছেন। এটি এখনও ঠিকমতো আন্দাজ করতে পারেননি রাইড শেয়ারিং নীতিমালা প্রণয়ণকারীরা। রাইড শেয়ারিং বলতে বারবার মোটরকারকে বিবেচনা করেছে মন্ত্রণালয় ও খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি।
 
উবার রাইড শেয়ারিংও করে। তবে ঢাকায় চালু হওয়া উবারের সেবা রাইড শেয়ারিং নয়; অ্যাপসভিত্তিক অন ডিমান্ড ট্যাক্সি সার্ভিস।
 
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় রাইড শেয়ারিং নীতিমালা নিয়ে যেসব মতামত ও আলোচনা হয়েছে এর মধ্যে ছিলো, সিএনজি অটোরিকশাকে রাইড শেয়ারে না আনা, আন্তঃজেলা ও মহাসড়কে রাইড শেয়ার না করা। এছাড়া কমপক্ষে ২শ গাড়ি অ্যাপস প্রতিষ্ঠানের থাকতে হবে তা কমিয়ে আনা বা বাদ দেওয়ারও কথা ওঠে।
 
রাইড শেয়ারিং সার্ভিসগুলোর ভাড়াও নির্ধারণ করতে পারেনি আন্তঃ মন্ত্রণালয় সভা। খসড়ায় ছিলো ভাড়া ‘ডিরেগুলেটেড’ থাকবে। এ নিয়ে সভায় মতামত আসে বর্তমান বিআরটিএর অনুমোদন দেওয়া ট্যাক্সি সার্ভিসের ভাড়ার বেশি হতে পারবে না রাইড শেয়ারিংয়ের ভাড়া।
 
এক্ষেত্রেও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসকে। মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং ভাড়ার বিষয়টি তাদের নীতিমালার কোনো অংশে নেই।
 
এদিকে উবারসহ অন্য অ্যাপসে এখন যে ভাড়া তা বর্তমান ট্যাক্সি সার্ভিসের চেয়ে কম। এটা আরও কমানোর কোনো পন্থা বা তা থেকে সরকারের রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি আলোচনায় ওঠেনি আন্তঃমন্ত্রণলায়ের ওই সভায়। অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর যে ফি ধরা হয়েছে তা-ই অর্থমন্ত্রণালয়ে মতামত জন্য পাঠানো হচ্ছে।
 
সভা সূত্র জানায়, ওয়েসাইটের মাধ্যমে মোট ১৬৯টি মতামত পেয়েছে মন্ত্রণালয়। সেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সভায়। এছাড়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মতামত দিয়েছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের মতামত তুলে ধরেছে।

সভায় হাইওয়ে পুলিশ আন্তঃজেলা ও মহাসড়কগুলোতে এ সার্ভিসের অনুমোদন দেওয়ার বিরোধিতা করে মতামত দেয়। আর মোটরকার, অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাসে এ রাইড শেয়ারিং করা যাবে, তবে যাবে না সিএনজি অটোরিকশায়। অটোরিকশায় পার্শ্ববর্তী দেশেও রাইড শেয়াংরিং করছে বা অ্যাপসভিত্তিক সেবা রয়েছে।
 
রাইড শেয়ার নীতিমালার ক্ষেত্রে গুরু দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মালেক। বাংলনিউজকে তিনি বলেন, ভালো যাচাই-বাছাই এখনও সম্ভব হয়নি। আগামী সপ্তাহে নীতিমালার একটি কাঠামো সেমিফাইনাল স্টেজে নিয়ে যেতে পারবো। মতামত নেওয়া হয়েছে। কোনো পরিবর্তন এখনও চূড়ান্ত নয়।

সড়ক ও সেতু সচিব এমএএন ছিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘অ্যাপসগুলোর যে চার্জ রয়েছে। চার্জের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত লাগবে। তারপর কেবিনেটে যাবে। কেবিন্টে ডিভিশন একটা লিখিত মতামত দেবে। সেটা আমরা দেখবো। ’

‘আজ মতামত পক্ষে-বিপক্ষে এসেছে। নিজেরা আবার বসবো। তারপর এটা কেবিনেটে পাঠিয়ে দেবো। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৭
এসএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।