প্রাইভেটকারে ট্যাক্সি সার্ভিস উবার আর মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং প্রথম শুরু করে ‘শেয়ার এ মোটরসাইকেল’ (স্যাম)। তৃতীয় ধাপে আসা ‘পাঠাও’ যেমন মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ে জনপ্রিয়, তেমনি একই অ্যাপসে প্রাইভেটকার ট্যাক্সি সুবিধাও চালু করেছে।
উবারে ৩ ধরনেরই সেবা মিললেও পাঠাওয়ে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার ট্যাক্সি আর স্যামে শুধুমাত্র মোটরসাইকেল মিলছে। তবে মোটরসাইকেলের বেশি সিসি ও কম সিসি দু’টি ধরন রয়েছে স্যাম অ্যাপসে। একজন বাইকার, ড্রাইভার-পার্টনার বা রাইডার মোবাইলে সবগুলো অ্যাপসেই অ্যাকাউন্ট খুলে রাখেন।
উবার অ্যাপসের মোটরসাইকেল সেবা ‘উবারমটো’ চালু হয়েছে গতমাসে। আরও রয়েছে ‘উবার-এক্স’ ও ‘উবার প্রিমিয়ার’। নতুন মডেলের গাড়িগুলো উবার প্রিমিয়ারে পাওয়া যায়, বাকি প্রাইভেটকারগুলো উবার এক্সে। ঢাকায় অন্য যেকোনো মোটরসাইকেল অ্যাপসের চেয়ে উবারমটোর ভাড়াও বেশি।
রাইড শেয়ারিং পলিসি অনুসারে যে অ্যাপস্ পরে শুরু হয় তাকে ভাড়া বাড়িয়ে প্রথমে বাইকার বা ড্রাইভার পার্টনার কাড়তে হয়। আর বাইকার বা ড্রাইভার পার্টনার না পেলে রাইডার বা যাত্রীও মেলে না।
এ কারণে ঢাকায় সবার আগে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং শুরু করলেও জমাতে পারেনি স্যাম। তখন শুরুতে তাদের ভাড়ার হার কম ছিলো। এরপরে পাঠাও এসে বাড়তি ভাড়ায় বেশ বাইকার পেয়ে যায়। এর ধারাবাহিকতায় পরে আসে ‘মুভ’, ‘বাহন’ ও সবশেষ ‘ইজিয়ার’।
নানা ফিচারের কারণে স্যাম অ্যাপস্কে অনেকেই ‘স্মার্ট ও অ্যাডভান্স’ মনে করেন। স্যাম প্রতিদিনই তাদের বাইকার ও রাইডার বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে একেবারে সিম্পল অ্যাপস্ হিসেবে পরিচিত ‘পাঠাও’।
স্যামের বিশেষ ফিচার ‘ই-ওয়ালেট’-এ নগদ টাকা দেওয়ার ঝামেলা নেই। ক্যাশে টাকা দেওয়া যায় স্যাম অ্যাপসে। এক্ষেত্রে বাইকার ও রাইডারকে যাত্রা শুরুর আগে কোড বসাতে হয়। স্যামের জিপিএস কার্যকরী ও উবারের জিপিএস রেজাল্ট ভালো হলেও পিছিয়ে পাঠাও। রাইডার যে স্থানে রয়েছেন, পাঠাও অ্যাপসের জিপিএস সে জায়গা ধরতে পারে না। গন্তব্য লিখলে ঠিকমতো ওই গন্তব্যস্থল দেখায় না। এজন্য অনেক সময় ম্যানুয়ালি ম্যাপ দেখে লোকেশন বসাতে হয়। ম্যাপ চেনা না থাকলে অ্যাপস্টি ব্যবহারে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ভাড়ার হিসেবের ক্ষেত্রে আপফ্রন্ট হিসেব করে পাঠাও। এতে বাইকার অনেক জায়গা ঘুরেও গেলে আর বাড়তি ভাড়া প্রদর্শন করে না। তবে অন্য সব রাইড শেয়ারিং অ্যাপসেই চাকা ঘুরলে টাকা, অর্থাৎ যতো দূরে যাবেন, তার ভাড়াই আসে।
পাঠাও ও উবারের রাইড বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জারে শেয়ার করা গেলেও স্যাম অ্যাপসে যায় না। স্যাম অ্যাপসের অনন্য ফিচার ‘ফিউচার বুকিং’ পদ্ধতিতে আগেই গন্তব্য ও সময় লিখে রিকোয়েস্ট দিয়ে রাখা যায়। একজন বাইকার তা অ্যাকসেপ্ট করে নির্ধারিত সময়ে পিক করতে আসেন।
মোটরসাইকেলে দুই ক্যাটাগরিতে একই অ্যাপসে দু’টি ফিচার করেছে স্যাম। ১৩৫ সিসির নিচের মোটরসাইকেলগুলো ‘স্যাম এক্স’ ও তার ওপরেরগুলো ‘স্যাম প্রো’। স্যামের নতুন ফিচার ‘পিংক স্যাম’ শুধুমাত্র নারী বাইকার-রাইডারদের যাতায়াতে ব্যবহৃত হবে।
প্রমোকোড স্যাম অ্যাপসের মধ্যে দেওয়া থাকে, ক্লিক করলেই বসে যায়। যখন ইচ্ছা ব্যবহারও করা যায়। কিন্তু পাঠাওতে লিখে প্রমোকোড বসাতে হয়। একবার বসালে তা পরের রাইডেই ব্যবহৃত হয়। ইচ্ছামতো ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে বাইকার বেশি থাকায় দ্রুত বাইক পেতে জনপ্রিয় পাঠাও।
পাঠাও রাইড হিস্ট্রিতে সবকিছু পৃথকভাবে প্রদর্শন করে না। স্যাম অ্যাপস্ কিলোমিটারসহ ভাড়ার পুরোপুরি তালিকা প্রদর্শন করে।
উবারমটোতে বেইজ ফেয়ার ৩০ টাকা, ট্রিপের সময় প্রতি মিনিট ১ টাকা। সেখানে পাঠাও ও স্যাম-এ ৫০ পয়সা। পাঠাওতে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫০ টাকা আর স্যামে ৬০ টাকা। ট্রিপের দূরত্ব কিলোমিটারপ্রতি সবগুলোতেই ১২ টাকা।
উবার প্রিমিয়ারে বেইজ ফেয়ার ৮০ টাকা, প্রতি কিলোমিটার ২২ টাকা। উবার এক্সে বেইজ ফেয়ার ৪০ টাকা, প্রতি কিলোমিটার ১৮ টাকা। উবার প্রিমিয়ারের বেইজ ফেয়ার ৮০ টাকা, প্রতি কিলোমিটার ২২ টাকা, প্রতি মিনিট চার্জ ৩ টাকা।
‘পাঠাও কারস’-এরর বেইস ফেয়ার উবারের চেয়ে ১০ টাকা বেশি ৫০ টাকা। প্রতি কিলোমিটার ২০ টাকা, যেখানে উবার নেয় ১৮ টাকা। প্রতি মিনিট চার্জ পাঠাও নেয় আড়াই টাকা। উবারে এক্ষেত্রে ৫০ পয়সা বেশি ৩ টাকা করে নেওয়া হয়।
স্যাম অ্যাপসে ঢাকার মধ্যে নির্দিষ্ট সীমানা ঠিক করা নেই। কিন্তু পাঠাও ও উবারে সার্ভিস ঢাকার নির্দিষ্ট আয়তনে সীমাবদ্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
এসএ/এএসআর