ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

গণহত্যার একমাত্র জাদুঘর, বলছে একাত্তরের কথা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
গণহত্যার একমাত্র জাদুঘর, বলছে একাত্তরের কথা ল্যাপটপ ফেয়ারে ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ এর স্টলে আগ্রহী এক দর্শনার্থী; ছবি- সুমন শেখ

ঢাকা:একাত্তরে মাত্র নয় মাসে সারা বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালানো হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কোথাও তা হয়নি। এই গণহত্যার তথ্য-চিত্র তুলে আনছে ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’।

খুলনায় এই জাদুঘরটির স্থান হলেও দেশব্যাপী সংঘটিত গণহত্যার ইতিহাস সংগ্রহ ও এ প্রজন্মের মানুষের কাছে তা প্রদর্শন করছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ল্যাপটপ মেলায় পাক বাহিনীর ঘৃণিত হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস জানাতে এসেছে ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের কর্মীরা।

আর সেই মেলায় এসে দর্শনার্থীরা জানতে পারছেন একাত্তরের নারকীয় সেইসব ঘটনা।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্য গণহত্যা ও নির্যাতন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কোথাও এত মানুষকে একসাথে হত্যা করা হয়নি, যতটা বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মাত্র নয় মাসে করা হয়েছে। মাত্র নয় মাসে পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা হত্যা করেছে ৩০ লাখ বাঙালি। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সমর্থ হয়নি। উপরন্তু চলছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা, শহীদ ও নির্যাতিতের সংখ্যা নিয়ে চলছে দেশি-বিদেশি অপপ্রচার। যুদ্ধাপরাধীরা পুরস্কৃত হয়েছে। তাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে এদেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনার।

এ অবস্থা অনুধাবণ করে অসাম্প্রদায়িক ও গণমুখী ইতিহাস চর্চার সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী’র সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক’ ড. মুনতাসীর মামুনের প্রস্তাবে সম্মিলনীর উদ্যোগে দক্ষিণের জেলাশহর খুলনায় গড়ে উঠেছে জাদুঘরটি। ২০১৪ সালের ১৭ মে খুলনায় এই জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে জাদুঘর ট্রাস্টকে একখণ্ড জমি ও একটি বাড়ি উপহার দেন। সেটি সংস্কার করে করে নিজস্ব ভবনে গণহত্যা জাদুঘরের নবযাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে ২৬ মার্চ।

খুলনায় স্থাপিত এই জাদুঘরটি বাংলাদেশের এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর বলে জানিয়েছেন এর প্রধান নির্বাহী কাজল আব্দুল্লাহ। ল্যাপটপ ফেয়ারে ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ এর স্টল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক মামুন। নিয়মিত বিভিন্ন পেশার মানুষজনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা এখানে নিয়মিত আসছেন।

ল্যাপটপ মেলায় জাদুঘরের পরিকল্পনার কথা জানান এর কর্মী তাজল্লী শিফা বর্ণ।

গণহত্যার বিস্মৃত স্থানকে তুলে আনার জন্য জেলাভিত্তিক গণহত্যা-নির্যাতন, বধ্যভূমি, ও গণকবর চিহ্নিতকরণ। গণহত্যা-নির্যাতন নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক অনলাইন ও অফলাইন আর্কাইভ গড়ে তোলা। শিশু-কিশোরদের নিয়ে নিয়মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রদর্শনী, প্রতিযোগিতার আয়োজন। গণহত্যাস্থলকেন্দ্রিক প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যভিত্তিক গ্রন্থের ভিত্তিতে গণহত্যা-নির্যাতন নির্ঘন্ট, শহীদ স্মৃতি গ্রন্থ প্রকাশ। গণহত্যা-নির্যাতন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং শহিদ স্মৃতি বক্তৃতার আয়োজন করা। সারা বাংলাদেশে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক তৈরি করা।   তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চর্চা ও আলোচনা বাঁচিয়ে রাখার জন্য ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে অ্যাডভোকেসি করা তাদের কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম।

এ কাজগুলো করার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় গণহত্যা জাদুঘর গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঢাকা এবং খুলনার ৪টি লিয়াজোঁ অফিসের মাধ্যমে এই প্রকল্প দেশব্যাপী গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিবিড় গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পের শুরু থেকেই অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনবছরের পথচলায় গণহত্যা জাদুঘরের ঝুলিতে এসেছে বেশ কিছু অর্জন।

ল্যাপটপ মেলায় জাদুঘরের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার দুর্লভ স্মারক, ছবি ও শহিদদের স্মৃতিচিহ্ন প্রদর্শিত হচ্ছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের বই ও স্যুভেনির বিক্রি হচ্ছে।

জাদুঘরের উদ্যোগ বিকশিত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শহীদদের নিদর্শন, স্মারক, আলোকচিত্র, বইপত্র, দলিল দান করতে আহ্বান জানিয়েছেন কাজল আব্দুল্লাহ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
এমআইএইচ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।