ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সে বাঁধবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সে বাঁধবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানুষের মুখোমুখি মেশিন। ছবি: প্রতীকী

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতির বিকাশে ‘খুবই তাৎপর্যপূর্ণ’। মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স হিসেবে পরিচিত মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কম্পিউটারের মাধ্যমে অনুকৃত ও প্রতিস্থাপিত করার এই চেষ্টা ও গবেষণাকে সভ্যতার জন্য হুমকি বলছেন প্রযুক্তি বিজ্ঞানীরা। স্টিফেন হকিংয়ের মতো বিজ্ঞানী আর এলন মাস্কের মতো ধনকুবের উদ্যোক্তা এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিকে আঙুল তুলে সরাসরি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধেরই শঙ্কা প্রকাশ করছেন। 

আসলে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটা কী, আর কীভাবেই বা এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ধ্বংসের মুখে ফেলবে মানবজাতিকে? এ নিয়ে একটি খোলামেলা আলোচনায় কথা বলছিলেন প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই) ও ভবিষ্যবাদের গুরু রে কার্জওয়েল। তার মতে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সকে নিয়ে যেভাবে কাজ চলছে, আর মাত্র ২০ বছরের মধ্যেই মানুষ ও যন্ত্রের আচরণ এক হয়ে যাবে।

নানা বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে এর আগে প্রসিদ্ধি লাভ করা কার্জওয়েল প্রথমে কিছু ছোট ছোট তথ্য দেন। যেমন— এই মুহূর্তে বিশ্বে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার্ত মানুষের হার অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় কম; এখন বিশ্বে প্রায় তিনশ’ কোটি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে, কিছু বছরের মধ্যে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ছয়শ’ কোটিতে।

রক্তচাপেই সেলফোনের নির্দেশনা।  ছবি: প্রতীকী 
৭২ বছর আগে শেষ হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে মনুষ্য-সভ্যতা এখন সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ সময় কাটাছে। এই শান্তিপূর্ণ সময়ে কেন তাহলে মনুষ্যজাতির অস্তিত্ব নিয়ে ভয়? 

কার্জওয়েল মনে করেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সকে ডেভেলপ করতে থাকার ফল দাঁড়াতে পারে মনুষ্য-সভ্যতার এই শান্তি-প্রগতিতে ব্যাঘাত এবং আমাদের পরবর্তী বিলুপ্তির পর্যায়ে ঠেলে দেওয়া।  

ব্যাপারটা খানিকটা ভিন্ন মনে হলেও কার্জওয়েল প্রাসঙ্গিক করতে চান এভাবে যে, শত বছর আগের প্রযুক্তিতে নির্মিত পারমাণবিক বোমায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যদি এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালানো যায়, তাহলে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ গড়ালে সেটা কি আরও ভয়াবহ হবে না? কথা বলছেন রে কার্জওয়েলপ্রযুক্তিতে নির্ভরশীল হয়ে মানুষ ধীরে ধীরে কম জৈবিক হয়ে যাবে বলে মনে করেন কার্জওয়েল। তার মতে, মানুষ প্রতিনিয়তই বিবর্তিত হচ্ছে। আর প্রাযুক্তিক এ যুগের পরবর্তী বিবর্তন হচ্ছে, মানুষের ভেতরে প্রযুক্তির অভ্যন্তরীণ বাস্তবায়ন। এটা কিন্তু মানুষ-রোবটের মিশ্রণে কোনো যান্ত্রিক মূর্তি হিসেবে দেখা যাবে না। এটা বাস্তবায়ন হবে স্মার্টফোনের আদলে মগজে প্রযুক্তি ঢুকে যাওয়ার মধ্য দিয়ে।  

প্রত্যেকটা কাজ, প্রত্যেকটা চিন্তা মানুষ আর তার জৈবিক সত্তায় করবে না। আশ্রয় নেবে যন্ত্রের। যেমন ঘরে বসে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের আবহাওয়ার তথ্য জানবে। এতে তার আঙুলও স্পর্শ করতে হবে না। কেবল বলবে, ‘হেই গুগল, বলো তো মরিশাসের আবহাওয়া এখন কেমন?' ব্যস পরের পুরো কাজটা স্মার্টফোন বা ডিজিটাল ডিভাইসটাই করে দেবে।

কার্জওয়েলের মতে, মনুষ্যজাতির ভবিষ্যৎ অবিশ্বাস্য পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। বেশ ক’বছর আগেও স্মার্টফোনকে এতোটা দ্রুতগতির বা আধুনিক ভাবা হয়নি। এখনকার স্মার্টফোন স্বর নির্দেশনা (ভয়েস কমান্ড) শুনছে এবং তার জবাব দিচ্ছে। যেমন কোনো অ্যালবাম খুঁজে বের করতে বললে বের করে দিচ্ছে। প্লে স্টোর বা গুগল থেকে কিছু বের করে দিতে বললে সেটা বের করে দিচ্ছে। আমাদের স্বর চিনতে পারছে। এমনকি পাশাপাশি গান চলতে থাকলেও স্মার্টফোন স্বর শুনে তার জবাব দিয়ে দিচ্ছে। প্রযুক্তির কাছে জীবন বাঁধা।  ছবি: প্রতীকী কার্জওয়েল বিশ্বাস করেন, আগামী ২০২৯ সালের মধ্যেই দেখা যাবে মেডিকেল রোবট আমাদের মগজে ঢুকে বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণী অংশ বা নিওকর্টেক্সের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ শুরু করবে। এবার আর মুখেও কিছু বলতে হবে না। খোদ মেডিকেল রোবটই বের করে আনবে মস্তিষ্কের চাওয়া-পাওয়া।

গুগলের এই ভবিষ্যবাদীর মতে, জীবনের এমন কোনো অংশ নেই যেটা সরাসরি প্রযুক্তি দ্বারা প্রভাবিত হবে না। ব্যক্তিগতভাবে আমরা হয়তো সঠিক সময়ে ব্যাপারটি খেয়াল করতে পারি না। কিন্তু এটা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে যে, যন্ত্রের ওপর আমাদের নির্ভরতা সূচকীয় হারে বেড়ে চলেছে।

২০ বছরের মধ্যে মানুষ আর যন্ত্রের এভাবে একাকার হয়ে যাওয়ার এই ভবিষ্যদ্বাণী উদ্বেগেরই বটে। উদ্বেগটা এই কারণে আরও বেশি যে, কার্জওয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী খুব কমই ভুল হয়। প্রযুক্তি বিষয়ে তিনি শতাধিক ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছেন, যার ৯০ শতাংশই সঠিক হয়ে গেছে। জীবনের সঙ্গে সেলফোন।  ছবি: প্রতীকী নব্বই দশকের শুরুতে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, কম্পিউটারের কাছে দাবা খেলায় মানুষ পরাজিত হবে ১৯৯৮ সালের মধ্যেই। এক বছর আগেই ১৯৯৭ সালে যন্ত্রচালিত কম্পিউটার ‘ডিপ ব্লু’র কাছে হেরে যান তত্কালীন বিশ্বসেরা দাবাড়ু গ্যারি কাসপারভ।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
এইচএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।