ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

টেলিকমে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৮
টেলিকমে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে নবনিযুক্ত মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার/ ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: আইসিটি ও টেলিকম সেক্টরের যতটা বাজে অবস্থার কথা সম্পর্কে জানতাম, অবস্থা তার চেয়েও অনেক খারাপ। এই সেক্টরে আরো হাজার সমস্যা আছে। টেলিকমে সমস্যাগুলো ক্যান্সারের মতো বাসা বেঁধে আছে। আমরা যা জানিও না। সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। এটা আমার একরাতের অভিজ্ঞতা।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেছে নবনিযুক্ত মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।  

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) বুধবার (০৩ জানুয়ারি) কারওয়ানবাজারে নিজস্ব কার্যালয়ে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে।

টেলিকম ভেতরে ভেতরে ঘুণে ধরা অবস্থায় ছিলো বলেই প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বলেন নতুন দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রী। “এ কারণেই হয়তো আগের প্রতিমন্ত্রীকেও পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না। এটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জ। ট্রাডিশনাল মন্ত্রীর যে ধারণা, সেটা আমি মানি না। ”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার ছাত্র মোস্তাফা জব্বার টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার সৌভাগ্য আমি বেসিস-এর সভাপতি হিসেবে সরকারি পতাকা ওড়ানো গাড়িতে চড়ে এখানে এসেছি। আমি প্রথমে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু সবাই আদম ব্যাপারি বলায় সেটা ছেড়ে দেই।
মোস্তাফা জব্বারকে বেসিসের সংবর্ধনা/ ছবি: জিএম মুজিবুরতিনি বলেন, আমি কম্পিউটারের কেউ না। আমি বাংলাভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র। ১৯৮৬ সালে আমি প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পউটারের একটি কোর্সে ভর্তি হই। প্রথম দিনের এক ঘণ্টার ক্লাস শেষে আমি তা ছেড়ে দেই। ১৯৮৭ সালের ২৮ এপ্রিল আমি একটি কম্পিউউটার কিনি। এটা বাসায় নিয়ে এসে চালাতে শুরু করি। কিছুদিন পর বুঝতে পারি আগের বছর ক্লাসে স্যার কম্পিউটার সম্পর্কে যে জটিল জ্ঞান দিয়েছিলেন, তা আসলে সত্য নয়!

মোস্তাফা জব্বার বলেন, তথ্য-প্রযুক্তিতে পড়া আন্ডার গ্রাজুয়েট যে ছেলেটি এক বুক স্বপ্ন নিয়ে পড়তে এসেছে, তার স্বপ্নপূরণে সহায়তা করাই মন্ত্রী হিসেবে আমার কাজ। এই সেক্টরে যত জটিলতা আমি বাইরে থেকে দেখেছি, এই সেক্টরের মন্ত্রী হিসেবে তা সমাধান করাই আমার কাজ।

মন্ত্রিত্ব নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমি ঠিক করেছি, যে সমস্যা সমাধানে ৫ বছর সময় লাগবে তা থাকবে আমার দ্বিতীয় অপশন। প্রথমে আমি ১০০ দিনের কর্মসূচি নিতে চাই। এজন্য তথ্য-প্রযুক্তি সেক্টরের সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ প্রয়োজন।

ইন্টারনেটের মূল্য নিয়েও কথা বলেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, অনেকেই ইন্টারনেটের গতি নিয়ে কথা বলেন। ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো এবং দাম কমানো অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে অসম্ভব নয়। জট খুলতে পারলেই হবে। আমি জানি শিক্ষার্থীদের কাছে ইন্টারনেট সস্তায় পৌঁছে দিতে হবে। বছরে বিশাল বাজেটের ১০০/২০০ কোটি টাকা ইন্টারনেট বাবদ শিক্ষার্থীদের পেছনে খরচ করা যায়। এটা কঠিন কিছু নয়।

বাংলা কি-বোর্ডের উদ্যোক্তা মোস্তাফা জব্বার আরো বলেন, আমি ইংরেজি ভাষার বিরুদ্ধে নই। তবে যে দেশের ৯৬ ভাগ মানুষ ইংরেজি ভাষা বোঝে না। তাদের জন্য ইংরেজি কনটেন্ট তৈরি করে কী লাভ! তথ্য-প্রযুক্তির সুফল তখনই আসবে যখন বাংলায় কনটেন্ট তৈরি করে আমরা ওই ৯৬ ভাগ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবো।

“আমি স্পষ্ট বলতে চাই, গ্রামীণফোন এদেশে ব্যবসা করতে হলে তাদের বাংলায় চিঠি লিখতে হবে। মাইক্রোসফটকে বাংলা জানা লোক নিয়োগ দিতে হবে। যেমন চীন, জাপান বা কেরিয়াসহ সারা বিশ্বেই হয়। এটা ওই কোম্পানিগুলোর এদেশের মানুষের প্রতি সম্মান। ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। বাংলাভাষায় কনটেন্ট লাগবে। এজন্য পলিসিও লাগবে। আমাদের একটি প্রজেক্ট শুরু হবে। অন্য ভাষায় কেউ কথা বললে তা বাংলায় শোনা যাবে”, যোগ করেন মোস্তাফা জব্বার।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
আরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।